বিএনপির আগ্রহ নির্বাচনে জামায়াত সংস্কারে

- আপডেট সময় : ১২:৩২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
সংস্কারের মধ্যেই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে বারবার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এতদিন যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চাইলেও কিছুদিন ধরে বিএনপি চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে আসছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়নের পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। এদিকে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে অন্তত চারটি কমিশন সংবিধান, নির্বাচন, দুদক ও পুলিশ তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে। আরও দুটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই দুটি কমিশন হলো জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। বাকি সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব এ মাসের মাঝামাঝির মধ্যে পাওয়া যাবে।
আগামী সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এখনই বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে শুরু করেছে নির্বাচনের আগে সংস্কারকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া জামায়াতে ইসলামী। গত বছর অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নির্বাচনের আগে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছিলো দলটি। এমনকি এ নিয়ে তাদের এক সময়ের মিত্র ও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গেও তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। বেশি সংস্কার চাইলে আরও ছয় মাস সময় লাগবে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সবার আগে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার-এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্যই সবার আগে প্রযোজন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া আর নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের জনগণ দায়িত্ব দেবে, সংস্কারের কাজ তারাই শুরু করতে পারবে। তারেদ এটি শুরু করতেই হবে। তিনি বলেন, যারা আজকে সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই-সংস্কারের পক্ষে সবচেয়ে আগে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। প্রায় আড়াই বছর আগ থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে দলীয়ভাবে প্রক্রিয়া শুরু করে। এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। দেশের মানুষও সংস্কার চায়। তাই সংস্কারকে যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, দেশকে ও দেশের মানুষকে তত দ্রুত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কারের কথা বলে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া দেরি হয়, সংস্কার-সংস্কার করে আমরা সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি, তাহলে যেই স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিতভাবে এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তার ভিন্নতা থাকতেই পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো না হলে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। আগামী নির্বাচনে জোট নিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা যেটাই করি, যদি কারো সাথে আমাদের সমঝোতা হয় আমরা একটা জিনিস দেখব যে, ওই দলটা ক্লিন ইমেজের কিনা। “যাদের সাথে আমাদের সমঝোতা হবে তাদের দ্বারা তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা আমরা লজ্জিত হব না সেরকম দলকে আমরা পাশে পেতে চাইবো। তারাও আমাদের পাশে পেতে চাইলে আমরা রেসপন্স করব। আসলে এখনই বলা যাচ্ছে না কার সাথে আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে কার সাথে হবে না। এটার জন্য আমরা সবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি, জাতিও করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পট পরিবর্তনের পর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায় দেশের জনগণ। মৌলিক অধিকার, সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা হোক সেটাই তারা চান। নির্বাচন দ্রুত হোক। কেন না ১৫ বছর দেশের মানুষ নির্বাচন থেকে বঞ্চিত। এখন তারা ভোট দিতে চান। তিনি বলেন, কে নির্বাচিত হলো তা নিয়ে সমস্যা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা রকম প্রত্যাশা আছে মানুষের। কিন্তু সেরকম কোনো ইঙ্গিত এই সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলের সবাই নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে একমত। সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের কথা বলছে, তাহলে কি চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করবো? তাহলে তো জনগণ ভোট থেকে বঞ্চিত হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এর মতো নির্বাচন আর দেখতে চায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে নির্বাচন হতে হবে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রীয় অর্গানগুলো সংস্কার করে। ১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই হবে আগামী নির্বাচন। সেই সাথে যারা বিগত দেড় দশকে লুটপাট, খুন, দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে তাদের ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৫ আগস্টের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা হবে। জুডিশিয়াল ক্যু করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই জুডিশিয়াল ক্যু’র সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ কখনো মেনে নেবে না। আমরা সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতেই চলতে চাই। যারা কিছু কিছু সুবিধা নিচ্ছেন, তারা আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চাই, তা হবে সুষ্ঠুভাবে-সঠিকভাবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে চাই। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার জনগণের সকল অধিকার, বাক-স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মিডিয়ার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।
এমটি/ এএটি