পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯
সাড়ে ৪ কোটি কলের অর্ধেকই অযাচিত

- আপডেট সময় : ১২:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
৯৯৯-এ বিরক্তিকর কল দিলেই তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিরক্তিকর কলারের ছয় মাসের জেল বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিচার করা হবে
জনগণের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর নিরবচ্ছিন্ন সেবার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা অপ্রয়োজনীয় কল। প্রতিষ্ঠার ৯ বছরে সেবা চাওয়া কলের প্রায় ৫৭ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম, বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক জরুরি সেবাপ্রত্যাশী। পুলিশ সদর দফতরের হিসেব মতে, ৯৯৯, ৫৯ শতাংশ অপ্রয়োজনীয়, অযাচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গুরুত্বপূর্ণ ৯৯৯ সেবাটিতে অনেকে মজা করেও ফোন করছেন। আবার অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়েও বিভ্রান্তি করেছেন। জাতীয় এই সেবায় যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পাওয়া রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে, ৯৯৯-এ অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছে এমন কলের পরিমাণ মোট কলের অর্ধেকের বেশি। গত পাঁচ বছর দুই মাসে এমন অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে দুই কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি, যা মোট কলের ৫৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এসব কলের মধ্যে ‘বিরক্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি কলকে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, এবার বিরক্তিকর কল এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবার যুক্ত হচ্ছে ‘অটোকলার’। অপ্রয়োজনে ও মজা করার জন্য যেসব কল আসে, সেগুলোকে এই ধরনের কল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অটোকলার যুক্ত হলে গ্রাহক ৯৯৯-এ ফোন করলেই তার লোকেশন ও পরিচিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে আসবে কর্তৃপক্ষের কাছে। ৯৯৯ শুধু গ্রাহকের সমস্যা শুনবে এবং দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে। ৯৯৯-এ অটোকলার যুক্ত হওয়ায় বিরক্তিকর কল কমে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। ৯৯৯-এর এক কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে কেউ ৯৯৯-এ বিরক্তিকর কল দিলেই তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিরক্তিকর কলারের ছয় মাসের জেল বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিচার করা হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, সত্যিকারের বিপদগ্রস্তদের দ্রুত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অটোকলার চালু করা হচ্ছে। এতে অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা তথ্য বা বিরক্তিকর কল কমে যাবে। ৯৯৯ চালুর পর থেকে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন তা অনেক কমে আসছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯৯৯-এর কর্মী বাহিনী দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে নির্বিঘ্নে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সব মহানগর এলাকায় মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) ও থানা ডেসপাস সিস্টেম (টিডিএস) চালু করার ফলে সেবাটি আরও সহজ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালুর পর থেকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জাতীয় এই সেবাটি। এই সেবার মতো এতো তাড়াতাড়ি আর কোনও সেবা পেরেছে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে সারাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে ৯৯৯ সেবাটি। গত পাঁচ বছর দুই মাস বয়সে ৯৯৯-এ সরাসরি সমাধান যোগ্য কলের মধ্যে পুলিশ সার্ভিস দেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫টি, ফায়ার সার্ভিস এক লাখ ২৭ হাজার ১৭১টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি।
৯৯৯ এর কল তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেবা চেয়ে কল এসেছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬১টি। এরমধ্যে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। এসব কলের বিপরীতে ৭৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ পুলিশি সেবা, ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা এবং ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে- এক কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২টির কলারকে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ। পাশাপাশি ৯৯৯-এ অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছে। অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যা তথ্যও দিয়েছে এমন কলের সংখ্যা মোট কলের অর্ধেক (যা সঠিক তথ্যের দ্বিগুণ) ছিল। গত পাঁচ বছরে ৯৯৯-এ ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরমধ্যে বিরক্তিকর কল ছিল ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি।
এবিষয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করার কলের জন্য দন্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ ছাড়া কল দিলে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদ- হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিরক্তিকর কলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বিরক্তিকর কল কমে গেলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্যদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। অনেকে ছিনতাই, দুর্ঘটনা, আগুনসহ বিভিন্ন বিপদে পড়ে ৯৯৯ এ কল দেন। আবার অনেক অপরাধী অপরাধ করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন না বা ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে নির্বাকও হয়ে যান।
৯৯৯-এর সক্ষমতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, ৯৯৯ সেবা বর্তমানে একসঙ্গে ৮০টি কল রিসিভ করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কল আসছে। এর মধ্যে সার্ভিসযোগ্য কল আসছে ৪১ শতাংশ। ৯৯৯ এ একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৪৩০ জন কর্মী জনগণের সেবায় কাজ করছেন। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে ৯৯৯-কে অটোমেশন করা হচ্ছে। এটি চালু হলে সময় কমে যাবে, দ্রুত সার্ভিস দেওয়া যাবে। রেন্সপন্স টাইম যত কম লাগবে, ততই দ্রুত জনগণকে সেবা দেওয়া যাবে। ট্রিপল নাইনের মূল লক্ষ্য জনগণকে অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া।
এদিকে ৯৯৯-এ যুক্ত হওয়া নতুন সেবা ইংরেজি ভাষায় কল। সেটিতেও আসছে অপ্রয়োজনীয় ফোন। এতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বিদেশি সেবাপ্রত্যাশীরা। তবে সেবার মান বাড়াতে জাতীয় জরুরি সেবার অন্যতম বাঁধা অপ্রয়োজনীয় কল। নয় বছরে ৬ কোটি ১৬ লাখের বেশি ফোন কলের মধ্যে ৩ কোটি ৪৭ লাখ কলই অপ্রয়োজনীয়। যা মোট কলের প্রায় ৫৭ শতাংশ। পুলিশি সেবার পাশাপাশি আগুন লাগার ক্ষেত্রেও আসছে ভুল কল। অপ্রয়োজনে ফোন না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতীয় জরুরি সেবার প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, বিরক্তিকর কলারদের ব্লক করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৯৯৯ এ ফোনের পর পুলিশি সেবা না পাওয়া বিষয়গুলোও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, টেলিযোগযোগ আইনে অপ্রয়োজনীয় কলারদের সাজার বিধান রয়েছে। বিরক্তির মাত্রা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।