মামা বাড়ির আবদার…
- আপডেট সময় : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
অটোরিকশা থেকে অটোপাশ, আনসার থেকে পুলিশ। বিসিএস থেকে বিডিআর কিংবা সাত কলেজ পৃথকীকরণ থেকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে যেভাবে পারছে দাবির পসরা নিয়ে বসছে রোজ। যাকে অনেকেই বলছেন, এযেন মামার বাড়ির আবদার। দাবি-দাওয়া আদায়ের এই মোক্ষম মৌসুমে যেনো কারো তর সইছে না। রাত পোহালে কে কোন দাবি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে তা জানা নেই অসহায় ঢাকাবাসীর।
দিনে রাতে প্রতি সময়ে দাবি আদায়ের মিছিলে যেন ক্লান্ত ঢাকার রাজপথ। যার তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে শাহবাগ। তবে সেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। যে যেখানে পারছে, সেখানেই বসে পড়ছে, যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবি-দাওয়ার পসরা নিয়ে। যাতে চরমভাবে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মানুষকে জিম্মি করে পথঘাট বন্ধ করা হলেও তাতে থোড়াই কেয়ার আন্দোলনকারীদের।
সাত কলেজের সমাধান শেষে নগরজীবন যখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদার নিয়ে ফের সরব হলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাঝে ক’দিন হালে পানি না পেলেও এবার চলাচলের পথ অবরোধ করে তারা নেমে পড়লেন আমরণ অনশনে। একটা কলেজকে হুট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার যথার্থতা এবং বাস্তবতা কতখানি তা নিয়ে তাদের ভাবনাইবা না কতখানি? তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের প্রশাসনের অসহযোগীতা এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কারণে কলেজের গেট থেকে তারা আজ রাজপথে। ওদিকে আবার গাজীপুরের ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
একদিন আগে রেলের রানিং স্টাফ আর ইবতেদায়ি শিক্ষকরা মোটামুটিভাবে আন্দোলনের ফসল ঘরে নিয়ে গেছেন। তাই চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরাও বসে থাকতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগ আমলে হারানো চাকরি এখনই ফেরত চাইছেন তারা। আর এ জন্য আটকে দিয়েছেন সচিবালয়ের সামনের রাস্তা। আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা জানান, গত বছরের আগস্টের ১৮ তারিখে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন তার। তবে পুলিশ সদরদপ্তর তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এছাড়া তাদের চাকরি বিভিন্ন কারণে চলে গেছে। যেখানে দ্বিমত করা হয়েছে সেখানেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ১৬ বছর মুখ বুজে থাকা বঞ্চিতদের সব মিছিল যেনো আছড়ে পড়ছে ৬ মাসের ইউনূস সরকারের ওপর। বলা হচ্ছে, এই ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে অন্তবর্তী সরকারকে।
নিজেদের সবটা ঢেলে দিয়ে একটি অন্তবর্তী সরকারকে দেশের দায়িত্ব দিলো যে আপামর ছাত্রজনতা, সেই তারাই আবার অল্প কয়দিনের সরকারের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে দাবি-দাওয়ার সীমাহীন বোঝা। এই প্যারাডক্স স্বতঃস্ফূর্ত নাকি ঔদাসিন্য, নাকি আরোপিত, সে প্রশ্নের উত্তর মেলবার আগেই হয়তো আগামীকাল দেখা মিলবে নতুন কয়েকটি দাবি-দাওয়ার আন্দোলন। পেশাজীবি ও সুশীল সমাজ বলছেন, অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজপথে আন্দোলন হচ্ছে। ঘটছে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, সংঘর্ষ, হতাহতের ঘটনা। যার প্রভাবে ভোগান্তিতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত, বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ঢাকাবাসী। বিশেষ করে ঘন ঘন অবরোধ, বিক্ষোভ, সংঘর্ষের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ায় তীব্র যানজটে জনভোগান্তি বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সবাইকে। নতুন করে গত দুই-তিন দিনে বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দুর্ভোগের মাত্রা চরমভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
অবশ্য সরকার বারবার বলছে, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে জনগণকে জিম্মি করে যেন আন্দোলন করা না হয়। কিন্তু তাদের আহ্বানে ভ্রুক্ষেপ করছেন না আন্দোলনকারীরা। সবার মধ্যে যেন ধারণা গড়ে উঠেছে, সড়ক অবরোধ করলেই দাবি আদায় সহজ হবে। আর আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সরকার বলছে, জানমালের ক্ষতি বাড়বে, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগ করছে না। বরং রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতারা এসব আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের উস্কানি দেখছেন। এসব আন্দোলনের পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের অন্য যে কোনো অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে। শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।