স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠ হেলাল হাফিজ: ড. ইউনূস
- আপডেট সময় : ০৯:০৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩২ বার পড়া হয়েছে
কবি হেলাল হাফিজ| তাঁর চলে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য হেলাল হাফিজ ছিলেন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠ। তার কালজয়ী কবিতার মতই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে যার পঙক্তি বারবার ফিরেছে মানুষের মুখে মুখে, শক্তি-সাহস আর প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী ও প্রগতিশীল আন্দোলনে, সেই প্রেম আর দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজের প্রয়াণে শোকার্ত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার এক বার্তায় শোক প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, কবি হেলাল হাফিজ তারুণ্যের শক্তি ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ। তার কালজয়ী কবিতার মতই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। তার মৃত্যুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
কবি হেলাল হাফিজের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে। শুক্রবার দুপুরে সেখানেই বাথরুমে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
পরে পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হেলাল হাফিজের পরকালীন জীবনের শান্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর, নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই।
১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে ওঠে মিছিলের স্লোগান।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।
আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা একাত্তর’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
খুব কম লিখেছেন হেলাল হাফিজ। তবে তার কবিতা যেমন হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান, তেমনই আবার হয়ে উঠেছিল প্রেমের চিঠির অনুষঙ্গ। কবিতা যে বই ছাড়াও কার্ড হয়ে বের হতে পারে, তাও দেখা যায় হেলাল হাফিজের ক্ষেত্রে।
বাংলা ভাষার পাঠকের জন্য হেলাল হাফিজ রেখে গেছেন নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, দুঃসময়ে আমার যৌবন, অস্ত্র সমর্পণ, বেদনা বোনের মতো, ইচ্ছে ছিল, নিখুঁত স্ট্রাটেজি, দুঃখের আরেক নাম, প্রত্যাবর্তন, অশ্লীল সভ্যতা, কবিতার কসম খেলাম, উপসংহার, সম্প্রদান, একটি পতাকা পেলে, কবি ও কবিতা, ফেরিওয়ালা, অমীমাংসিতর মত অসামান্য সব কবিতা।
কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে হেলাল হাফিজকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
কবিতার জন্য জীবন কাটিয়ে দেওয়া হেলাল হাফিজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা।
১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলাল হাফিজ। পূর্বদেশ ও দৈনিক দেশ পত্রিকায় তিনি সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর।