ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ত্রিশালে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই শতাধিক পেঁপে গাছ নিধনের অভিযোগ Logo দাগনভূঞায় সেতু আছে, সড়ক নেই। জনভোগান্তি চরমে Logo বাগেরহাটে জমি দখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে Logo নিয়ামতপুরে বিএনপির উঠান বৈঠক Logo পুষ্টির সচেতনতা বিষয়ক  প্রশিক্ষন কর্মশালা Logo শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ১৫ বছর পর চালু হলো ৩ কেবিন  Logo পাথরঘাটায় প্রবাসী স্ত্রীকে মারধর করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট, ১৮ লাখ চাঁদা দাবি  Logo নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ Logo মামলার বাদীকে ভয়ভীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo নাটোরে জুঁই হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম, দিল বৈষম্যছাত্র বিরোধী আন্দোলন

ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণে নানা আয়োজন

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রস্তুত রমনা বটমুল

  • দিন-রাত চলছে চারুকলা শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম

  • পুরোদমে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার ভিন্নমাত্রা

  • শেখ হাসিনার বিকৃত প্রতিকৃতি তৈরির প্রস্তুতি

  • নববর্ষ সামনে রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ১০ এপ্রিল : সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা

প্রতিবছরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ। চারুকলা অনুষদের বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে তৈরি করছেন নানা প্রতিকৃতি, পুতুল, পালকিসহ অন্যান্য বর্ণিল জিনিসপত্র। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনকে স্মরণীয় করতে এবছর চারুকলায় অন্যান্য প্রতিকৃতির সঙ্গে বানানো হচ্ছে শেখ হাসিনার বিকৃত প্রতিকৃতি। একদিকে শোভাযাত্রার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে, অন্যদিকে চলছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য জলরং, সরা চিত্র, মুখোশ, পুতুল তৈরি এবং বিক্রি। এর আয় থেকে তৈরি হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার বড় বড় শিল্পকর্ম। এ জন্য দিন-রাত বিরামহীনভাবে চলছে প্রস্তুতি।
এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরোনোকে বিদায় করে আসছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। এবার ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে অফিস আদালত খোলার এক সপ্তাহের মাথায় পহেলা বৈশাখের ছুটি পড়েছে। সারা দেশে তাই উৎসবের আমেজে চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতোই রাজধানীর রমনা বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করবে ছায়ানট। পাশাপাশি উদিচী নানা রকমের কর্মসূচী দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবে শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন। তবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এমনটাই বলেছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী।
জানা গেছে, ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা। এই অনুষ্ঠান ঘিরে এখন চলছে মঞ্চ তৈরিসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি। রমনা পার্ক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলের সীমারেখা টানা হচ্ছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে মূল মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হবে। বৈশাখের আয়োজন ঘিরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে গোটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আনছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অন্যদিকে ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে প্রায় দেড়শ শিল্পীকে নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মহড়া চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছর ব্যাপকভাবে বাংলা নববর্ষ পালন হবে। ফলে বিষয়টি সামনে রেখে এবার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেসব করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হবে কিনা সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানান, ‘পহেলা বৈশাখের আগের দিন মঞ্চে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ার অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএমপি। পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে। সেখানে চলছে প্রস্তুতি। বর্তমান বা সাবেক শিক্ষার্থীরা যে যখন সময় পাচ্ছেন, প্রাণের টানে ছুটে আসছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, ‘যখন শিক্ষার্থী ছিলাম খুব আগ্রহ নিয়ে কাজ করেছি। তখন দেখতাম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি উপলক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতেন। এই মিলনমেলায় সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়। এক আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করি সবাই।
চারুকলার ২৫তম ব্যাচের মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বায়ক সাদিত সাদমান রাহাত জানান, কাঠামোর পাশাপাশি এবার মুখোশ, বড় মুখোশ, গাজীর পটের দুটি চিত্র বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে থাকবে। এবারের শোভাযাত্রায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে মোটিফ ও কালারের মাধ্যমে। তবে ডিএমপির পক্ষথেকে বলা হয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা মিছিলে কেউ মুখোশ পড়বে না। ভুভুজেলা বাজানো যাবে না। পাশাপাশি কেউ লাঠিসোটা, দাতব্য পদার্থ নিয়ে মিছিলে অংশ গ্রহন করতে পারবেনা।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ। এ ছাড়া বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জোটের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হচ্ছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এটি উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী আশরাফ আকন্দ।
শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদের দল, স্পন্দনের অনিকের দল নৃত্য পরিবেশন করবে। আসমা আখতার লিজার নির্দেশনায় পথনাটক পরিবেশন করবে নট্টনন্দন। থাকবে বাউল গানের আসর। বাউল মমতাজ হাসি, দেলোয়ার বাউল, ভাওয়াইয়া শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, রহিমা, একক সংগীত-আবৃত্তি, দলীয় সংগীত-আবৃত্তি, শিশু সংগঠনের বর্ষবরণে অংশ নেওয়া দল ও শিল্পীদের চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলায় জেলায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এবার তাদের পহেলা বৈশাখের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি হবে যশোরে। এ ছাড়া খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, বরিশালে নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘ছায়ানটের বর্ষবরণ সফল করতে আমরাও সহযোগিতা করছি। বর্ষবরণে উদীচী কার্যালয়ে ঘরোয়াভাবে আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অংশগ্রন করছেন উদীচীর কর্মকর্তা সালিমা তমা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ষবরণ উদযাপনের আয়োজন চলছে। পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সদস্যরা সপরিবারে খেজুরের গুড়ের পায়েস, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা দিয়ে মিষ্টি মুখ করবেন। বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা, বায়োস্কোপসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নববর্ষ আয়োজনের নিরাপত্তা সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য। বর্ষবরণ প্রস্তুতির শুরু থেকেই এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের সব আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রমনা পার্কে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরাগুলোও আমরা মনিটরিং করব।
রোববার ঢাবির চারুকলা অনুষদে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখকে রাঙিয়ে তুলতে ছাত্র-শিক্ষকদের তুমুল ব্যস্ততা ছায়াঘেরা চারুকলায়। শিল্পী, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মগ্ন হয়ে কাজ করছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে। বাঁশ, বেত, কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাঘ, ঘোড়া, মাছসহ বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক। শোভাযাত্রায় বহন করা বিভিন্ন শৈল্পিক কাঠামো নির্মাণে বাঁশ-কাঠ ব্যবহার করছেন শিল্পীরা। হাতুড়ি-পেরেকের শব্দ চারদিকে। মগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আঁকায় উঠে আসছে বাংলার রূপ-ঐতিহ্য।
এবারও মাহবুব জামাল শামিমের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল, বিকাল, রাতে কাজ করছেন শিল্পীরা। দুদিনব্যাপী উদযাপিত হবে এবারের পহেলা বৈশাখ। এবারের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে— ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
বাঁশ-কাঠ দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক বানাচ্ছেন শিল্পীরা। তবে এ বছর অনুষদটির কোনও ব্যাচকে একচ্ছত্র দায়িত্ব না দেওয়ায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিত সেখানে কম বলে জানিয়েছেন চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ১১-১২ সেশনের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হলেও সবার উপস্থিতি উন্মুক্ত করা হয়েছে। কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ পুরোদমে চলছে। বাইরে আমাদের ছোট ছোট শিল্পকর্মগুলো বিক্রি হচ্ছে। আশা করি ১২ তারিখের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। এবার বেশি কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমাদের ছবিগুলো বিক্রি কম হয়েছে। গত রোববার ক্যাম্পাস খুলেছে আশা করি জমে উঠবে প্রস্তুতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণে নানা আয়োজন

আপডেট সময় : ১১:৪৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রস্তুত রমনা বটমুল

  • দিন-রাত চলছে চারুকলা শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম

  • পুরোদমে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার ভিন্নমাত্রা

  • শেখ হাসিনার বিকৃত প্রতিকৃতি তৈরির প্রস্তুতি

  • নববর্ষ সামনে রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ১০ এপ্রিল : সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা

প্রতিবছরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ। চারুকলা অনুষদের বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে তৈরি করছেন নানা প্রতিকৃতি, পুতুল, পালকিসহ অন্যান্য বর্ণিল জিনিসপত্র। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনকে স্মরণীয় করতে এবছর চারুকলায় অন্যান্য প্রতিকৃতির সঙ্গে বানানো হচ্ছে শেখ হাসিনার বিকৃত প্রতিকৃতি। একদিকে শোভাযাত্রার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে, অন্যদিকে চলছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য জলরং, সরা চিত্র, মুখোশ, পুতুল তৈরি এবং বিক্রি। এর আয় থেকে তৈরি হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার বড় বড় শিল্পকর্ম। এ জন্য দিন-রাত বিরামহীনভাবে চলছে প্রস্তুতি।
এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরোনোকে বিদায় করে আসছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। এবার ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে অফিস আদালত খোলার এক সপ্তাহের মাথায় পহেলা বৈশাখের ছুটি পড়েছে। সারা দেশে তাই উৎসবের আমেজে চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতোই রাজধানীর রমনা বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করবে ছায়ানট। পাশাপাশি উদিচী নানা রকমের কর্মসূচী দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবে শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন। তবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এমনটাই বলেছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী।
জানা গেছে, ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা। এই অনুষ্ঠান ঘিরে এখন চলছে মঞ্চ তৈরিসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি। রমনা পার্ক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলের সীমারেখা টানা হচ্ছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে মূল মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হবে। বৈশাখের আয়োজন ঘিরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে গোটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আনছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অন্যদিকে ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে প্রায় দেড়শ শিল্পীকে নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মহড়া চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছর ব্যাপকভাবে বাংলা নববর্ষ পালন হবে। ফলে বিষয়টি সামনে রেখে এবার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেসব করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হবে কিনা সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানান, ‘পহেলা বৈশাখের আগের দিন মঞ্চে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ার অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএমপি। পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে। সেখানে চলছে প্রস্তুতি। বর্তমান বা সাবেক শিক্ষার্থীরা যে যখন সময় পাচ্ছেন, প্রাণের টানে ছুটে আসছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, ‘যখন শিক্ষার্থী ছিলাম খুব আগ্রহ নিয়ে কাজ করেছি। তখন দেখতাম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি উপলক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতেন। এই মিলনমেলায় সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়। এক আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করি সবাই।
চারুকলার ২৫তম ব্যাচের মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বায়ক সাদিত সাদমান রাহাত জানান, কাঠামোর পাশাপাশি এবার মুখোশ, বড় মুখোশ, গাজীর পটের দুটি চিত্র বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে থাকবে। এবারের শোভাযাত্রায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে মোটিফ ও কালারের মাধ্যমে। তবে ডিএমপির পক্ষথেকে বলা হয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা মিছিলে কেউ মুখোশ পড়বে না। ভুভুজেলা বাজানো যাবে না। পাশাপাশি কেউ লাঠিসোটা, দাতব্য পদার্থ নিয়ে মিছিলে অংশ গ্রহন করতে পারবেনা।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ। এ ছাড়া বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জোটের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হচ্ছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এটি উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী আশরাফ আকন্দ।
শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদের দল, স্পন্দনের অনিকের দল নৃত্য পরিবেশন করবে। আসমা আখতার লিজার নির্দেশনায় পথনাটক পরিবেশন করবে নট্টনন্দন। থাকবে বাউল গানের আসর। বাউল মমতাজ হাসি, দেলোয়ার বাউল, ভাওয়াইয়া শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, রহিমা, একক সংগীত-আবৃত্তি, দলীয় সংগীত-আবৃত্তি, শিশু সংগঠনের বর্ষবরণে অংশ নেওয়া দল ও শিল্পীদের চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলায় জেলায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এবার তাদের পহেলা বৈশাখের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি হবে যশোরে। এ ছাড়া খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, বরিশালে নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘ছায়ানটের বর্ষবরণ সফল করতে আমরাও সহযোগিতা করছি। বর্ষবরণে উদীচী কার্যালয়ে ঘরোয়াভাবে আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অংশগ্রন করছেন উদীচীর কর্মকর্তা সালিমা তমা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ষবরণ উদযাপনের আয়োজন চলছে। পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সদস্যরা সপরিবারে খেজুরের গুড়ের পায়েস, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা দিয়ে মিষ্টি মুখ করবেন। বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা, বায়োস্কোপসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নববর্ষ আয়োজনের নিরাপত্তা সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য। বর্ষবরণ প্রস্তুতির শুরু থেকেই এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের সব আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রমনা পার্কে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরাগুলোও আমরা মনিটরিং করব।
রোববার ঢাবির চারুকলা অনুষদে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখকে রাঙিয়ে তুলতে ছাত্র-শিক্ষকদের তুমুল ব্যস্ততা ছায়াঘেরা চারুকলায়। শিল্পী, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মগ্ন হয়ে কাজ করছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে। বাঁশ, বেত, কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাঘ, ঘোড়া, মাছসহ বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক। শোভাযাত্রায় বহন করা বিভিন্ন শৈল্পিক কাঠামো নির্মাণে বাঁশ-কাঠ ব্যবহার করছেন শিল্পীরা। হাতুড়ি-পেরেকের শব্দ চারদিকে। মগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আঁকায় উঠে আসছে বাংলার রূপ-ঐতিহ্য।
এবারও মাহবুব জামাল শামিমের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল, বিকাল, রাতে কাজ করছেন শিল্পীরা। দুদিনব্যাপী উদযাপিত হবে এবারের পহেলা বৈশাখ। এবারের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে— ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
বাঁশ-কাঠ দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক বানাচ্ছেন শিল্পীরা। তবে এ বছর অনুষদটির কোনও ব্যাচকে একচ্ছত্র দায়িত্ব না দেওয়ায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিত সেখানে কম বলে জানিয়েছেন চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ১১-১২ সেশনের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হলেও সবার উপস্থিতি উন্মুক্ত করা হয়েছে। কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ পুরোদমে চলছে। বাইরে আমাদের ছোট ছোট শিল্পকর্মগুলো বিক্রি হচ্ছে। আশা করি ১২ তারিখের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। এবার বেশি কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমাদের ছবিগুলো বিক্রি কম হয়েছে। গত রোববার ক্যাম্পাস খুলেছে আশা করি জমে উঠবে প্রস্তুতি।