স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক যাত্রা শুর

- আপডেট সময় : ১২:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫ ৯ বার পড়া হয়েছে
দেশে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করেছে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক। নন-জিওস্টেশনারি অরবিট নীতিমালার আওতায় এই সেবা আজ থেকে দেশে চালু হয়েছে। ব্যবহারকারীদের জন্য দুটি প্যাকেজের কথা জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর মধ্যে একটি স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং অপরটি রেসিডেন্স লাইট। রেসিডেন্স প্যাকেজে মাসিক খরচ ৬ হাজার টাকা, রেসিডেন্স লাইটে খরচ মাসিক ৪ হাজার ২০০। ইন্টারনেট সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ করতে হবে। এখানে ডেটা লিমিট নেই। একটি সংযোগে প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ মেগাবিট পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিভাইস স্থানান্তর করা যাবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ফাইবার সংযোগ পৌঁছায়নি। মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার আছে। এই অবস্থায় মোবাইল কোম্পানিগুলোর যে সেবা, সেটা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে হয়, যা মূলত লো ক্যাপাসিটি। বাংলাদেশে এখনও হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ার আছে, যারা শুধু ৩০০ এমবিপিএস-এর একটা ব্যান্ডউইথ দিয়ে একটি মোবাইল টাওয়ার সচল রাখে ডেটা ইন্টারনেটের জন্য এবং সেই ডেটা ইন্টারনেটটা প্রায় কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে মাত্র একটি সেটআপ বক্স দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে। অর্থাৎ, গ্রামের একজন উদ্যোক্তা স্টারলিংকের একটি সেটআপ বক্স, যেটার দাম ৪৭ হাজার টাকা, এটা কিনে নিজে নিরবচ্ছিন্ন এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। গ্রাহকরা লো লেটেন্সি এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, সংসদ ভবনে কিংবা উপদেষ্টার বাসভবন বা তার অফিসে যে গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, ঠিক একই গতিতে দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চল যেমন পার্বত্য অঞ্চল, হাওরাঞ্চল কিংবা বনাঞ্চলেও যেকোনো গ্রাহক উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানে কীভাবে স্টারলিংক ব্যবহার করতে পারবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, আমরা এনজিএসও-এর বিধিবিধান এমনভাবে করেছি, যাতে স্টারলিংক বা সমজাতীয় ইন্টারনেট সুবিধা উদ্যোক্তাবান্ধব হয়। অর্থাৎ, একজন উদ্যোক্তা কিংবা একাধিক উদ্যোক্তা নিজেরা যদি ৪৭ হাজার টাকার একটি তহবিল গঠন করেন, এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ইন্টারনেট সেটআপ বক্স কিনবেন। কেনার মাধ্যমে তারা তাদের আশপাশের দোকানে এই ইন্টারনেটের বিক্রি বা সেবা প্রদান করতে পারবেন। ওয়াই-ফাই রেঞ্জ আনুমানিক ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার, এই ৫০ মিটার জোনের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামের গ্রোথ সেন্টারগুলোতে অনেক দোকানপাট থাকে। সেখানে সহজেই ইন্টারনেট সেবা একজন ব্যক্তি কিনে বা একাধিক ব্যক্তি সমিতি আকারে কিনে তা বহুবিধ ব্যবহারে সম্ভব। আইনে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়নি। এছাড়া শহরের বাসভবনে ওয়াই-ফাই শেয়ারিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব। স্টারলিংকে যেহেতু বিল্ট-ইন রাউটার আছে, সেহেতু রাউটার হতে রাউটারে আইএসপি সেটআপেও ব্যবহার সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করবো আমাদের মাইক্রোক্রেডিট কর্তৃপক্ষ কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাংকের জন্য, যাতে এই স্টারলিংক উদ্যোক্তাদের অর্থের সংস্থান হয়। পাশাপাশি যারা নাগরিক সেবার উদ্যোক্তা হবেন, তাদের জন্য স্টারলিংক কীভাবে সহজে নেওয়া যায়—এর জন্যও আমরা আর্থিক প্যাকেজ তৈরির পরিকল্পনা করছি। আমরা বলছি যে, স্টারলিংকের দাম কিছুটা বেশি। মাসিক খরচ ৬ হাজার এবং ৪ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে, এটা আমরা স্টারলিংকের সঙ্গে কিছুটা দরকষাকষি করে কমিয়েছি। কিন্তু যেহেতু এটি শেয়ার করা যাবে এবং শেয়ার করার ওপর কোনও বিধিনিষেধ নেই এবং বিক্রির ওপরও বিধিনিষেধ নেই, সেজন্য এই ইন্টারনেট দিয়ে একটি সফল ব্যবসায়িক মডেল, এসএমই বা ব্যবসা মডেল তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি কেউ যদি এই স্টারলিংক ব্যবহার করে তা দিয়ে (মোবিলিটি এবং রোমিং সুবিধা ছাড়া) ইন্টারনেট ফিড করে অন্য জায়গায় ব্যবহার করেন, সেখানেও কোনও বাধা নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের এসএমই কিংবা উদ্যোক্তা বিকাশে সব ধরনের আইনগত সুবিধা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর বাইরে আমরা সবাই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ফোন লেডি’ কনসেপ্টে বড় হয়েছি। স্টারলিংকের মাধ্যমে আমাদের মাইক্রোক্রেডিট কিংবা ইএমআই অথবা যেকোনও এমএফআই বা এমআরএ পদ্ধতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে ‘ওয়াই-ফাই লেডি’ হিসেবে নতুন একটি উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি করতে পারে। চাইলে শুধুমাত্র গ্রামীণ নারীদের একটি বিশেষ ঋণ দিয়ে স্টারলিংক কিনে ইন্টারনেট সেবা বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবন ছাড়াও অনানুষ্ঠানিক কো-ওয়েবিং ব্যবসার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়া সম্ভব।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের দাম কতটা সহনীয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একটি ভবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন অনেক অ্যাপার্টমেন্ট, কন্ডোমিনিয়াম, ফ্ল্যাট থাকে। তারা কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট বা তলা মিলে এই সেবা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০ মিটার। সব মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এককালীন খরচটা কিছুটা বেশি হলেও, এটি যখন সমবায় ভিত্তিতে বা ভাগাভাগি করে ব্যবহৃত হবে, তখন এই ব্যয় তেমন বোঝা মনে হবে না।