ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

কমেনি বেকারত্ব উল্টো বেড়েছে

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ১২:০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ৭৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 * সংবাদপত্রে আগের মতো নেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি
* সরকারি ও বেসরকারি খাতে নিয়োগে ধীরগতি
* এক বছরে বেকারত্বের বেড়েছে ৬%
* কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন ৭২%
* বেকারের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

 

একটি স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে পুলিশের বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেকার উচ্চশিক্ষিতদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত। মূলত বেকারত্বই ছিল গত বছরের ৫ আগস্টের প্রতিবাদের প্রধান কারণ। কিন্তু ৫ আগস্ট বিপ্লবের ছয় মাস পর অনেকেই বলছেন, চাকরি খুঁজে পাওয়া যেন প্রতিবাদের ব্যারিকেড সামলানোর চেয়েও কঠিন। বিপ্লবের পর বেকার সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরও প্রকট হয়েছে। চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে প্রতিবছর বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছেই। চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়ন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে ট্যানেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাজধানীতে অসংখ্য ফ্লাইওভার গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র বাড়েনি। গত কয়েক বছরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়নি। ফলে প্রতিবছর পাস করে ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেউ বিদেশ চলে যাচ্ছেন; কেউবা বাবা-মায়ের অভিশপ্ত সন্তান হয়ে ধুকেধুকে মরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে চাকরির বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে যা তার আগের বছরে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। বলা চলে , বেকারত্বের সংখ্যা ছয় শতাংশ বেড়েছে। এক জরীপে দেখা যায়, দেশে কাজ না থাকায় কর্মক্ষম মানুষের ৭২ শতাংশই কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন। কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমানোর হার ৭১ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি (৪৫ শতাংশ) যাচ্ছে আরব দেশগুলোতে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যাচ্ছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ। কুয়েত যাচ্ছে ৪ দশমিক ১৬, সিঙ্গাপুর ৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, ভারতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইরাকে ১ শতাংশ মানুষ বৈধ পথে যাচ্ছেন। চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, যদিও ড. ইউনূস তাঁর মন্ত্রিপরিষদে ছাত্রনেতাদের রেখেছেন, তবে আমরা মনে করি আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনে থাকলেও, আমাদের কণ্ঠস্বর তারা শুনতে পাচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে আমি অনিশ্চিত।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করা সন্তান তার বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তিনি জানান, আমি কর্পোরেট চাকরি, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যে কাজ পাচ্ছি সেই কাজই করছি শুধুমাত্র আমার ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য’। তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্রে এখন তেমন কোনো চাকরির সংবাদ পাওয়া যায় না। এখন যেকোনো কাজই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধুমাত্র একটি চাকরি চাই।

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কর সংগ্রহ করে সরকার জনখাতে বিনিয়োগ করবে। এতে বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আরও রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করা এই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, কারণ আগের সরকার অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে গিয়েছিল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ‘অত্যন্ত কঠিন’ যা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনলাইন চাকরির প্ল্যাটফর্ম বিডিজবসের প্রধান ফাহিম মাশরুর বলেন, সরকারি খাত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ গ্রাজুয়েট নিয়োগ করতে পারে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। আর বেসরকারি খাত চাকরি দিতে পারে ৮৫ শতাংশ গ্রাজুয়েটকে। তবে সেখানেও আশার আলো কম। ৫ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগ ধীরগতিতে চলছে। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এতে তরুণদের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ প্রকল্প থাকতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কমেনি বেকারত্ব উল্টো বেড়েছে

আপডেট সময় : ১২:০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

 * সংবাদপত্রে আগের মতো নেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি
* সরকারি ও বেসরকারি খাতে নিয়োগে ধীরগতি
* এক বছরে বেকারত্বের বেড়েছে ৬%
* কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন ৭২%
* বেকারের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

 

একটি স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে পুলিশের বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেকার উচ্চশিক্ষিতদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত। মূলত বেকারত্বই ছিল গত বছরের ৫ আগস্টের প্রতিবাদের প্রধান কারণ। কিন্তু ৫ আগস্ট বিপ্লবের ছয় মাস পর অনেকেই বলছেন, চাকরি খুঁজে পাওয়া যেন প্রতিবাদের ব্যারিকেড সামলানোর চেয়েও কঠিন। বিপ্লবের পর বেকার সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরও প্রকট হয়েছে। চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে প্রতিবছর বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছেই। চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়ন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে ট্যানেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাজধানীতে অসংখ্য ফ্লাইওভার গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র বাড়েনি। গত কয়েক বছরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়নি। ফলে প্রতিবছর পাস করে ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেউ বিদেশ চলে যাচ্ছেন; কেউবা বাবা-মায়ের অভিশপ্ত সন্তান হয়ে ধুকেধুকে মরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে চাকরির বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে যা তার আগের বছরে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। বলা চলে , বেকারত্বের সংখ্যা ছয় শতাংশ বেড়েছে। এক জরীপে দেখা যায়, দেশে কাজ না থাকায় কর্মক্ষম মানুষের ৭২ শতাংশই কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন। কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমানোর হার ৭১ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি (৪৫ শতাংশ) যাচ্ছে আরব দেশগুলোতে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যাচ্ছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ। কুয়েত যাচ্ছে ৪ দশমিক ১৬, সিঙ্গাপুর ৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, ভারতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইরাকে ১ শতাংশ মানুষ বৈধ পথে যাচ্ছেন। চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, যদিও ড. ইউনূস তাঁর মন্ত্রিপরিষদে ছাত্রনেতাদের রেখেছেন, তবে আমরা মনে করি আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনে থাকলেও, আমাদের কণ্ঠস্বর তারা শুনতে পাচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে আমি অনিশ্চিত।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করা সন্তান তার বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তিনি জানান, আমি কর্পোরেট চাকরি, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যে কাজ পাচ্ছি সেই কাজই করছি শুধুমাত্র আমার ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য’। তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্রে এখন তেমন কোনো চাকরির সংবাদ পাওয়া যায় না। এখন যেকোনো কাজই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধুমাত্র একটি চাকরি চাই।

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কর সংগ্রহ করে সরকার জনখাতে বিনিয়োগ করবে। এতে বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আরও রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করা এই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, কারণ আগের সরকার অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে গিয়েছিল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ‘অত্যন্ত কঠিন’ যা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনলাইন চাকরির প্ল্যাটফর্ম বিডিজবসের প্রধান ফাহিম মাশরুর বলেন, সরকারি খাত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ গ্রাজুয়েট নিয়োগ করতে পারে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। আর বেসরকারি খাত চাকরি দিতে পারে ৮৫ শতাংশ গ্রাজুয়েটকে। তবে সেখানেও আশার আলো কম। ৫ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগ ধীরগতিতে চলছে। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এতে তরুণদের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ প্রকল্প থাকতে হবে।