ঢাকা ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জাকসুতে ৪০ ঘণ্টার নাটকীয়তা Logo কাশিয়ানীতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার Logo মহেশখালীতে হত্যা চেষ্টা ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ৭ আসামি গ্রেপ্তার Logo ইসলামপুরে মিথ্যাচার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo সালথা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নাহিদ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল Logo কালীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo রুপগঞ্জে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড Logo বাগেরহাটে বিআরটিসি গাড়ির অবৈধ কাউন্টার ও মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন, করিমন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo জামালপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বড়াইগ্রাম শাখা অফিস শুভ উদ্বোধন

জাকসুতে ৪০ ঘণ্টার নাটকীয়তা

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তিন দশক পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শেষ হলো নানা নাটকীয়তা, বিতর্ক এবং অভিযোগের মধ্যে দিয়ে। ভোট শুনতে সময় লাগল ৪০ ঘন্টার বেশি সময়। বেলা আড়াইটার দিকে গণনা শেষ হওয়ার পর, গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা শুরু করেন কমিশনের সদস্যসচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও জিএস পদে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম এবং এজিএস (ছাত্র) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (ছাত্রী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে শীর্ষ ৪টি পদের মধ্যে ৩টিসহ মোট ২৫টি মধ্যে ২১ টি পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।

অন্য পদগুলোতে নির্বাচিতরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), সাংস্কৃতিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), নাট্য সম্পাদক মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ক্রীড়া সম্পাদক-মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), স্বাস্হ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল) এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)। এছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে ৩ জন- নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান, নুসরাত জাহান ইমা এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে ৩ জন মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা, মো. আলী চিশতী নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী সদস্যরা সবাই শিবির সমর্থিত প্যানেলের।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে একযোগে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৯১৯ জন। নির্বাচনে মোট ৮ হাজার ১৬টি ভোট পড়েছে। পরে হলের কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং রাত ১০টার কিছু পর শুরু হয় ভোট গণনা। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত টানা ভোট গণনার পরে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা বন্ধ করে জরুরি বৈঠক ডাকেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুনরায় ভোট গণনা শুরু করে। এ সময় নির্বাচন কমিশন থেকে শুক্রবার রাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরে দুই দফায় আবার সময় বাড়ানোর পর শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গণনা শেষ হয়। ৮ হাজার ১৬টি ভোট গুনতে সময় লেগেছে ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময়।

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথিকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। জাকসু নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানায় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল। এর আগে বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে আয়োজিত আরেক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না বলে অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম।

নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার আগেই তিন শিক্ষক বিভিন্ন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। তারা হলেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের দায় স্বীকার করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাবি শাখার সভাপতি। নির্বাচন কমিশনের আরেক সদস্য ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধাও পদত্যাগ করেছেন। শনিবার দুপুর ২টার দিকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনায় অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিনি প্রীতিলতা হলে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি বা জালভোটের মতো কোনো ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদি কেউ কারচুপি বা জালভোট প্রমাণ করতে পারে, আমি পদত্যাগ করব, এমনকি আমার পেনশনের টাকাও নেব না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেন, যারা নির্বাচন বর্জন করেছেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। কারো ইচ্ছে হলে বর্জন করবেন, আবার কারো ইচ্ছে হলে গ্রহণ করবেন। এটি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারের পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোনো দাপ্তরিক পদত্যাগপত্র আসেনি। তাই এ বিষয়ে আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই।

জাবির ২১ হলে নির্বাচিত হলেন যারা: আলবেরুনী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত আহমেদ শাকিল। জিএস হয়েছেন মুনতাসির বিল্লাহ খান। এজিএস সাদমান হাসান খান। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন বুবলী আহমেদ (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস হয়েছেন সুমাইয়া খানম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা), এজিএস প্রার্থী নেই।  ১০ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আসিফ মিয়া। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন নাদিম মাহমুদ। ১৫ নং (ছাত্রী) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শারমীন খাতুন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস মেহনাজ মোহনা। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহানা আক্তার। মীর মশাররফ হোসেন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন খালেদ জুবায়ের। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহরিয়ার নাজিম। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরাফাত হোসেন। মওলানা ভাসানী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল হাই স্বপন। জিএস হৃদয় পোদ্দার। এজিএস রাকিব হাসান। শহীদ সালাম-বরকত হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মারুফ হোসেন। জিএস মাসুদ রানা, এজিএস আবরার আজিম ভুঁইয়া। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন জিএমএম রায়হান কবীর। জিএস আবরার শাহরিয়ার। এজিএস রিপন মন্ডল (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রাকিবুল ইসলাম। জিএস আলী আহমেদ। এজিএস সামিন ইয়াসির। ২১ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ইবনে শিহাব। জিএস ওলিউল্লাহ মাহাদী। এজিএস তুষার আহমেদ। শহীদ রফিক-জব্বার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদি হাসান। জিএস শরিফুল ইসলাম ও এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরিফুল ইসলাম।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জাকসুতে ৪০ ঘণ্টার নাটকীয়তা

আপডেট সময় :

তিন দশক পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শেষ হলো নানা নাটকীয়তা, বিতর্ক এবং অভিযোগের মধ্যে দিয়ে। ভোট শুনতে সময় লাগল ৪০ ঘন্টার বেশি সময়। বেলা আড়াইটার দিকে গণনা শেষ হওয়ার পর, গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা শুরু করেন কমিশনের সদস্যসচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও জিএস পদে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম এবং এজিএস (ছাত্র) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (ছাত্রী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে শীর্ষ ৪টি পদের মধ্যে ৩টিসহ মোট ২৫টি মধ্যে ২১ টি পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।

অন্য পদগুলোতে নির্বাচিতরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), সাংস্কৃতিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), নাট্য সম্পাদক মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ক্রীড়া সম্পাদক-মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), স্বাস্হ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল) এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)। এছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে ৩ জন- নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান, নুসরাত জাহান ইমা এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে ৩ জন মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা, মো. আলী চিশতী নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী সদস্যরা সবাই শিবির সমর্থিত প্যানেলের।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে একযোগে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৯১৯ জন। নির্বাচনে মোট ৮ হাজার ১৬টি ভোট পড়েছে। পরে হলের কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং রাত ১০টার কিছু পর শুরু হয় ভোট গণনা। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত টানা ভোট গণনার পরে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা বন্ধ করে জরুরি বৈঠক ডাকেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুনরায় ভোট গণনা শুরু করে। এ সময় নির্বাচন কমিশন থেকে শুক্রবার রাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরে দুই দফায় আবার সময় বাড়ানোর পর শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গণনা শেষ হয়। ৮ হাজার ১৬টি ভোট গুনতে সময় লেগেছে ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময়।

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথিকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। জাকসু নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানায় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল। এর আগে বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে আয়োজিত আরেক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না বলে অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম।

নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার আগেই তিন শিক্ষক বিভিন্ন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। তারা হলেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের দায় স্বীকার করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাবি শাখার সভাপতি। নির্বাচন কমিশনের আরেক সদস্য ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধাও পদত্যাগ করেছেন। শনিবার দুপুর ২টার দিকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনায় অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিনি প্রীতিলতা হলে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি বা জালভোটের মতো কোনো ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদি কেউ কারচুপি বা জালভোট প্রমাণ করতে পারে, আমি পদত্যাগ করব, এমনকি আমার পেনশনের টাকাও নেব না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেন, যারা নির্বাচন বর্জন করেছেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। কারো ইচ্ছে হলে বর্জন করবেন, আবার কারো ইচ্ছে হলে গ্রহণ করবেন। এটি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারের পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোনো দাপ্তরিক পদত্যাগপত্র আসেনি। তাই এ বিষয়ে আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই।

জাবির ২১ হলে নির্বাচিত হলেন যারা: আলবেরুনী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত আহমেদ শাকিল। জিএস হয়েছেন মুনতাসির বিল্লাহ খান। এজিএস সাদমান হাসান খান। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন বুবলী আহমেদ (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস হয়েছেন সুমাইয়া খানম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা), এজিএস প্রার্থী নেই।  ১০ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আসিফ মিয়া। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন নাদিম মাহমুদ। ১৫ নং (ছাত্রী) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শারমীন খাতুন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস মেহনাজ মোহনা। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহানা আক্তার। মীর মশাররফ হোসেন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন খালেদ জুবায়ের। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহরিয়ার নাজিম। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরাফাত হোসেন। মওলানা ভাসানী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল হাই স্বপন। জিএস হৃদয় পোদ্দার। এজিএস রাকিব হাসান। শহীদ সালাম-বরকত হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মারুফ হোসেন। জিএস মাসুদ রানা, এজিএস আবরার আজিম ভুঁইয়া। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন জিএমএম রায়হান কবীর। জিএস আবরার শাহরিয়ার। এজিএস রিপন মন্ডল (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রাকিবুল ইসলাম। জিএস আলী আহমেদ। এজিএস সামিন ইয়াসির। ২১ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ইবনে শিহাব। জিএস ওলিউল্লাহ মাহাদী। এজিএস তুষার আহমেদ। শহীদ রফিক-জব্বার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদি হাসান। জিএস শরিফুল ইসলাম ও এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরিফুল ইসলাম।