৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে টার্গেট ভিত্তিতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ০৫:৫১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২৯ বার পড়া হয়েছে
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত যে চুক্তি তার মূলে শেখ হাসিনা ফেরত চাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার চিন্তা করছে
বলে রোববার প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেছেন। সুতরাং সেই প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যাচ্ছে
জুলাই অভ্যুত্থানে ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে টার্গেট ভিত্তিতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে শেখ হাসিনা। আজকের সব অপরাধের প্রধান দায় হাসিনার। এর তদন্ত সমাপ্ত করে বিচারের উপযোগী একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে দুই মাস সময় চাওয়া হলে আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করেন। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যে গণহত্যা চালিয়েছে শেখ হাসিনা, তার সহযোগি ৯জন মন্ত্রী, এক বিচারপতি ও এক সচিবসহ ১৩ জনকে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়।
আদালতে শুনানী শেষে আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিটলারের মতো ক্যাম্প তৈরি করে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গণহত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ৯ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। বলেন, বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি একটি শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তা আজকের দিনের এক বড় শিক্ষা।
তাজুল বলেন, ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের মাধ্যমে একটি নিপীড়ক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল, সে স্টোরি আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রাখার উদ্দেশ্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড এছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।
আয়না ঘর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পে নিয়ে গুম, খুনের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর সঙ্গে তুলনীয় ছিল বিগত সরকারের গুম-খুনের ঘটনা। তারা শুধু যে গণহত্যা করেছে শুধু তাই নয়।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, এক নম্বর আসামি শেখ হাসিনা, তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে ফরমাল আবেদন পাঠিয়েছি ইন্টারপোলের কাছে। রেড নোটিশের মাধ্যমে তাকে পেলে যেন গ্রেফতার করা হয়। তবে এর বাইরেও পদক্ষেপ রয়েছে, যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত যে চুক্তি তার মূলে শেখ হাসিনা ফেরত চাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার চিন্তা করছে বলে রোববার প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেছেন। সুতরাং সেই প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যাচ্ছে। এটা আমরা আদালতের কাছে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ডিফেন্সের পক্ষে বেশ কয়েকজন আইনজীবী তাদের ওকালতনামা দাখিল করেছেন তবে তাদের পক্ষ থেকে শুধু একজনের জন্য পিটিশন ছিল। সেই পিটিশনটি ছিল অভিযোগের কপি সরবরাহ করা সংক্রান্ত। কিন্তু পিটিশনটি যথানিয়মে দাখিল করা হয়নি। সুতারাং পিটিশন হিসেবে সেটি গণ্য হয়নি। ভবিষ্যতে তিনি যদি মনে করেন সেটার ব্যাপারে আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ১৭ অক্টোবর পৃথক দুই আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।