ঢাকা ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবসে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo মোংলায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন Logo কক্সবাজারে পর্যটক নিরাপত্তায় রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিআইজি আপেল মাহমুদ Logo সিরাজদিখানে গ্রাম পুলিশের মাঝে পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ Logo কালিগঞ্জে মাংসের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত Logo পলাশবাড়ী পৌরসভার বহুমুখী উন্নয়নে কাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান শীর্ষক দিনব্যাপি কর্মশালা Logo টেকনাফে পাহাড়ের পর সাগর পথে পাচার কালে ২৯ জন ভুক্তভোগী সহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক Logo তিতাসে বিএনপির লিপলেট বিতরণ Logo গোমস্তাপুরে জোরপূর্বক ধানীজমি দখলের চেষ্টা Logo কিশোরগঞ্জে রেলের গাছ কেটে বিক্রি করলেন কর্মচারীরা

সীমান্তে থামছে না চোরাচালান

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলেও সীমান্ত পথে অবৈধ ভাবে প্রতিবেশী ভাতৃপ্রতিম দেশ ভারতে ইলিশ মাছ এবং সোনা পাচার বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি ভারত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি দুর্গাপুজা সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে সরকারী বেসরকারী ভাবে দেদারছে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ এবং সোনা। বিনিময়ে চোরাচালান চক্র অবৈধ ভাবে একই কায়দায় বাংলাদেশে নিয়ে আসছে মাদক অস্ত্র এবং বিস্ফোরক। সম্প্রতি ভারতে যেমন ইলিশ ও সোনা পাচার বেড়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও মাদক এবং অস্ত্রের চালান আসছে। গত দুই মাসে প্রায় ১৮টি অস্ত্রের চালান এলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিচক্ষণতার কারণে পাচারকারীরা হারিয়েছে তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক। কারণ এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। অস্ত্র চোরাকারবারিরা সুকৌশলে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। বেশকিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়লেও চোরাকারবারিরা ধরা পড়ছে না। এরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ফেলে আবার সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। যার কারণে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এসব অস্ত্রধারী ব্যবসায়ীরা উভয় দেশের নাগরিক। এরা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসার কারণে ভারতে অবস্থান করে থাকে।
অপরদিকে সীমান্ত এলাকা কুমিল্লার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গা ঘেঁষা ৫টি উপজেলায় প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ভারতের বিস্তীর্ণ এ সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ পাহাড় এবং গহিন অরণ্যে ঘেরা। এসব সীমান্ত এলাকার অন্তত ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে টনের পর টন পাচার হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ এবং সোনা। এ কাজে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক পাচারকারী চক্র। আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এ চক্রটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইলিশ ও সোনা পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে, বুড়িচংয়ের মুরগি শাহীন, হৃদয়, সাহেবাবাদের রুহুল আমিন মেম্বার, ফারুক মিয়া, ফেন্সি রুবেল, শিবের বাজারের জুয়েলসহ একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। তবে এসব সিন্ডিকেট চক্রকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা। চক্রটি বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের গতিবিধি পাহারায় রেখে এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ সুবিধাজনক পয়েন্ট দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত পাচার সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগেও চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার আশপাশের অঞ্চলের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে প্রচুর ইলিশ মাছ আহরণ করতেন স্থানীয় জেলেরা। এক সময়ে চাঁদপুরকে বলা হতো ইলিশের ঘাটি। ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের বিভিন্ন আড়ত থাকতো ইলিশে ভরপুর। মধ্যরাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ইলিশ ঘাটের আড়তে হাঁকডাক করে নিলামে বিক্রি করা হতো ইলিশ। এসব ইলিশ চাঁদপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যেত। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার সাধারণ ক্রেতারা চাঁদপুরে এসে ইলিশ মাছ ক্রয় করতেন। অথচ সম্প্রতি ইলিশের জন্মভূমি চাঁদপুরেই দেখা দিয়েছে ইলিশের সংকট।
ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক পাচারকারী চক্র চাঁদপুরের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ যাওয়ার আগেই রাতের আঁধারে নদীতে ট্রলার থেকে অধিকাংশ ইলিশ ক্রয় করে পিকআপে ভরে সীমান্তের অরক্ষিত সুবিধাজনক এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। ভোরে বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ইলিশ সংকটের কথা বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করছে। এতে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকা কুমিল্লার সদর উত্তর উপজেলার মথুরাপুর, যশপুর, মুড়াপাড়া, দলকিয়া, আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, খাড়েরা, বুড়িচং উপজেলার তেলকুপি বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, সংকুচাইল, আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট ইলিশ ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। এসব চক্রের সদস্য মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত বলে জানা যায়। তারা ভারতে ইলিশ পাচার করে এর বিনিময়ে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র নিয়ে আসছে।
সীমান্তবর্তী বাসিন্দা আশরাফুল ও আলী আজগর জানান, প্রতি রাতে বরফে ডাকা সাদা বস্তা ও ককসিটে মোড়ানো ৭/৮ পিকআপ ভ্যান আসে সীমান্তে। তারা সীমান্ত এলাকা ম্যানেজ করেই সীমানার ওপারে ত্রিপুরায় ইলিশ পাচার করে। এটা প্রায় প্রতি রাতের চিত্র। বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে স্থানে টহল দেয় না। সে স্থান দিয়ে পাচার হচ্ছে।
এছাড়া নিশ্চিন্তপুর ও বড়জ্বালা সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রচুর মাছ পাচার হচ্ছে। এতে দেশের ও ভারতের একাধিক সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। শুনেছি ত্রিপুরায় ৬০০/৭০০ রুপি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় অথচ বাংলাদেশে ইলিশ বড় সাইজের সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। চক্রটি ইলিশের পরিবর্তে বিভিন্ন অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে দেশে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও নাশকতার কারণে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের আশ্রয়ে এরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এপারে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাঠানো। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের চাহিদা মাফিক অর্ডারের মালামাল ভারি, হালকা ও বিস্ফোরক পাঠিয়ে থাকে। এরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের মাদকও ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতে অবস্থান এদের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। এরা অবসর সময়ে গরু, মহিষ, ভেড়া পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশে। তবে এসব ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক ও বিভিন্ন ধরনের পশু পাঠিয়ে থাকে আগাম টাকা নিয়ে। এরা বাংলাদেশী টাকা গ্রহণে কোন ধরনের ওজর আপত্তি তোলে না। তাদের আগ্রহ বেশি সোনা, রুপী ও ডলারের প্রতি। সম্প্রতি র‌্যাব ২টি পিস্তলসহ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক ও রানীবাড়ি থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগজিন জব্দ করে। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্রের চালান পাঠানোর কাজে চটের ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। চোরাকারবারিরা ব্যগ ফেলে পালিয়ে যায় ভারতে। ব্যাগ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও সাত রাউন্ড গুলি জব্দ করে। এভাবে অস্ত্র চোরাকাবারিরা মাল ফেলে ভারতে ঢুকে পড়ে। বিজিবি সদস্যরা একটি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করে। বিজিবি ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত ১৭টি অভিযানে ২৬টি পিস্তল, ১০৬ রাউন্ড গুলি, ২৬টি ম্যাগজিন ও ২৭ কেজি গান পাউডার জব্দ করে। সম্প্রতি গুলি, ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভারতে অবস্থানকারী অস্ত্র চোরাকারবারিরা এখানকার অর্ডার মোতাবেক অস্ত্র পাচার করে থাকে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিন ভারতে অবস্থানকারী চোরাকারবারিরা অস্ত্রের ও বিস্ফোরকের অর্ডার পাচ্ছে। তবে এবার অস্ত্রের চেয়ে বিস্ফোরকের অর্ডার বেশি যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে এমন কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এ চক্রটি ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এছাড়াও সীমান্তমুখী সড়কগুলোতে টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ইলিশ পাচারের একটি সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। ইলিশ যাতে পাচার না হয় তার জন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সীমান্তে থামছে না চোরাচালান

আপডেট সময় :

আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলেও সীমান্ত পথে অবৈধ ভাবে প্রতিবেশী ভাতৃপ্রতিম দেশ ভারতে ইলিশ মাছ এবং সোনা পাচার বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি ভারত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি দুর্গাপুজা সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে সরকারী বেসরকারী ভাবে দেদারছে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ এবং সোনা। বিনিময়ে চোরাচালান চক্র অবৈধ ভাবে একই কায়দায় বাংলাদেশে নিয়ে আসছে মাদক অস্ত্র এবং বিস্ফোরক। সম্প্রতি ভারতে যেমন ইলিশ ও সোনা পাচার বেড়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও মাদক এবং অস্ত্রের চালান আসছে। গত দুই মাসে প্রায় ১৮টি অস্ত্রের চালান এলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিচক্ষণতার কারণে পাচারকারীরা হারিয়েছে তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক। কারণ এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। অস্ত্র চোরাকারবারিরা সুকৌশলে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। বেশকিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়লেও চোরাকারবারিরা ধরা পড়ছে না। এরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ফেলে আবার সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। যার কারণে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এসব অস্ত্রধারী ব্যবসায়ীরা উভয় দেশের নাগরিক। এরা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসার কারণে ভারতে অবস্থান করে থাকে।
অপরদিকে সীমান্ত এলাকা কুমিল্লার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গা ঘেঁষা ৫টি উপজেলায় প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ভারতের বিস্তীর্ণ এ সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ পাহাড় এবং গহিন অরণ্যে ঘেরা। এসব সীমান্ত এলাকার অন্তত ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে টনের পর টন পাচার হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ এবং সোনা। এ কাজে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক পাচারকারী চক্র। আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এ চক্রটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইলিশ ও সোনা পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে, বুড়িচংয়ের মুরগি শাহীন, হৃদয়, সাহেবাবাদের রুহুল আমিন মেম্বার, ফারুক মিয়া, ফেন্সি রুবেল, শিবের বাজারের জুয়েলসহ একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। তবে এসব সিন্ডিকেট চক্রকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা। চক্রটি বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের গতিবিধি পাহারায় রেখে এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ সুবিধাজনক পয়েন্ট দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত পাচার সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগেও চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার আশপাশের অঞ্চলের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে প্রচুর ইলিশ মাছ আহরণ করতেন স্থানীয় জেলেরা। এক সময়ে চাঁদপুরকে বলা হতো ইলিশের ঘাটি। ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের বিভিন্ন আড়ত থাকতো ইলিশে ভরপুর। মধ্যরাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ইলিশ ঘাটের আড়তে হাঁকডাক করে নিলামে বিক্রি করা হতো ইলিশ। এসব ইলিশ চাঁদপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যেত। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার সাধারণ ক্রেতারা চাঁদপুরে এসে ইলিশ মাছ ক্রয় করতেন। অথচ সম্প্রতি ইলিশের জন্মভূমি চাঁদপুরেই দেখা দিয়েছে ইলিশের সংকট।
ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক পাচারকারী চক্র চাঁদপুরের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ যাওয়ার আগেই রাতের আঁধারে নদীতে ট্রলার থেকে অধিকাংশ ইলিশ ক্রয় করে পিকআপে ভরে সীমান্তের অরক্ষিত সুবিধাজনক এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। ভোরে বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ইলিশ সংকটের কথা বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করছে। এতে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকা কুমিল্লার সদর উত্তর উপজেলার মথুরাপুর, যশপুর, মুড়াপাড়া, দলকিয়া, আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, খাড়েরা, বুড়িচং উপজেলার তেলকুপি বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, সংকুচাইল, আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট ইলিশ ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। এসব চক্রের সদস্য মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত বলে জানা যায়। তারা ভারতে ইলিশ পাচার করে এর বিনিময়ে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র নিয়ে আসছে।
সীমান্তবর্তী বাসিন্দা আশরাফুল ও আলী আজগর জানান, প্রতি রাতে বরফে ডাকা সাদা বস্তা ও ককসিটে মোড়ানো ৭/৮ পিকআপ ভ্যান আসে সীমান্তে। তারা সীমান্ত এলাকা ম্যানেজ করেই সীমানার ওপারে ত্রিপুরায় ইলিশ পাচার করে। এটা প্রায় প্রতি রাতের চিত্র। বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে স্থানে টহল দেয় না। সে স্থান দিয়ে পাচার হচ্ছে।
এছাড়া নিশ্চিন্তপুর ও বড়জ্বালা সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রচুর মাছ পাচার হচ্ছে। এতে দেশের ও ভারতের একাধিক সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। শুনেছি ত্রিপুরায় ৬০০/৭০০ রুপি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় অথচ বাংলাদেশে ইলিশ বড় সাইজের সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। চক্রটি ইলিশের পরিবর্তে বিভিন্ন অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে দেশে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও নাশকতার কারণে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের আশ্রয়ে এরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এপারে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাঠানো। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের চাহিদা মাফিক অর্ডারের মালামাল ভারি, হালকা ও বিস্ফোরক পাঠিয়ে থাকে। এরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের মাদকও ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতে অবস্থান এদের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। এরা অবসর সময়ে গরু, মহিষ, ভেড়া পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশে। তবে এসব ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক ও বিভিন্ন ধরনের পশু পাঠিয়ে থাকে আগাম টাকা নিয়ে। এরা বাংলাদেশী টাকা গ্রহণে কোন ধরনের ওজর আপত্তি তোলে না। তাদের আগ্রহ বেশি সোনা, রুপী ও ডলারের প্রতি। সম্প্রতি র‌্যাব ২টি পিস্তলসহ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক ও রানীবাড়ি থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগজিন জব্দ করে। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্রের চালান পাঠানোর কাজে চটের ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। চোরাকারবারিরা ব্যগ ফেলে পালিয়ে যায় ভারতে। ব্যাগ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও সাত রাউন্ড গুলি জব্দ করে। এভাবে অস্ত্র চোরাকাবারিরা মাল ফেলে ভারতে ঢুকে পড়ে। বিজিবি সদস্যরা একটি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করে। বিজিবি ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত ১৭টি অভিযানে ২৬টি পিস্তল, ১০৬ রাউন্ড গুলি, ২৬টি ম্যাগজিন ও ২৭ কেজি গান পাউডার জব্দ করে। সম্প্রতি গুলি, ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভারতে অবস্থানকারী অস্ত্র চোরাকারবারিরা এখানকার অর্ডার মোতাবেক অস্ত্র পাচার করে থাকে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিন ভারতে অবস্থানকারী চোরাকারবারিরা অস্ত্রের ও বিস্ফোরকের অর্ডার পাচ্ছে। তবে এবার অস্ত্রের চেয়ে বিস্ফোরকের অর্ডার বেশি যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে এমন কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এ চক্রটি ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এছাড়াও সীমান্তমুখী সড়কগুলোতে টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ইলিশ পাচারের একটি সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। ইলিশ যাতে পাচার না হয় তার জন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।