ঢাকা ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

 সেবা বঞ্চিত, এলাকার  হত- দরিদ্র সাধারণ জনগণ 

রামগতি-কমলনগরে ৪২ কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে  

জহির, রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) 
  • আপডেট সময় : ১২:৫৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় রামগতি ও কমলনগর দুটি উপজেলায় মোট ৪২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। রামগতিতে ২০ ও কমলনগরে ২২ টি।  কিন্তু নানা সংকটে ধুঁকছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। অধিকাংশ ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) অনিয়মিত যাতায়াতের কারণে দেখা দিয়েছে  সংকট। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুই উপজেলার প্রান্তিক অঞ্চলের হতদরিদ্র জনসাধারণ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জোরদার করা হচ্ছে মনিটরিং।
দেশের প্রান্তিক মানুষের দোঁরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া কথা। তবে অযত্ন-অবহেলা ও অনিয়মিত হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।কাগজে কলমে সবগুলো ক্লিনিকে সিএইচসিপি রয়েছেন। প্রতিটি ক্লিনিক সপ্তাহে ছয়দিন খোলা থাকার কথা এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি তিনদিন করে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার পরিবার পরিকল্পনা সহায়কের সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তদারকিতে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সম্পুর্ন উদাসীন।সুত্র জানায়, কখনো বেলা ১১টা কখনো দুপুরে নামকাওয়াস্তে খুলে বড়জোর ঘণ্টাখানেক খোলা রাখে আবার তালা ঝুলিয়ে চলে যান ।
এছাড়া অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকা, স্বাস্থ্যকর্মী ও সিএইচসিপিরা সময়মতো ক্লিনিকে না আসা, দিনের পর দিন অনুপস্থিতি, অপর্যাপ্ত ওষুধ ও সেবা না পাওয়ায় রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিকভাবে ব্লাড প্রেশার মেশিন (বিপি), গর্ভবতী নারীদের রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, প্যাথলজির প্রাথমিক কাজকর্ম করার মতো যন্ত্রপাতি, ওষুধের পরিমাণ ও প্রকারভেদে বাড়ানো এবং সার্বক্ষণিক একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট অথবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী, সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন রোগী দেখার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতার মিল অনেকটাই ক্ষীণ।সরেজমিনে দুপুর ১২ টা ৫ মিনিটে উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের চরবেদমা কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ।  ক্লিনিকের সিএইচসিপি ইয়াছমিন আক্তারের  মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা কমলনগর উপজেলার ২২ টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে স্থাপিত এসব ক্লিনিকগুলো এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, এসব ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে দুই তিন দিনের বেশি আসেন না। সকাল ১০-১১টায় এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান। সবসময় তালাবদ্ধ থাকে এসব ক্লিনিকগুলো।
স্থানীয় চর বেদমা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রহিম বলেন, সিএইচসিপিরা প্রতিদিন ঠিকমতো আসে  না,মাঝে মাঝে আসে। আসলেও দুপুরের আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।আজগর আলী বলেন,ক্লিনিকে তো সময়মতো লোক পাওয়া যায় না। ওষুধ নেই। মাঝে মধ্যে শুনি টাকা ছাড়া ঔষধ দেয়না। আরেক বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, দুপুর না হইতেই তো ক্লিনিক বন্ধ হইয়া যায়।এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামনা শীষ মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হবে। কোন প্রকার অনিয়ম অনুপস্থিতির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ  বলেন, মাঝেমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পরিদর্শনে গেলে অনুপস্থিতি পাওয়া যায়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। তিনি আরো জানান, ক্লিনিকগুলোকে গণমুখী করতে সরকারের পলিসি লেবেলে কাজ চলছে। গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

 সেবা বঞ্চিত, এলাকার  হত- দরিদ্র সাধারণ জনগণ 

রামগতি-কমলনগরে ৪২ কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে  

আপডেট সময় : ১২:৫৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় রামগতি ও কমলনগর দুটি উপজেলায় মোট ৪২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। রামগতিতে ২০ ও কমলনগরে ২২ টি।  কিন্তু নানা সংকটে ধুঁকছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। অধিকাংশ ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) অনিয়মিত যাতায়াতের কারণে দেখা দিয়েছে  সংকট। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুই উপজেলার প্রান্তিক অঞ্চলের হতদরিদ্র জনসাধারণ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জোরদার করা হচ্ছে মনিটরিং।
দেশের প্রান্তিক মানুষের দোঁরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া কথা। তবে অযত্ন-অবহেলা ও অনিয়মিত হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।কাগজে কলমে সবগুলো ক্লিনিকে সিএইচসিপি রয়েছেন। প্রতিটি ক্লিনিক সপ্তাহে ছয়দিন খোলা থাকার কথা এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি তিনদিন করে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার পরিবার পরিকল্পনা সহায়কের সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তদারকিতে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সম্পুর্ন উদাসীন।সুত্র জানায়, কখনো বেলা ১১টা কখনো দুপুরে নামকাওয়াস্তে খুলে বড়জোর ঘণ্টাখানেক খোলা রাখে আবার তালা ঝুলিয়ে চলে যান ।
এছাড়া অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকা, স্বাস্থ্যকর্মী ও সিএইচসিপিরা সময়মতো ক্লিনিকে না আসা, দিনের পর দিন অনুপস্থিতি, অপর্যাপ্ত ওষুধ ও সেবা না পাওয়ায় রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিকভাবে ব্লাড প্রেশার মেশিন (বিপি), গর্ভবতী নারীদের রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, প্যাথলজির প্রাথমিক কাজকর্ম করার মতো যন্ত্রপাতি, ওষুধের পরিমাণ ও প্রকারভেদে বাড়ানো এবং সার্বক্ষণিক একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট অথবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী, সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন রোগী দেখার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতার মিল অনেকটাই ক্ষীণ।সরেজমিনে দুপুর ১২ টা ৫ মিনিটে উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের চরবেদমা কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ।  ক্লিনিকের সিএইচসিপি ইয়াছমিন আক্তারের  মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা কমলনগর উপজেলার ২২ টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে স্থাপিত এসব ক্লিনিকগুলো এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, এসব ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে দুই তিন দিনের বেশি আসেন না। সকাল ১০-১১টায় এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান। সবসময় তালাবদ্ধ থাকে এসব ক্লিনিকগুলো।
স্থানীয় চর বেদমা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রহিম বলেন, সিএইচসিপিরা প্রতিদিন ঠিকমতো আসে  না,মাঝে মাঝে আসে। আসলেও দুপুরের আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।আজগর আলী বলেন,ক্লিনিকে তো সময়মতো লোক পাওয়া যায় না। ওষুধ নেই। মাঝে মধ্যে শুনি টাকা ছাড়া ঔষধ দেয়না। আরেক বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, দুপুর না হইতেই তো ক্লিনিক বন্ধ হইয়া যায়।এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামনা শীষ মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হবে। কোন প্রকার অনিয়ম অনুপস্থিতির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ  বলেন, মাঝেমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পরিদর্শনে গেলে অনুপস্থিতি পাওয়া যায়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। তিনি আরো জানান, ক্লিনিকগুলোকে গণমুখী করতে সরকারের পলিসি লেবেলে কাজ চলছে। গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা চলছে।