ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবেক আইনমন্ত্রীর বান্ধবী তৌফিকা করিমের আদালতের রায় জালিয়াতি

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪ ১৫৯ বার পড়া হয়েছে

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম ছবি: সংগৃহীত

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছোঁয়ায় অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম বিচারাঙ্গনের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত সবখানেই তার বিচরণের অভিযোগ। গড়ে তুলেছিলেন বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব সিন্ডিকেট। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো রায় ও জামিন করিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার দুর্ধর্ষ আসামিদের।

অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম একজন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও ব্যাংকার। আইন অঙ্গনে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। তাদের ঘিরে নানা মুখরোচক গল্প হতো আড়ালে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একক আধিপত্য ছিল এই নারীর। ফলে মন্ত্রী ও তার বান্ধবী মিলে আদালত অঙ্গনের নিয়োগ ও পদায়নের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব আদালতেই জনবল নিয়োগ পেয়েছে মন্ত্রীর নির্দেশনায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ ওঠে এসেছে।

 

উল্লেখযোগ্য মামলা ও রায়গুলো

 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপালের বাসায় ৮০ লাখ টাকা পাওয়ায় দুর্নীতির মামলা হয়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ তার জামিন নামঞ্জুর করেন। মামলার বিচার নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেনকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে পার্থ গোপালকে জামিন দিতে বলা হয়। পরে আদালত গোপনে খাসকামরা থেকে পার্থ গোপালকে জামিন দেন। এ ঘটনা ফাঁস হলে হাইকোর্ট কৈফিয়ত চেয়ে রুলও জারি করেন।

নারায়ণগঞ্জের একটি ফুড কোম্পানির কারখানায় ৫১ জন লোক পুড়ে মারা যায়। আরও ৫০ জন পুড়ে গুরুতর জখম হন। শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ চলাকালে ২০২১ সালের ১০ জুলাই অভিযুক্তদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। পরে রিমান্ড শেষে ১৪ জুলাই দুই আসামিকে আদালত জামিন দিতে বাধ্য হন।

১৯ জুলাই আরও তিন আসামিকে জামিন দিতে বাধ্য হন আদালত। জানা যায়, একজন ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় ফুড কোম্পানির মালিকের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন এবং সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা করিমের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার পর জামিনের ব্যবস্থা করা হয়।

ঢাকার বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমণির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নাসির উদ্দিন ও অন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইন ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। মামলায় একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও একজন সাবেক এমপির মধ্যস্থতায় মন্ত্রীর পক্ষে তৌফিকা করিম ২ কোটি টাকা মূল্যের ডলার ও ইউরো বুঝে নেন। এর পরই মন্ত্রীর ইচ্ছার কথা বলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটদের জামিন দিতে বাধ্য করা হয়।

ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দুর্নীতির মামলায় চিশতি পরিবারের জামিনের আবেদন আপিল বিভাগেও নামঞ্জুর হয়। অথচ বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ থেকে জামিনের ব্যবস্থা করানো হয়।

আলোচিত দুটি মামলার রায় পরিবর্তন করেছিলেন আনিসুল ও তৌফিকা জুটি। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রিতে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার রায়। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত হোসেন। অর্থের বিনিময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে মামলার রায়ের নথি লেখা হয়। এ নথি ২১ নভেম্বর পাঠ করেন বিচারপতি মোসাম্মত কামরুন নাহার।

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা না করায় নির্যাতিতের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। এতে সুশীল সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে কামরুন নাহারকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় কামরুন নাহারের গোপনে ধারণ করা অডিও ছাড়া হয়। যেখানে কামরুন নাহারকে মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়।

অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ২০২০ সালে ঢাকার দায়রা জজ আদালত ও চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ জন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক গাড়িচালকের গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সই ছিল না। তারা সবাই সাবেক এ মন্ত্রীর এলাকা আখাউড়া-কসবার বাসিন্দা। জানা গেছে, এসব কাজে তৌফিকাকে ব্যবহার করতেন আনিসুল হক।

এ ছাড়া গুলশানের চাঞ্চল্যকর মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আনিসুল ও তার বান্ধবী তৌফিকার বিরুদ্ধে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান আসামিরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাবেক আইনমন্ত্রীর বান্ধবী তৌফিকা করিমের আদালতের রায় জালিয়াতি

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

 

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছোঁয়ায় অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম বিচারাঙ্গনের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত সবখানেই তার বিচরণের অভিযোগ। গড়ে তুলেছিলেন বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব সিন্ডিকেট। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো রায় ও জামিন করিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার দুর্ধর্ষ আসামিদের।

অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম একজন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও ব্যাংকার। আইন অঙ্গনে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। তাদের ঘিরে নানা মুখরোচক গল্প হতো আড়ালে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একক আধিপত্য ছিল এই নারীর। ফলে মন্ত্রী ও তার বান্ধবী মিলে আদালত অঙ্গনের নিয়োগ ও পদায়নের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব আদালতেই জনবল নিয়োগ পেয়েছে মন্ত্রীর নির্দেশনায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ ওঠে এসেছে।

 

উল্লেখযোগ্য মামলা ও রায়গুলো

 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপালের বাসায় ৮০ লাখ টাকা পাওয়ায় দুর্নীতির মামলা হয়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ তার জামিন নামঞ্জুর করেন। মামলার বিচার নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেনকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে পার্থ গোপালকে জামিন দিতে বলা হয়। পরে আদালত গোপনে খাসকামরা থেকে পার্থ গোপালকে জামিন দেন। এ ঘটনা ফাঁস হলে হাইকোর্ট কৈফিয়ত চেয়ে রুলও জারি করেন।

নারায়ণগঞ্জের একটি ফুড কোম্পানির কারখানায় ৫১ জন লোক পুড়ে মারা যায়। আরও ৫০ জন পুড়ে গুরুতর জখম হন। শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ চলাকালে ২০২১ সালের ১০ জুলাই অভিযুক্তদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। পরে রিমান্ড শেষে ১৪ জুলাই দুই আসামিকে আদালত জামিন দিতে বাধ্য হন।

১৯ জুলাই আরও তিন আসামিকে জামিন দিতে বাধ্য হন আদালত। জানা যায়, একজন ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় ফুড কোম্পানির মালিকের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন এবং সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা করিমের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার পর জামিনের ব্যবস্থা করা হয়।

ঢাকার বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমণির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নাসির উদ্দিন ও অন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইন ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। মামলায় একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও একজন সাবেক এমপির মধ্যস্থতায় মন্ত্রীর পক্ষে তৌফিকা করিম ২ কোটি টাকা মূল্যের ডলার ও ইউরো বুঝে নেন। এর পরই মন্ত্রীর ইচ্ছার কথা বলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটদের জামিন দিতে বাধ্য করা হয়।

ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দুর্নীতির মামলায় চিশতি পরিবারের জামিনের আবেদন আপিল বিভাগেও নামঞ্জুর হয়। অথচ বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ থেকে জামিনের ব্যবস্থা করানো হয়।

আলোচিত দুটি মামলার রায় পরিবর্তন করেছিলেন আনিসুল ও তৌফিকা জুটি। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রিতে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার রায়। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত হোসেন। অর্থের বিনিময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে মামলার রায়ের নথি লেখা হয়। এ নথি ২১ নভেম্বর পাঠ করেন বিচারপতি মোসাম্মত কামরুন নাহার।

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা না করায় নির্যাতিতের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। এতে সুশীল সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে কামরুন নাহারকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় কামরুন নাহারের গোপনে ধারণ করা অডিও ছাড়া হয়। যেখানে কামরুন নাহারকে মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়।

অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ২০২০ সালে ঢাকার দায়রা জজ আদালত ও চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ জন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক গাড়িচালকের গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সই ছিল না। তারা সবাই সাবেক এ মন্ত্রীর এলাকা আখাউড়া-কসবার বাসিন্দা। জানা গেছে, এসব কাজে তৌফিকাকে ব্যবহার করতেন আনিসুল হক।

এ ছাড়া গুলশানের চাঞ্চল্যকর মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আনিসুল ও তার বান্ধবী তৌফিকার বিরুদ্ধে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান আসামিরা।