স্টেডিয়ামের পাশে চলছে জুয়া
- আপডেট সময় : ২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবৈধ বেটিং রোধে এবার জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, ক্রিকেট থেকে বেটিং নির্মূলে কাজ করতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও পাচ্ছেন তারা। তারপরও বিসিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। ইতোমধ্যে খেলার আশপাশ থেকে পেশাদার শীর্ষ পর্যায়ের ৬ জুয়ারীকে আটক এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
দিন দিন তরুণদের জুয়া আসক্তি বেড়েই চলেছে। হাতে হাতে স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে জুয়া খেলার হিড়িক পড়েছে তরুণদের মধ্যে। বর্তমানে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপস বেশি লাভবান হওয়ার লোভ দেখিয়ে অ্যাপস ডাউনলোড করে খেলার আহ্বান জানানো হয়। ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ দেখিয়ে টোপ দেওয়া হয়। ফলে তরুণরা মোবাইল জুয়ায় আকৃষ্ট হচ্ছে দিন দিন।
আরো জানা যায়, তিন তাস, কাইট, হাজারি, ক্যারম, লুডু ও আইপিএল-বিপিএলসহ বিভিন্ন আইটেমের আসরে প্রতিদিনই ওড়ে লাখ টাকা। বস্তির খুপরি, ক্লাব, মার্কেট, দোকান, রিকশার গ্যারেজ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলে এসব অবৈধ কারবার। এলাকার মাস্তান, ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে জুয়ার আখড়ায় অংশ নেয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাদ যাচ্ছে না দিনমজুর কিংবা রিকশাচালকও। পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট ও ফুটবলের মাঠে চলে জুয়ার নগদ লেনদেন। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র একই অবস্থা।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘চিলি ফ্লেক্স স্টুডিও’ এর এক ব্রডকাস্টে বুলবুল জানান, মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলাকালে মাঠের ভেতরে ও বাইরে বেটিংয়ে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
বুলবুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ক্রিকেট থেকে বেটিং পুরোপুরি বন্ধ করা। জানি, এতে ঝুঁকি আছে, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও এসেছে। কিন্তু আমরা এটাকে যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছি—যা হওয়ার হবে।
তিনি জানান, বেটিং নেটওয়ার্ক এতটাই বিস্তৃত যে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ঢোকার চেষ্টা চলছে। এমনকি স্টেডিয়ামের পাশের ভবন ভাড়া নিয়ে সেখান থেকেও এসব কার্যক্রম চালানো হয়।
বুলবুলের ভাষায়, ‘আমরা জেনেছি, মাত্র এক লাখ টাকায় আশপাশের ভবন ভাড়া নেওয়া হয়, আর সেখান থেকেই এই অবৈধ বেটিং পরিচালিত হয়। বেটিং দমন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে বিসিবি সম্প্রতি সাবেক আইসিসি অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটের প্রধান অ্যালেক্স মার্শালকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। পাশাপাশি সাবেক পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুলবুল বলেন, ‘আমরা ইউনিটটাকে আরও শক্তিশালী করছি। এটি শুধু মাঠে নয়, পুরো ক্রিকেট কাঠামোর মধ্যেই বেটিং প্রতিরোধে কাজ করবে। শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দেশের ক্রিকেটের বিকাশ নিয়েও নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। ইতোমধ্যে ষ্টেডিয়ামের আশপাশের একাধিক ভবনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ভবনের মালিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনলাইন বা অফলাইন জুঢা সম্পর্কে বলা হয়েছে, জুয়া বলতে এমন সব খেলা বোঝায়, যাতে বাজি কিংবা হারজিতের প্রশ্ন আছে। এটা এমন একটা ব্যাপার, যা লাভ বা লোকসানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। জুয়া যে ধরনেরই হোক, তা হারাম। নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারির তীর,এসব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে।
আমাদের তরুণদের এই জুয়ার আসক্তি বন্ধ করতে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে অভিভাবকদের। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, মোবাইলে সারাক্ষণ কী করছে, তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, যেন সে স্মার্টফোনের অপব্যবহার করতে না পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতন ও সীমিতকরণের বিকল্প নেই। তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি নৈতিক ও ইসলামিক মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকেও চিন্তা করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও সরকারের ঐক্যবদ্ধ সচেতনতার মাধ্যমে জুয়ার ভয়াবহতা থেকে তরুণদের রক্ষা করা সম্ভব।
ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো আমরাও চাই প্রতিটি অঞ্চল থেকে ক্রিকেটার উঠে আসুক। ক্রিকেটকে আমরা এমন এক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মা-মেয়ে, বাবা-ছেলেও একসঙ্গে খেলবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, জুয়া খেলা দন্ডনীয় অপরাধ। যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।






















