২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে আলটিমেটাম
- আপডেট সময় : ০৭:৩৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
আটক সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে দাবি বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের।
এর আগে ডিবি কার্যালয়ে রাখা ৬ সমন্বয়ককে ছেড়ে দিতে গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দেয় বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে আলটিমেটাম দেওয়ার সময় বলা হয়, দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আলটিমেটাম পার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ের দিকে যাত্রা করে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। তার আগেই দুপুর দেড়টার দিকে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশ্লেষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ঢাকাসহ সারা দেশে আটক ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক ও আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া আটকদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে (ডিবি কার্যালয় থেকে) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি, কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারা দেশে আটক ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের মুক্তির জন্য এখানে এসে শুনলাম তাদের নাকি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমরা জানি না তারা আসলে নিরাপদে আছে কি না। সারা দেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। জুলাইয়ে হত্যাকাণ্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছে, সেই আন্দোলনের হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে ব্লক রেইড দিয়ে দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা আজকেই থামাতে হবে। সমন্বয়কদের যেমন ছেড়ে দিয়েছেন, সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের ছেড়ে দিতে হবে।
পুরো দেশের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারে বসেছেন। আমাদের সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করার জন্য আপনাদের ওইখানে বসিয়ে রাখা হয়নি। সব কারফিউ তুলে নেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের তুলে নেবেন।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। তা আটকে রাখার অধিকার আপনাদের কারো নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী কারাগারে। আটকে রাখা সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সব শিক্ষার্থীকে যদি ছেড়ে দেওয়া না হয়, যদি হত্যার বিচার করা না হয়, যদি অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া না হয়, তাহলে আমাদের বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরো কঠোর ও অব্যাহত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদী বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় দ্রোহ যাত্রা নামে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে ছাত্র-শিক্ষক-সুধীজনরা অংশ নেবেন। এতগুলো হত্যার বিচার চাই।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রয়াত সংস্কারক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর ও সদস্য রুমি প্রভা।