ঢাকা ০৫:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

মনোহরগঞ্জে বন্ধের লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চলছে ইটভাটা

মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৫২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বন্ধের লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়ার ১২ ঘণ্টা না যেতেই প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আবারো ইট পোড়ানো শুরু করেছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মনিপুর এলাকায় মিজি ব্রিক্স নামে অবৈধ ইটভাটা। গত শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলা প্রশাসন লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ইটভাটায় অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর কারণে পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলেও মিডিয়ার কোনো খবর এমনকি প্রশাসনকেও পাত্তা দিচ্ছেনা আওয়ামী দোসর যুবলীগ ক্যাডার সাহাব উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ইটভাটা পাহারা দেয়ায় ভয়ে চুপ থাকতে হয় এলাকাবাসীকে। সূত্রে জানা যায় ইটভাটার প্রকৃত মালিক ছিলেন কমলপুর গ্রামের মৃত নুরুল্লা মিয়ার ছেলে প্রবাসী আবদুর রহমান। ২০১২ সালে দখল করে নেয় সাহাব উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান।

জানা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত কাঠ ও কয়লা পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মণ কাঠ ও কয়লা পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে একলাখ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিকসহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য শক্তি দিয়ে অধিক লাভজনক মারাত্মক এই ব্যবসা সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্থানীয়রা জানান, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যাসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে।অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় গত বছর ২১ মার্চ অভিযান চালিয়ে চুল্লি ভেঙে দিয়েছিলো। চুল্লি ভেঙে দেয়ার পরদিনই আবারো চালু করেছিলো ইটভাটাটি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে ২০১০ সালে কমলপুর গ্রামের আবদুর রহমান নামে এক প্রবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে ইটভাটাটি চালু করে। এর ২০১২ সালে ব্যবসায়িক পার্টনারদের সাথে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে আবদুর রহমানকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছাড়া করে। এরপর থেকে জিয়াউর রহমান, সাহাব উদ্দিন মিলে ভাটাটি পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু আবদুর রহমানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও গত ১২ বছরেও আর নবায়ন করেনি তারা। গত একযুগ ধরে অবৈধভাবেই চলছিলো ইটভাটাটি। এনিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননা।
স্থানীয় সূত্রে যায় উপজেলায় মিজি ব্রিক এর প্রকৃত মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মামলা চলমান রয়েছে, এবং একই এলাকার নুরুল্লা মিয়ার ছেলে মো: আব্দুর রহমান মমিন। ,আবদুর রহমান বলেন আমাকে আমার নিজ মালিকানা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী ও স্হানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

তবে সরজমিনে তদন্ত করে এবং ব্রিক ফিল্ডের কাগজ পত্র দেখে জানা যায় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সহ ফিল্ডর সকল কাগজ আবদুর রহমান মমিনের নামে, এমনকি ইনকাম টেক্স ২০২৪ সাল পর্যন্ত আবদুর রহমান এর নামে পরিশোধ করা।
প্রশাসন বন্ধ করার পরও কীভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহরিয়া ইসলাম বলেন আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন কীভাবে চলছে আমার জানা নেই।
লাল সাইনবোর্ড টাঙানোর সত্ত্বেও ইটভাটা বন্ধ না হওয়ায় তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মনোহরগঞ্জে বন্ধের লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চলছে ইটভাটা

আপডেট সময় : ০১:৫২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বন্ধের লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়ার ১২ ঘণ্টা না যেতেই প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আবারো ইট পোড়ানো শুরু করেছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মনিপুর এলাকায় মিজি ব্রিক্স নামে অবৈধ ইটভাটা। গত শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলা প্রশাসন লাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ইটভাটায় অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর কারণে পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলেও মিডিয়ার কোনো খবর এমনকি প্রশাসনকেও পাত্তা দিচ্ছেনা আওয়ামী দোসর যুবলীগ ক্যাডার সাহাব উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ইটভাটা পাহারা দেয়ায় ভয়ে চুপ থাকতে হয় এলাকাবাসীকে। সূত্রে জানা যায় ইটভাটার প্রকৃত মালিক ছিলেন কমলপুর গ্রামের মৃত নুরুল্লা মিয়ার ছেলে প্রবাসী আবদুর রহমান। ২০১২ সালে দখল করে নেয় সাহাব উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান।

জানা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত কাঠ ও কয়লা পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মণ কাঠ ও কয়লা পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে একলাখ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিকসহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য শক্তি দিয়ে অধিক লাভজনক মারাত্মক এই ব্যবসা সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্থানীয়রা জানান, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যাসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে।অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় গত বছর ২১ মার্চ অভিযান চালিয়ে চুল্লি ভেঙে দিয়েছিলো। চুল্লি ভেঙে দেয়ার পরদিনই আবারো চালু করেছিলো ইটভাটাটি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে ২০১০ সালে কমলপুর গ্রামের আবদুর রহমান নামে এক প্রবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে ইটভাটাটি চালু করে। এর ২০১২ সালে ব্যবসায়িক পার্টনারদের সাথে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে আবদুর রহমানকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছাড়া করে। এরপর থেকে জিয়াউর রহমান, সাহাব উদ্দিন মিলে ভাটাটি পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু আবদুর রহমানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও গত ১২ বছরেও আর নবায়ন করেনি তারা। গত একযুগ ধরে অবৈধভাবেই চলছিলো ইটভাটাটি। এনিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননা।
স্থানীয় সূত্রে যায় উপজেলায় মিজি ব্রিক এর প্রকৃত মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মামলা চলমান রয়েছে, এবং একই এলাকার নুরুল্লা মিয়ার ছেলে মো: আব্দুর রহমান মমিন। ,আবদুর রহমান বলেন আমাকে আমার নিজ মালিকানা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী ও স্হানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

তবে সরজমিনে তদন্ত করে এবং ব্রিক ফিল্ডের কাগজ পত্র দেখে জানা যায় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সহ ফিল্ডর সকল কাগজ আবদুর রহমান মমিনের নামে, এমনকি ইনকাম টেক্স ২০২৪ সাল পর্যন্ত আবদুর রহমান এর নামে পরিশোধ করা।
প্রশাসন বন্ধ করার পরও কীভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহরিয়া ইসলাম বলেন আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন কীভাবে চলছে আমার জানা নেই।
লাল সাইনবোর্ড টাঙানোর সত্ত্বেও ইটভাটা বন্ধ না হওয়ায় তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।