সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে রাতের আঁধারে বালু হরিলুট
- আপডেট সময় : ১২ বার পড়া হয়েছে
সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদী থেকে লিমপিড কোম্পানী নামের একটি প্রতিষ্ঠান বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের নামে অবৈধভাবে সিলিকা বালু উত্তোলন করছে। সেই সাথে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র লিমপিড এর নাম ব্যবহার করে রাতের আধারে অবৈধ ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে শত শত বালু ভর্তি নৌকায় অন্যত্রে বালু বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বারকি শ্রমিকরা। অথচ রাতের আধারে লিমপিড এর নৌকা বের হওয়ার কোন ইখতিয়ার নেই। জানা যায়, সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল কো- অপারেশ ( সাসেক) এর আওতায় ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ১ কোটি ২১ লক্ষ ২০ হাজার ১২৯ ঘনফুট বালি মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমোদন পায় লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অনুমতি পেয়েই নদীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্থানে পরিবেশ বিনষ্ঠকারী ড্রেজার ও বোমা মেশিনের তান্ডব চালাচ্ছে লিমপিড। এদিকে বালি মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমতি থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে দেদারছে সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন ডাম্পিং পয়েন্টে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। এছাড়াও দিনের বেলায় বালি মিশ্রিত নৌকা লোড-আনেলোডের কথা থাকলেও রাতের আধারে শত-শত বালু ভর্তি নৌকা বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপর দিকে এসব বালু বোঝাই বাল্কহেড থেকে ১৮-২০ টাকা রয়েলিটি আদায় করছে বিআইডাব্লিউটিএ। এভাবে প্রতিনিয়িত বালু লুটের দৃশ্য দেখে সাদা পাথরের মত ধোপাজান নদীর বালু লুটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। যা নিয়ে রীতিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধোপাজান নদীর উরারকান্দা এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট থাকা সত্ত্বেও কিভাবে প্রতিদিন শত-শত নৌকা বের হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করেই চলছে এই বালু লুট। এভাবে বালু লুট অব্যাহত থাকলে সাদা পাথর লুটের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহলের মানুষ। রাতে পুলিশ নামে মাত্র অভিযান পরিচালনা করে কিছু সংখ্যক নৌকা আটক করলেও লিমপিড প্রতিষ্ঠানের কাগজাদি দেখানোর পর সেগুলো আবার ছেড়ে দিচ্ছে। এদিকে গত রোববার গভীর রাতে সদর থানা ও নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০টি নৌকা আটক করেছে বলে জানান নৌ-পুলিশের ওসি দিলীপ কুমারসহ স্থানীয়রা। তবে সদর থানা পুলিশ বলছে তারা ৫টি নৌকা আটক করেছে। বাকি ৫টি নৌকা কোন হদীস মিলছে না। সদর থানার তথ্যমতে অভিযানে সদর থানা পুলিশ ৫টি ও নৌ-পুলিশের অভিযানে ১০টি বালুভর্তি নৌকা আটক করেছে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায় এসব বালু ভর্তি নৌকা লিমপিডের। অথচ লিমপিড এর নৌকা রাতে বের হওয়ার কোন অনুমতি নেই। তাই এই নৌকাগুলোর বিষয়ে প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে এর আগেও রাতের আধারে লিমপিড এর নাম ভাঙ্গিয়ে বের হওয়া নৌকা আটক করার পরেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যেহেতু রাতে লিমপিড এর নৌকা বের হওয়ার কোন ইখতিয়ার নেই তাহলে এসব নৌকা আটকের পর কেনো পুলিশ সেগুলো ছেড়ে দিলো তা নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাহলে কি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে বালু হরিলুট এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। এভাবেই চলছে ধোপাজান নদীর বালু-পাথর লুটের কর্মযজ্ঞ। দিনের বেলায় লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের নামে গুটি কয়েক নৌকা বের করলেও রাতের বেলা শুরু হয় হরিলুট। লিমিপিড এর নাম ব্যবহার করে বালু লুটের হিড়িক চালাচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি।
এদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কায় রয়েছের নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটা গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ স্থাপনা। স্থানীয় এক শ্রমিক নেতা জানান, লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং এর নাম ব্যবহার করে ধোপাজান নদীর বালু লুটের উৎসব চলছে। আমাদের শ্রমিকরা নদী বন্ধ থাকার কারনে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর লিমপিড এর নাম ব্যবহার করে একটি চক্র বালু লুটে কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। এ যেন আমাদের শ্রমিকের পেটে লাথি মারার অবস্থা। আমরা চাই প্রশাসন যেন বালু লুটতরাজদের বিরুদ্ধে দ্রুতই পদক্ষেপ নেন। বারকি শ্রমিক আব্দুল আলী বলেন, দিনে লিমপিডের ৫/১০ টি নৌকা বের হয়। আর রাতে লিমপিড এর নাম ব্যবহার করে চলে বালু হরিলুট। অথচ লিমপিড এর নৌকা রাতে বের হওয়ার কোন ইখতিয়ার নাই। রাতে সিন্ডিকেট চক্র অবৈধভাবে এসব নৌকা বের করে। পুলিশ এগুলো আটক করলেও লিমপিড এর কাগজাদি দেখালে ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে লুটেরারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাতের আধারে লিমপিড এর নৌকা বের হওয়ার অনুমতি নেই। তাহলে প্রশাসন কেন এসব অবৈধ বালুবাহি নৌকা আটক করার পরেও ছেড়ে দিচ্ছে বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংএর জিএম রাশেদ-উল-হাসান বলেন, আমরা দিনের বেলায় মাটি মিশ্রিত বালু বের করি। যেহেতু আমরা ছাড়া আর কারো বালু উত্তোলনের অনুমতি নেই, সেহেতু যারা রাতের আধারে বালু বের করে সেটা অবশ্যই অবৈধভাবে বের করছে। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ টোকের বাজার নৌ-পুলিশের ওসি দিলীপ কুমার জানান, রাতের আধারে বের হওয়া ১০টি নৌকা আমরা আটক করেছি। সেই সাথে সদর থানাও ১০টি নৌকা আটক করেছে। নৌকাগুলোর বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, সদর থানা পুলিশের অভিযানে ৫টি বালুভর্তি নৌকা আটক করা হয়েছে। নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করার পর এগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


















