হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ৬০৬, তদন্ত শেষ হয়নি একটিও

- আপডেট সময় : ১০:৩৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার। পরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গণহত্যার দায়ে হাসিনা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে এখন পর্যন্ত ৬০৬ হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে ঢাকার ৫০টি থানায় মোট ৩৮৮টি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয় যাত্রাবাড়ি থানায় ১১২টি। মোহাম্মদপুর থানায় ১৩টি, মিরপুর থানায় ১৬টি, ধানমন্ডি থানায় ৯টি, শাহবাগ থানায় ৮টি, ওয়ারি থানায় পাঁচটি, চকবাজার থানায় ৬টি, উত্তরা পশ্চিম থানায় ১২টি ও উত্তরা পূর্ব থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪টি, রাজশাহী বিভাগে ১২টি, খুলনা বিভাগে ৯টি, ময়মনসিংহে ৮টি, রংপুরে ৭টি, সিলেটে পাঁচটি ও বরিশালে ৬টি মামলা দায়ের হয়।
এর মধ্যে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত সোমবার চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ওই সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, আশা করছি, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহেই ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে। ইনশাআল্লাহ, জুলাই গণহত্যার বিচার শুরু হবে।
ট্রাইব্যুনালের একটি আদেশে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা অপর একটি মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
জানা যায়, ইউনূস সরকারের আট মাস পেরিয়ে গেলেও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব হত্যা মামলার কোনোটিরই তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। যদিও এটিকে তদন্তের ধীরগতি বলতে নারাজ পুলিশ। ডিএমপির মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানান, কয়েকটি মামলার কাজ অনেকটা এগিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সারা হোসেন মনে করেন, মামলাগুলো দেখভালের জন্য নির্দিষ্ট কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ। এর যৌক্তিক সুরাহা হওয়া দরকার। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া কতদূর এবং মামলাগুলোর শেষ পরিণতি কী হবে- এটা নিয়ে ধারণা পওয়া গেলে মানুষ তদন্তের বিষয়ে বুঝতে পারত। সার্বিকভাবে মামলাগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিৎ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মামলা। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং অপরাধ সংগঠনে তাদের ভূমিকা তদন্ত করা হচ্ছে, যা আইনের ভাষায় ‘সুপেরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ হিসেবে পরিচিত। জুলাই-আগস্টের ঘটনার বিভিন্ন স্থানের ওপর ভিত্তি করে কিছু মামলার তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আশুলিয়া, রামপুরা এবং চানখারপুলসহ বেশ কয়েকটি স্থানের মামলা উল্লেখযোগ্য। সুপেরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মামলায় যারা গ্রেপ্তার বা পলাতক রয়েছেন, তাদের অনেকেই এরই মধ্যে ঘটনাস্থল কেন্দ্রিক মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। আর যেসব মামলায় নৃশংসতা বেশি, সেগুলোতে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ কারণে অন্যান্য মামলার তদন্ত কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে এর মানে এ নয় যে মামলাগুলো থেমে আছে। প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে এবং তারা পৃথকভাবে তদন্ত পরিচালনা করছেন।
শেখ হাসিনার মামলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, শেখ হাসিনা সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু। তার নির্দেশেই সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত হলে, সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এ কারণে শেখ হাসিনার মামলা শেষ করে বাকিগুলো এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।