ঢাকা ০৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

জয়পুরহাটে কৃষক-ব্যবসায়ীর চুক্তি শেষ হয়নি

হিমাগার গোপনে ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি

এম.এ. জলিল রানা, জয়পুরহাট
  • আপডেট সময় : ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে কৃষক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে শেষ হয়নি চুক্তির মেয়াদ, হিমাগার গোপনে আলু বিক্রি করলো ৫৫ হাজার বস্তা। জেলায় তিনটি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ রাখা প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।ওই সব আলুর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা রয়েছে বীজ আলুও।
চুক্তি অনুযায়ী পত্র, আগামী ১৫ নভেম্বর-২০২৫ পর্যন্ত আলু সংরক্ষণের মেয়াদ থাকলেও হিমাগার কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের আগেই আলু বিক্রি করেছেন। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলতে গেলে এই ঘটনা নজরে আসে।
জেলার পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকার সাথী হিমাগার লি:,জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা ভাসিলা এলাকায় মোল্লা হিমাগার লি: এবং আয়মাপুর এলাকায় হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার, সব মিলিয়ে এই তিনটি হিমাগার থেকে প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সাথী হিমাগার লি: প্রায় ২০ হাজার, মোল্লা হিমাগার লি: ৩০ হাজার এবং হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার বিক্রি করেছে ৫ হাজার বস্তা আলু । বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর-২০২৫) সরেজমিন এ সব তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
সাথী হিমাগারে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করছেন। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কৃষক ময়নুল ইসলাম জানান, সাথী হিমাগারে আমি ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আলু তুলতে এসে জানতে পারলাম আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। আমাকে হিমাগার কর্তৃপক্ষ আগে কোনো কিছুই জানায়নি। আমি আলু ফেরতের দাবি করছি।
পাঁচবিবি উপজেলার জাহিদুল কানান, সাথী হিমাগারে আমি ১০০ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আলু রোপণের জন্য জমিও প্রস্তুত করেছি। কিন্তু হিমাগারে এসে দেখি আলু উধাও। কাগজপত্রে লেখা ছিল, ১ মাস আগে আলু বিক্রি করা হয়েছে। আমি এখন জমিতে আলু লাগাবো কীভাবে?
সাথী হিমাগার ব্যবস্থাপক শামসুল হক জানান, এ বছর আমাদের হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ২৬ হাজার বস্তা আলু কৃষকরা জোর করে রেখেছিলেন। আর এ কারণেই কিছু আলু নষ্ট হতে শুরু করেছিল। সেই কারণে আমরা প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। আর ওআলু উত্তোলনের জন্য হিমাগার থেকে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী কৃষকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। কেউ বীজ আলু চাইলে আমাদের সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু আছে সেখান থেকে আলুও দেওয়া হচ্ছে।
মোল্লা হিমাগার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমাদের হিমাগার থেকে প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। যে সব ব্যবসায়ীর বেশি আলু ছিল, তাদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করেছি। আলুর পরিবর্তে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। আর আমরা ৪৫ জন ব্যবসায়ীর লিখিত অনুমতি নিয়েই আলু বিক্রি করেছি।
হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার ব্যবস্থাপক বেলাল সরদার জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি সত্য। হিমাগারে আলু বেশি ছিল। খাবার আলু উত্তোলনের সময় ৩০ সেপ্টেম্বর-২০২৫ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু কেউ তখন আলু তুলেননি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গণমাধ্যমকে জানান, হিমাগার মালিকদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে যে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে কেউ কৃষকদের আলু বিক্রি করবে না। যারা বিক্রি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কৃষকরা তাদের লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। কৃষককে না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। আমি নিজে বিষয়টি তদন্ত করেছি। তবে এখন হিমাগার কর্তৃপক্ষ বাজার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে কৃষক-ব্যবসায়ীর চুক্তি শেষ হয়নি

হিমাগার গোপনে ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি

আপডেট সময় :

জয়পুরহাটে কৃষক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে শেষ হয়নি চুক্তির মেয়াদ, হিমাগার গোপনে আলু বিক্রি করলো ৫৫ হাজার বস্তা। জেলায় তিনটি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ রাখা প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।ওই সব আলুর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা রয়েছে বীজ আলুও।
চুক্তি অনুযায়ী পত্র, আগামী ১৫ নভেম্বর-২০২৫ পর্যন্ত আলু সংরক্ষণের মেয়াদ থাকলেও হিমাগার কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের আগেই আলু বিক্রি করেছেন। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলতে গেলে এই ঘটনা নজরে আসে।
জেলার পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকার সাথী হিমাগার লি:,জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা ভাসিলা এলাকায় মোল্লা হিমাগার লি: এবং আয়মাপুর এলাকায় হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার, সব মিলিয়ে এই তিনটি হিমাগার থেকে প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সাথী হিমাগার লি: প্রায় ২০ হাজার, মোল্লা হিমাগার লি: ৩০ হাজার এবং হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার বিক্রি করেছে ৫ হাজার বস্তা আলু । বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর-২০২৫) সরেজমিন এ সব তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
সাথী হিমাগারে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করছেন। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কৃষক ময়নুল ইসলাম জানান, সাথী হিমাগারে আমি ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আলু তুলতে এসে জানতে পারলাম আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। আমাকে হিমাগার কর্তৃপক্ষ আগে কোনো কিছুই জানায়নি। আমি আলু ফেরতের দাবি করছি।
পাঁচবিবি উপজেলার জাহিদুল কানান, সাথী হিমাগারে আমি ১০০ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আলু রোপণের জন্য জমিও প্রস্তুত করেছি। কিন্তু হিমাগারে এসে দেখি আলু উধাও। কাগজপত্রে লেখা ছিল, ১ মাস আগে আলু বিক্রি করা হয়েছে। আমি এখন জমিতে আলু লাগাবো কীভাবে?
সাথী হিমাগার ব্যবস্থাপক শামসুল হক জানান, এ বছর আমাদের হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ২৬ হাজার বস্তা আলু কৃষকরা জোর করে রেখেছিলেন। আর এ কারণেই কিছু আলু নষ্ট হতে শুরু করেছিল। সেই কারণে আমরা প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। আর ওআলু উত্তোলনের জন্য হিমাগার থেকে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী কৃষকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। কেউ বীজ আলু চাইলে আমাদের সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু আছে সেখান থেকে আলুও দেওয়া হচ্ছে।
মোল্লা হিমাগার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমাদের হিমাগার থেকে প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। যে সব ব্যবসায়ীর বেশি আলু ছিল, তাদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করেছি। আলুর পরিবর্তে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। আর আমরা ৪৫ জন ব্যবসায়ীর লিখিত অনুমতি নিয়েই আলু বিক্রি করেছি।
হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার ব্যবস্থাপক বেলাল সরদার জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি সত্য। হিমাগারে আলু বেশি ছিল। খাবার আলু উত্তোলনের সময় ৩০ সেপ্টেম্বর-২০২৫ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু কেউ তখন আলু তুলেননি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গণমাধ্যমকে জানান, হিমাগার মালিকদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে যে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে কেউ কৃষকদের আলু বিক্রি করবে না। যারা বিক্রি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কৃষকরা তাদের লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। কৃষককে না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। আমি নিজে বিষয়টি তদন্ত করেছি। তবে এখন হিমাগার কর্তৃপক্ষ বাজার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।