ঢাকা ০৮:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবসে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo মোংলায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন Logo কক্সবাজারে পর্যটক নিরাপত্তায় রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিআইজি আপেল মাহমুদ Logo সিরাজদিখানে গ্রাম পুলিশের মাঝে পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ Logo কালিগঞ্জে মাংসের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত Logo পলাশবাড়ী পৌরসভার বহুমুখী উন্নয়নে কাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান শীর্ষক দিনব্যাপি কর্মশালা Logo টেকনাফে পাহাড়ের পর সাগর পথে পাচার কালে ২৯ জন ভুক্তভোগী সহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক Logo তিতাসে বিএনপির লিপলেট বিতরণ Logo গোমস্তাপুরে জোরপূর্বক ধানীজমি দখলের চেষ্টা Logo কিশোরগঞ্জে রেলের গাছ কেটে বিক্রি করলেন কর্মচারীরা

৪৮ ঘন্টা আটকে থাকার পর যেভাবে উদ্ধার করা হলো আটকে পড়া বিড়াল

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১৬৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভোরের মিরপুরের আকাশ তখনও মেঘলা। হোপ স্কুলের গলিতে দাঁড়িয়ে মানুষজন বারবার চোখ তুলছিলেন উঁচু এক নারিকেল গাছের দিকে। ডালের মাথায় ভয়ে কুঁকড়ে বসে আছে একটি বিড়াল। গত দুই দিন ধরে নামতে পারছে না। খাবার নেই, বিশ্রাম নেই—শুধু আতঙ্ক আর অপেক্ষা। আর গলির মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে, বিড়ালটির নিরাপদে ফেরার আশায়।
প্রথম দিনেই বিড়ালটি নামানোর জন্য স্থানীয়রা নানা কৌশল নেয়। খাবারের টোপ দেওয়া হয়, লাঠি দিয়ে আলতো করে নামানোর চেষ্টা হয়, এমনকি মই এনে ওঠার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই বিড়ালটি ভয়ে আরও ওপরে উঠে যায়।
এই অসহায় দৃশ্য দেখে নুসরাত জাহান নামের এক তরুণী ফেসবুকে সাহায্যের জন্য পোস্ট দেন। পোস্টে মিজানুর রহমান ট্যাগ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিষয়টি জানার পর প্রশাসক এজাজ দ্রুত যোগাযোগ করেন ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম সামসুল আলমের সঙ্গে। প্রশাসক দ্রুত বিড়ালটি উদ্ধারের জন্য প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসির কর্মীরা গিয়ে বিড়ালটি উদ্ধার অভিযানে নামে। কিন্তু উচ্চতার কারণে ব্যর্থ হতে থাকে একের পর এক প্রচেষ্টা। বিড়ালটি তখনও নিরুপায়।
প্রশাসকের নির্দেশে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন শেষমেশ যোগাযোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালের সঙ্গে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের অভিজ্ঞ টিম ঘটনাস্থলে আসে।
গলির পরিবেশ বদলে যায়। সবাই দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে। মই উঁচু হতে থাকে, দক্ষ হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বিড়ালের দিকে। এক মুহূর্ত যেন পুরো গলিই থমকে যায়। অবশেষে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ছোট্ট প্রাণটিকে নিরাপদে নামানো হয়।
নীচে নামার পর বিড়ালটিকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু মুক্তির স্বাদ পাওয়া প্রাণীটি আর বন্দি থাকতে চায়নি। সুস্থ অবস্থায় হুট করেই দৌড়ে পালিয়ে যায় । মানুষের চোখে তবু আনন্দ—কারণ, প্রাণটি বেঁচে গেছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “মানুষের পাশাপাশি সব প্রাণীও যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে, আমরা সে রকম একটি বাসযোগ্য শহর গড়ার চেষ্টা করছি।”
বিড়ালটি নিরাপদভাবে উদ্ধারের পর ডিএনসিসি প্রশাসক ফায়ার সার্ভিসের ডিজিকে ফোন করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এছাড়া প্রশাসক ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই এই শহরকে সবার জন্য নিরাপদ করা সম্ভব।
এটি শুধু একটি বিড়াল উদ্ধারের গল্প নয়। এটি মানুষের সহমর্মিতা, নগর প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতা এবং সমষ্টিগত দায়িত্ববোধের গল্প। শহরে মানুষ যেমন, তেমনি প্রাণীরাও সমানভাবে নিরাপত্তা ও যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখে—এই ঘটনাটি আমাদের সেই সত্যটাই নতুন করে মনে করিয়ে দিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৪৮ ঘন্টা আটকে থাকার পর যেভাবে উদ্ধার করা হলো আটকে পড়া বিড়াল

আপডেট সময় :

ভোরের মিরপুরের আকাশ তখনও মেঘলা। হোপ স্কুলের গলিতে দাঁড়িয়ে মানুষজন বারবার চোখ তুলছিলেন উঁচু এক নারিকেল গাছের দিকে। ডালের মাথায় ভয়ে কুঁকড়ে বসে আছে একটি বিড়াল। গত দুই দিন ধরে নামতে পারছে না। খাবার নেই, বিশ্রাম নেই—শুধু আতঙ্ক আর অপেক্ষা। আর গলির মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে, বিড়ালটির নিরাপদে ফেরার আশায়।
প্রথম দিনেই বিড়ালটি নামানোর জন্য স্থানীয়রা নানা কৌশল নেয়। খাবারের টোপ দেওয়া হয়, লাঠি দিয়ে আলতো করে নামানোর চেষ্টা হয়, এমনকি মই এনে ওঠার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই বিড়ালটি ভয়ে আরও ওপরে উঠে যায়।
এই অসহায় দৃশ্য দেখে নুসরাত জাহান নামের এক তরুণী ফেসবুকে সাহায্যের জন্য পোস্ট দেন। পোস্টে মিজানুর রহমান ট্যাগ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিষয়টি জানার পর প্রশাসক এজাজ দ্রুত যোগাযোগ করেন ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম সামসুল আলমের সঙ্গে। প্রশাসক দ্রুত বিড়ালটি উদ্ধারের জন্য প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসির কর্মীরা গিয়ে বিড়ালটি উদ্ধার অভিযানে নামে। কিন্তু উচ্চতার কারণে ব্যর্থ হতে থাকে একের পর এক প্রচেষ্টা। বিড়ালটি তখনও নিরুপায়।
প্রশাসকের নির্দেশে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন শেষমেশ যোগাযোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালের সঙ্গে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের অভিজ্ঞ টিম ঘটনাস্থলে আসে।
গলির পরিবেশ বদলে যায়। সবাই দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে। মই উঁচু হতে থাকে, দক্ষ হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বিড়ালের দিকে। এক মুহূর্ত যেন পুরো গলিই থমকে যায়। অবশেষে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ছোট্ট প্রাণটিকে নিরাপদে নামানো হয়।
নীচে নামার পর বিড়ালটিকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু মুক্তির স্বাদ পাওয়া প্রাণীটি আর বন্দি থাকতে চায়নি। সুস্থ অবস্থায় হুট করেই দৌড়ে পালিয়ে যায় । মানুষের চোখে তবু আনন্দ—কারণ, প্রাণটি বেঁচে গেছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “মানুষের পাশাপাশি সব প্রাণীও যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে, আমরা সে রকম একটি বাসযোগ্য শহর গড়ার চেষ্টা করছি।”
বিড়ালটি নিরাপদভাবে উদ্ধারের পর ডিএনসিসি প্রশাসক ফায়ার সার্ভিসের ডিজিকে ফোন করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এছাড়া প্রশাসক ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই এই শহরকে সবার জন্য নিরাপদ করা সম্ভব।
এটি শুধু একটি বিড়াল উদ্ধারের গল্প নয়। এটি মানুষের সহমর্মিতা, নগর প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতা এবং সমষ্টিগত দায়িত্ববোধের গল্প। শহরে মানুষ যেমন, তেমনি প্রাণীরাও সমানভাবে নিরাপত্তা ও যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখে—এই ঘটনাটি আমাদের সেই সত্যটাই নতুন করে মনে করিয়ে দিল।