৮ বছরেও নির্মান হয়নি নড়িয়া উড়াল সেতু
- আপডেট সময় : ১৬ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ ৮ বছরের অধিক সময় পার হলেও নির্মান সম্পূর্ণ হয়নি শরীয়তপুরের নড়িয়ার কীর্তি নাশা নদীর ভাষাসৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা সেতুর কাজ। দফায দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ালেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৫ ভাগ। তবে এতদিন জিমেতালে কাজ চললেও গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকেই পালাতক রয়েছে সেতুর নির্মান কাজের ঠিকাদার। ফলে বর্তমানে ১ বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে সেতুর নির্মান কাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা। এতে ৮ বছর ধরেই চরম দুর্ভোগে নড়িয়া জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলাকে রাজধানী ঢাকার সাথে জাজিরা উপজেলা শহর ও স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক পথে যুক্ত করেছিল নড়িযার কীর্তি নাশা নদীর এই ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা সেতু। ২০১৬ সালে সেতুর পূর্বপাশের ষংযোগ সড়ক নদী গর্ভে বিলিন হলে এবং সেতুটি পুরাতন ও ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় সেতুটি অপসরণ করে নতুন সেতু নির্মানে উদ্যোগ নেয় সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
প্রকল্প গ্রহনরকরে কার্যাদেশ সম্পূর্ণ করে নাভানা কনেক্ট্রাকসন নামে ছিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি নতুন সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয়।
পরবর্তিতে সেতুর নকশা পরিবর্তণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তণ করাসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে থাকে সেতুর নির্মান কাজ। বর্তমানে যেন নির্মানকাজ মুখ থুবরে পড়েছে।৩২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নদীর মাঝে সেতুর মুল আংশের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। কাজ ফেলে রাখায় মরিচা ধরেছে লাহায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে নির্মাণ সামগ্রী। এই আবস্থায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামীলীগ করায পালাতক রয়েছে ঠিকাদার। সেতুর নির্মান বন্ধ হওয়ায ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সেতুর নির্মান কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করার দাবি চরম দুর্ভোগে থাকা স্থানীয়দের। সেতুটি নির্মান না হওয়ায় ৮ বছরের অধিক সময় ধরেই চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এই রুটে যাতায়াতকারীরা। মোক্তারের চরের বাসিন্দা সাংবাদিক কবির উজ্জামান জানান, নতুন ব্রীজি তৈরীর নামে পুরাদন ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলায় মানুষের দুর্ভোগ চমরে রয়েছে। প্রায় তিনবছর ধরে নদীটি পারাপারে নৌকা টলারের বিকল্প নেই কিছুই নেই। ইতিমধ্যেই নৌকাডুবির কয়কটি ঘটনাও ঘটেছে। মানুষের পায়ে হাটার জন্য কোটি টাকা খরচ করে একটি ফুট ওভার ব্রীজ নির্মান করা অবস্থায় ব্রীজটি ২ দফায় নদীতে ভেঙ্গে পড়ে বলগেটের ধাক্কায়। অল্পতে রক্ষাপায় মানুষের জীবন। বর্তমানে নদীতে পানি কম এঞন যদি ব্রীজটি দ্রুত নির্মানের কাজ শুরু না করা হয় তাহলে ব্রীজ নির্মান করা জটিলতায় পড়বে। নড়িয়া বাজারের বনিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বেপারী বলেন ব্রীজ না থাকায নড়িয়া বাজারের ব্যবসা বানিজ্য মারাক্তক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়িরা ক্রেতার অভাবে রয়েছে। পুজি ভেঙ্গে খাচ্ছেন তারা। লোকসান গুনে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে মানুষ । ঢাকা থেকে সরাসরি মালামাল নিয়ে নড়িয়া বাজারা আসা যাচ্ছে না। মালামালের ক্রয়মূল্য যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে। নড়িয়া বাজারের প্রায় ২ হাজার ব্যবসায়ী পড়েছে বিপাকে। ব্যবসায়ীদের বাচাতে হলে ব্রীজটি দ্রুত নির্মান সম্পূর্ণ করা অতি প্রয়োজন।
নদী পাড়াপাড়ে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুকি নিয়ে টলার নৌকায় কীর্তি নাশা নদী পারাপার হচ্ছে মানুষ। ঝুকি নিয়ে উত্তাল নদী পারাপারে নৌকাতেই ভরসা লাখো মানুষের। যাতায়াতের ভোগান্তিতে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে নদীর পশ্চিম প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। নড়িয়া সরকারী কলেজ, নড়িয়া বিহারী লাল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও নড়িয়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয়সহ কয়েকটি মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে দুর্ভোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীরা জানায় টলারে জীবনের ঝুকি নিয়েই আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া আমাদের দুর্ভোগ বহুগুনে বেড়ে যায়।
এদিকে পদ্মা সেতু থাকার পরেও সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়ার মানুষ। কৃষিপর্ণ বাজার জাত সহ ব্যবসা বানিজ্যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে নিঁস্ব হচ্ছেন অনেকেই।
স্থানীয সরকার প্রকৌশল বিভাগের নড়িয়া উপজেলা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ মেহেদি হাসান জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কহিনুর এন্টার প্রাইজ সেতুর একটি পিয়ার ও পাইলের কাজ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং ৫ আগষ্টের পরে পালাতক রয়েছে বিধায় তার সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। নতুন ভাবে টেন্ডার দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে সেতুর কাজ করতে হবে। সেতু নির্মানে ধীরগতিতে স্থানীয়দের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বিকার করে, তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ দ্রুত করার আশ্বাস দেন।
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি এর শরীয়তপুর জেলা কর্মকর্তা প্রকৌশলী এস এম রফিউল ইসলাম,
জানান, সেতুটি নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কহিনুর এন্টার প্রাইজ এর অবহেলা ও গাফলতিতে সেতুর নির্মান কাজ যথাসময়ে সম্পূর্ণ হয়নি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর তার সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। নতুনভাবে সেতুর নির্মান কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ করা হচ্ছে। যতটা সম্ভব দ্রুত সম্ভব নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নির্মান কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
২০১৭ সালে ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা সেতুর নির্মান কাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা যা বার বার ঠিকাদার পরিবর্তন ও সেতুর নকশা পরিবর্তণ করে সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করায় সর্বশেষে ২০২৪ সালে এসে ব্যয় ধরা হয় দ্বিগুনের চেয়ে বিশি ২৮ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ।
আর ফুট ওভার ব্রীজের নির্মান য্যয় ধরা হয় ১ কোটি টাকা যা নদী গর্ভেই বিলিন হয়ে গেছে। ব্রীজটি দ্রুত নির্মিত হলে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার বড় একটা অংশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম হবে ।


















