বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সহকারী শিক্ষিকার দাপটে অসহায় অন্য শিক্ষিকা

- আপডেট সময় : ০১:২৪:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আখিঁ আক্তারের হেনস্তার শিকার হয়েছেন সুরূপা রানী সাহা নামে অপর এক শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত তার এমন কর্মকান্ডে শাস্তিমূলক বিচারের দাবি করে, মঙ্গলবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও গতকাল বুধবার জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।
জানা যায়, বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার, বালিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানের আত্মীয়। বাদল চেয়ারম্যানের দাপটে তিনি স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষিকাদের সঙ্গে হাতাহাতি, চুল ছিড়াছিড়ি, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ট বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষিকারা। দীর্ঘদিন যাবত তিনি এমন কর্মকান্ড করে আসলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলা বা অভিযোগ দেয়ার সাহস করেনি কেউ। বিদ্যালয় থেকে সেচ্ছায় বদলী হয়েছেন একাধিক নারী শিক্ষিকা।
এঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষকা আখিঁ আক্তারের বিচারের দাবি করেছেন অভিভাবক সহ নানান শ্রেণির পেশার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তৃতীয় বারের মতো আখিঁ আক্তার অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও সুরূপা রানী সাহা উপর হাত তুলতে উদ্ধত হন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা সুরূপা দত্ত জানান, স্কুলে সকল সহকারী শিক্ষিকা ও প্রধান শিক্ষিকার সামনে অফিস কক্ষে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং এক পর্যায়ে আমার ওপর হাত তোলার চেষ্টা করে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষিকা বলেন, আঁখি আক্তার ও কামরুন নাহারের জন্য এ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষিকা থাকতে চাননা। উনাদের কারণে অনেকেই বদলি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছেন। আমরা অনেক কিছু জানি কিন্তু বলতে পারি না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোবাইয়ার বাবা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বেশ কয়েক জন জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আঁখি আক্তার ম্যাডামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছি। শিক্ষিকা আখিঁ আক্তার ও কামরুল নাহার স্থানীয় বাদল চেয়ারম্যানের খুব কাছের মানুষ হওয়ায় তারা স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকাদের উপর হুটহাট উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আখিঁ ম্যাডাম স্কুলে সময় মতো আসে না আর ক্লাসে বসে সারাক্ষণ মোবাইল চাপেন। সেদিন আঁখি ম্যাডাম খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি করছেন সুরূপা ম্যাডামকে। শুধু আঁখি ম্যাডামের জন্য আমাদের অনেক সহপাঠীরা এ স্কুল থেকে চলে গেছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সাজিদা ইয়াসমিন জানান, বাদল চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে এই আখিঁ আক্তার আমাকে মারধর করেছিল। মামলা করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে, ২০২৩ সালে স্কুল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি।
অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক আখিঁ আক্তার বলেন, আপনারা শুধু আমার চিল্লাচিল্লির কথা শুনেছেন। আমি আর কি বলবো আমার বলার কিছু নেই।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দীপা রানী দত্ত বলেন, সেদিন আঁখি আক্তার একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে ছিলেন। পরে আমি ধমক দিলে তিনি কিছুটা শান্ত হন। তবে আমার সামনে তার এ রকম করা ঠিক হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফার হাকিম জানান, স্কুল পরিদর্শন করে, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উবাইদুল্লাহ জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি, তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, শিক্ষিকাদের এ ধরনের দ্বন্ধ অপ্রত্যাশিত। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এর প্রভাব পড়বে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে