৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কি.মি. সড়ক হস্তান্তরের আগেই ভাঙন
- আপডেট সময় : ১০:১০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪ ২৬০ বার পড়া হয়েছে
রাস্তাটি নির্মাণকালে নিম্নমানের খোয়া-ইট ব্যবহার করা হয়
এনিয়ে এলজিআরডি স্থানীয় প্রকৌশলী
থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)
ব্যয়বহুল রাস্তারটি নিম্নমানের নির্মাণ বিষয়ে বার বার অবহিত করেও লাভ হয়নি। যার পরিণতি সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা। এটি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মনে করি করেন, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আলমগীর হোসেন
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে হরিণঘাটা ইকোপার্কের আগে জাফরের দোকান নামক স্থান পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ। নির্মাণ ব্যয় ৭ কোটি টাকা। কাজ শেষ হয়েছে গত তিন মাস আগে। বাস্তবায়ন সংস্থা এলজিআরডি। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তাটি মজবুতিকরণ কাজ পান পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ নামে এক ঠিকাদার। তার কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক নেন বরগুনার দুই ঠিকাদার শাহিন ও শহিদুল ইসলাম মৃধা।
প্রায় মাস তিনেক আগে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এখন হস্তান্তরের পালা। কিন্তু এরই মধ্যে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। বৃষ্টিতেই নবনির্মিত পিচ ঢালা পথে ভাঙন দেখা দেয়। বলা যায় ধসে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভের সঙ্গে রাস্তায় চলাচল করছেন। কারণ, দীর্ঘ দিন এই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য অবস্থায় ছিলো। নতুন করে প্রচুর টাকা ব্যয়ে একটি ভালো রাস্তা পাবে, এমন আশা নিয়েই দিন গণনা শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দরা। কিন্তু মানুষগুলোর কাঙ্খিত প্রত্যাশা অপূরণই থেকে গেলে।
পাথরঘাটা এলজিইডির কর্মকর্তা বলছেন, সদ্য নির্মিত এ রাস্তাটি এখনও হ্যান্ডওভার করেনি ঠিকাদার।
পাথরঘাটা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সূত্রের, সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার দেওয়া হয়। এলজিইডির এই কাজটি করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা।
সড়কটির কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের চাপে স্তানীয়রা অভিযোগ মাটি চাপা পড়ে। আর তাদের এই অনিয়মের কারণে এখন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের।
অভিযোগ, রাস্তার কাজ করার সময় নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। পরে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদেও অভিযোগ এর আগেও নিম্নমানের খোয়া ও বালু দিয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণের ফলে বেশিদিন রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ভেঙ্গে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য পড়ে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাস্তাটি নতুন করে তৈরি হতে দেখে অনেকেই ভেবেছিল অচিরেই তাদের কষ্টের দিন শেষ। কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে রাস্তার দুইপাশ ভেঙ্গে গেছে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গণমুক্তিকে বলেন, রাস্তাটি নির্মাণকালে নিম্নমানের খোয়া-ইট ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে এলজিআরডির স্থানীয় প্রকৌশলী, থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বার বার অবহিত করেও লাভ হয়নি। যার পরিণতি সরকারের কোটি কোটি টাকার গচ্ছা। এটি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।
নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার , ছবি আলমগীর হোসেন চেয়ারম্যান পাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ
সড়ক নির্মাণের সময় অভিযোগের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলাম মৃধা কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন শিডিউল মেনেই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ ভেঙে ৯ যাত্রী নিহত হন। সেই ব্রিজটিও এই সাব-কন্টাক্টর শহিদুল ইসলাম মৃধা করে নির্মাণ করেছিলেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা এলজিডির উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এখনও কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। তবে ঠিকাদার রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি না দেওয়ায় দুইপাশ ভেঙে গেছে।
তিনি আরও জানান, রাস্তা হ্যান্ডওভারের আগ পর্যন্ত রাস্তার সব দায়ভার ঠিকাদারের। তারা রাস্তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা জানান, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রকৌশলীকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।