স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নয়, প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামীগুলোর পরামর্শ
- আপডেট সময় : ০৯:৩২:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪ ১৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ শনিবার দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এর মধ্যে ইসলামী পন্থী দলের বাইরে গণফোরাম এবং জাতীয় পার্টি মতবিনিময় বৈঠকে যোগ দেয়।
বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলের নেতারা সাংবাদিকদের বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, সকল জায়গায় একটা স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া হলে, ফের আগের পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, পরিবেশ তৈরি করতে হবে আগে।
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে অতি দ্রুত সংলাপের দাবি ওঠার পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংলাপ হয়েছে, তাতে একেক দল একেক ধরনের দাবি তুললেও নির্বাচনের সময় সীমা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
দলগুলোর পক্ষ থেকে বরং আগে সংস্কার করে পরে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার পতন আন্দোলনে হত্যার দ্রুত বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের দাবি উঠে এসেছে।
শনিবার বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে এই সংলাপ। ৬টি ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আলোচনা। দলগুলো হল: খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম।
এরপর চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ।
পরে একে একে যায় জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, অলি আহমদের নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোট।
দলগুলো তাদের দলীয় প্যাডে নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ও দাবি লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
যৌক্তিক সময়
সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন করবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিচ্ছে না।
গত ২৪ অগাস্ট থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি উঠছে, তবে জামায়াত মনে করে নির্বাচনের সময় এখন নয়। এ নিয়ে দুই দলের বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির যে প্রতিনিধি দল ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে সেখানে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানানো হয়। সংলাপ শেষ করে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, অতি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় করবেন।
দলগুলোর আলোচনাতেও নির্বাচনের সময়সীমার বদলে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময় নেওয়ার কথাই বলা হয়েছে।
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখার জন্য একমাত্র অস্ত্র হল একটা ফোরকাস্ট দিয়ে দেওয়া। এটা ছয় মাস পরেও হতে পারে, নয় মাস পরেও হতে পারে। সংস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার কথা আমরা বলেছি।
সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারা জানিয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টা কোনো প্রস্তাব দেননি। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারা জানিয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টা কোনো প্রস্তাব দেননি। সংস্কার করার আগে নির্বাচন কোনো অবস্থাতে বাঞ্ছনীয় নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এটাই বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটা বিষয়ে। আমি উত্তর দিকে গেলাম, আপনি দক্ষিণ দিকে গেলেনৃ তা হলে তো দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সবাইকে একটা ঐক্যমতে আসতে হবে।
ছয় ইসলামী দলের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টা বলেছি যে, তিনি একটি যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে অযথা যেন কাল বিলম্ব না করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
প্রধান উপদেষ্টাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর তারা কালবিলম্ব না করে নির্বাচনে যেতেই তারা আগ্রহী এবং সেই ধরনের তারা প্রস্তুতি এবং আয়োজন করছেন।
খেলাফত মসলিস ও হেফাজত নেতা মামুনুল হক জানিয়েছেন, সংলাপে তারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। যৌক্তিক সময়টি কত দিনের এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়া হয়নি, আমরা মেয়াদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা করিনি।
ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রায় ১৬ বছর ধরে দলীয়করণ এবং ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর যে প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং এই নির্বাচনগুলো উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যারা প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছেন, যারা বিভিন্ন মিডিয়াসহ সর্বত্র সরকারকে সহযোগিতা করেছে, সেটা অন্যায়।
একটা নির্ভরযোগ্য একটা কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই অন্যায়কারীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যবস্থা করার বিষয়টি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলছি। যোগ্যদের দিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়ার কথাও বলে ইসলামী আন্দোলন।
আমরা বলেছি, এই সব জায়গাগুলোতে একটা স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া হলে তখন আবার আগের সেই পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, পরিবেশ তৈরি করতে হবে আগে।
সংলাপ শেষে বের হয়ে এসে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, অনেক সুন্দর আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। আলোচনা ভালো হয়েছে।