ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বান্দরবানে জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন Logo জয়পুরহাটে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ডালপালা ছাঁটাই স্থগিত করেছে নেসকো Logo গাইবান্ধা সদর আসনে মাঠ-ময়দানে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর Logo কোম্পানীগঞ্জে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী মাহত আমিন গ্রেপ্তার Logo জনগণই বিএনপির শক্তি-বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম Logo আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানো জুয়েল মিয়ার পাশে কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটি Logo জুড়ীতে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা Logo স্বতন্ত্র নার্সিং প্রশাসন রক্ষার দাবিতে কুড়িগ্রামে নার্সদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সংগ্রাম চলবেই

শ্যামনগরে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে বিয়ের বাহন পালকি

মোঃ হাবিবুল্যাহ বেলালী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৫৩৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কালের বিবর্তনে বিয়ের বাহন পালকি এখন শুধুই ইতিহাস। পালকি বর কনে বহনের একটি প্রাচীন বাহন। এই বাহনে ১ বা ২ জন যাত্রী নিয়ে ২, ৪ বা ৮ জন বাহক এটিকে কাঁধে তুলে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত। পালকি শব্দটি সংস্কৃত পল্যঙ্ক বা পর্যঙ্ক থেকে উদ্ভূত। বাংলায় এটি পালকি নামে পরিচিত। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এবং পরবর্তী সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতাযাতের অন্যতম বাহন ছিল পালকি। আধুনিক যানবাহন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে অভিজাত শ্রেণির লোকেরা পালকিতে চড়েই যাতায়াত করতেন। উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়েতে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য পালকি ব্যবহারের প্রথা চালু ছিল। যা এখন দেখা যায় না বললে চলে। কাশিমাড়ী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধা মিনা খাতুন জানান, ২০ বছর বয়সে পালকিতে চড়ে বাপের বাড়ী ছেড়ে স্বামীর বাড়ীতে এসেছি। বয়স হয়ে গেছে এখন মনে পরে সেই দিনের কথা। গ্রামে বিয়ে হলেই বর কনে কে পালকিতে করে গান গাইতে গাইতে নিয়ে আসতো দেখে খুব আনন্দ পেতাম এখন আর পালকি দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য সব হারিয়ে যাচ্ছে।

আটুলিয়া গ্রামের পালকি চালক বিষনু মন্ডল বলেন, আমাদের বাপ দাদারা প্রাচীন কাল থেকে পালকি দিয়ে বিবাহের সময় বর-কনেকে বহন করতেন। এখন আর আগের মতো বিবাহ অনুষ্ঠানে আমাদেরকে ডাকা হয়না। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় আমাদের। মাসে দ্ইু-একটা বিবাহে আমাদের ডাক পরে। যা পাই তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে।
পালকি বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোট ও সাধারণ পালকি দুজনে বহন করে। সবচেয়ে বড় পালকি বহন করে চার থেকে আটজন পালকি বাহক। পালকি বাহকদের বলা হয় বেহারা বা কাহার। হাড়ি, মাল, দুলে, বাগদি, বাউড়ি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক পালকি বহন করে। পালকি বহনের সময় তারা বিশেষ ছন্দে গান গায়। তাদের চলার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গানের তালও পরিবর্তিত হয়। কাঠমিস্ত্রীরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, প্রবৃতি কাঠ দিয়েও পালকি তৈরি করে।

বটগাছের বড় ঝুরি দিয়ে তৈরি হয় পালকির বাঁট বা বহন করার দন্ড। এর দুদিকে দুটি দরজা থাকে। কোন কোনটিতে জানালাও থাকে। পালকির বাইরের দিকে আলপনা আঁকা থাকে। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি আসন ও একটি টেবিল থাকে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে স্টিমার ও রেলগাড়ি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে থাকে। ক্রমশ সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি এবং পশুচালিত যান চালু হলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত প্রসার, সড়ক ও নদীপথে মোটর ও অন্যান্য যানের চলাচল এবং প্যাডেল চালিত রিকশা জনপ্রিয় হওয়ার ফলে পালকির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পালকি বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই পরিচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শ্যামনগরে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে বিয়ের বাহন পালকি

আপডেট সময় :

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কালের বিবর্তনে বিয়ের বাহন পালকি এখন শুধুই ইতিহাস। পালকি বর কনে বহনের একটি প্রাচীন বাহন। এই বাহনে ১ বা ২ জন যাত্রী নিয়ে ২, ৪ বা ৮ জন বাহক এটিকে কাঁধে তুলে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত। পালকি শব্দটি সংস্কৃত পল্যঙ্ক বা পর্যঙ্ক থেকে উদ্ভূত। বাংলায় এটি পালকি নামে পরিচিত। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এবং পরবর্তী সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতাযাতের অন্যতম বাহন ছিল পালকি। আধুনিক যানবাহন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে অভিজাত শ্রেণির লোকেরা পালকিতে চড়েই যাতায়াত করতেন। উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়েতে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য পালকি ব্যবহারের প্রথা চালু ছিল। যা এখন দেখা যায় না বললে চলে। কাশিমাড়ী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধা মিনা খাতুন জানান, ২০ বছর বয়সে পালকিতে চড়ে বাপের বাড়ী ছেড়ে স্বামীর বাড়ীতে এসেছি। বয়স হয়ে গেছে এখন মনে পরে সেই দিনের কথা। গ্রামে বিয়ে হলেই বর কনে কে পালকিতে করে গান গাইতে গাইতে নিয়ে আসতো দেখে খুব আনন্দ পেতাম এখন আর পালকি দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য সব হারিয়ে যাচ্ছে।

আটুলিয়া গ্রামের পালকি চালক বিষনু মন্ডল বলেন, আমাদের বাপ দাদারা প্রাচীন কাল থেকে পালকি দিয়ে বিবাহের সময় বর-কনেকে বহন করতেন। এখন আর আগের মতো বিবাহ অনুষ্ঠানে আমাদেরকে ডাকা হয়না। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় আমাদের। মাসে দ্ইু-একটা বিবাহে আমাদের ডাক পরে। যা পাই তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে।
পালকি বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোট ও সাধারণ পালকি দুজনে বহন করে। সবচেয়ে বড় পালকি বহন করে চার থেকে আটজন পালকি বাহক। পালকি বাহকদের বলা হয় বেহারা বা কাহার। হাড়ি, মাল, দুলে, বাগদি, বাউড়ি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক পালকি বহন করে। পালকি বহনের সময় তারা বিশেষ ছন্দে গান গায়। তাদের চলার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গানের তালও পরিবর্তিত হয়। কাঠমিস্ত্রীরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, প্রবৃতি কাঠ দিয়েও পালকি তৈরি করে।

বটগাছের বড় ঝুরি দিয়ে তৈরি হয় পালকির বাঁট বা বহন করার দন্ড। এর দুদিকে দুটি দরজা থাকে। কোন কোনটিতে জানালাও থাকে। পালকির বাইরের দিকে আলপনা আঁকা থাকে। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি আসন ও একটি টেবিল থাকে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে স্টিমার ও রেলগাড়ি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে থাকে। ক্রমশ সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি এবং পশুচালিত যান চালু হলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত প্রসার, সড়ক ও নদীপথে মোটর ও অন্যান্য যানের চলাচল এবং প্যাডেল চালিত রিকশা জনপ্রিয় হওয়ার ফলে পালকির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পালকি বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই পরিচিত।