ঢাকা ০৬:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আধুনিক কেবিন ব্লক ও দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা উদ্বোধন Logo ঝিনাইদহে ১০ ও ১৬ মাসে হিফজ সম্পন্ন, দুই শিক্ষার্থী ওমরাহ হজে পাঠাবে মাদ্রাসা Logo গাইবান্ধা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. ময়নুল হাসান সাদিক Logo কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপির আস্থা লুৎফুর রহমান কাজল Logo উখিয়ায় শিশু ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা Logo মহেশপুরে মোটরসাইকেল ও আলমসাধুর সংঘর্ষে কলেজ ছাত্র নিহত Logo কেশবপুরে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ Logo যশোরে তরিকুল ইসলাম স্মরণে সাংবাদিক ইউনিয়নের দোয়া মাহফিল Logo সাদুল্লাপুরে হলুদক্ষেতে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ ঘটনায় যুবক গ্রেফতার

দাগনভূঞায় বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে

শাখাওয়াত হোসেন টিপু, দাগনভূঞা 
  • আপডেট সময় : ২৪৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
নিষিদ্ধ হলেও দেশে নোট—গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছেই। সৃজনশীল মেধা বিকাশ নিশ্চিতে বিগত ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। আর আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। তারপরেও সারা দেশের ন্যায় দাগনভূঞা  উপজেলার  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট উচ্চমূল্যের এসব সহায়ক ও গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবখানেই প্রায় সব শ্রেণিতে মূল বইয়ের সাথে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাইড বই প্রকাশ্যে লাইব্রেরীতে উচ্চ দামে বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেট লাখ-লাখ টাকার বাণিজ্য করছে। বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কালে শিক্ষকরা এসব নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং কোম্পানীর নাম সম্বলিত গাইড বইয়ের তালিকা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এনিয়ে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের বাকবিতন্ডার ঘটনা অহরহ ঘটেছে। জানা যায়, সহায়ক বা অনুশীলন ও অনুসন্ধানী নামে নিষিদ্ধ গাইড ও নোটবই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে এসব বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছেন। শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে জেলার বিভিন্ন এলাকার বইয়ের দোকানগুলোতে খোলামেলাভাবে
চলছে এসব বইয়ের রমরমা ব্যবসা। সন্তানের আবদার রক্ষায় গাইড ও নোটবই না কিনে দিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। কোন কোন অভিভাবক ধার-দেনা করেও বই কিনে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকার শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক বিকাশে নানা পদক্ষেপ নিলেও নিষিদ্ধ গাইড নির্ভর পাঠদানের কারণে এর সুফল পাচ্ছে না।
আইন অনুযায়ী, পাঠ্যপুস্তকের নোটবই প্রকাশনা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ। এ আইন উপেক্ষা করেই দাগনভূঞা বাজার সহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অহরহ নোটবই বিক্রি হচ্ছে। অনেকে কৌশলে গাইড-সহায়ক বই আকারে এই বই চালাচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এনসিটিবির অননুমোদিত বই পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা যাবে না। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলে পাঠ্যতালিকা (বুকলিস্ট) তৈরিতে নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১৯৮০ সালে আইন করে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোটবই মুদ্রণ, বিতরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করে। এছাড়া উচ্চ আদালতের এক রায়ে গাইড ও নোটবই মুদ্রণ ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করে এসব বই বিক্রি করলে সাজাসহ জরিমানারও বিধান রয়েছে।
জানা গেছে, বিগত বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঞ্জেরী-লেকচার কোম্পানীর একসেট গাইড বই এক হাজার ৩শ থেকে এক হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বেড়ে তিন  হাজার ২শ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এডভান্সড কোম্পানীর বই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার একশ টাকা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নতুন কারিকুলাম অনুসারে প্রকাশিত সরকারি বইয়ের কোন নোট গাইড ও সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন অনেকে। এদের কেউ কেউ নতুন কারিকুলাম বোঝার সুবিধার্থে সহায়ক গাইড কেনার পক্ষে মত দেন। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকাশনী কোম্পানি থেকে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ডোনার হিসেবে নিয়ে থাকে এটা সম্পূর্ণ সিক্রেট থাকে। আর এই টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেওয়া কারনে তাদেরকে  নিদিষ্ট কোম্পানির বই কিনতে বাধ্য করে। আর এই বাধ্য বাধকতার জন্য অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের গাইড বই কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা সুত্র মতে জানা যায়।
তবে বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওপেন সিক্রেট হলেও কোন শিক্ষক এ নিয়ে কথা  বলতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে নতুন কারিকুলামের বই পাঠদানের জন্য সরকার শিক্ষকদের প্রতি টিচার্স গাইড হস্তান্তর করেছেন। তাছাড়া ক্লাসের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে পিয়ার, পেয়ার ও এল্প ওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেটি অনুসরণ করলে ছাত্রদের বাড়তি অন্য কোন বই কিংবা গাইড কেনার প্রয়োজন নেই।
একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র বিভিন্ন  দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলার  প্রায় সবকটি স্কুলে ঢাকার কয়েকটি প্রকাশনীর গাইড ও সহায়ক বই তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি নাম উঠে এসেছে পাঞ্জেরী ও লেকচার প্রকাশনীর। কিছু কিছু স্কুলে লেকচার, অনুপম প্রকাশনী ও অ্যাডভান্সড পাবলিকেশনের বইও পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।
 দাগনভূঞা বেলাল শিক্ষা বিতান এর  স্বত্তাধিকারী, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির দাগনভূঞা শাখার সভাপতি  মোঃ বেলাল হোসেন  বলেন, নতুন কারীকুলাম অনুযায়ী এসব বইগুলোকে গাইড বলা যাবে না। সহায়ক বই বা অনুশীলন ও অনুসন্ধানী বলা যাবে। বিক্রির ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি বছর কম বিক্রি হলেও দাগনভূঞার  বিভিন্ন লাইব্রেরীতে আনুমানিক ৫০ হাজার গাইড বিক্রি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
দাগনভূঞা উপজেলা  শিক্ষক সমিতির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া আজাদ  বলেন, বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার সহায়ক বই বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীরা কিনেছে বলে অবগত হয়েছি। তবে ওইসব বই কেনার ক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে প্রকাশনী সংস্থার সাথে সমিতির অবৈধ কোন সম্পর্ক নেই এবং আর্থিক লেনদেনও নেই। শিক্ষক সমিতি এসব অনৈতিক কাজও করে না। কোনো শিক্ষক তার বিদ্যালয়ে এমন কাজ করে থাকলে, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
দাগনভূঞা উপজেলা  মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব)  গোলাম মোস্তফা  বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে এখন আর আগের মতো গাইড বই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন নেই। নতুন কারিকুলামে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেখানো হচ্ছে। তারপরও অনেক স্কুলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপর গাইড বই চাপিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকেরা কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাইড বই কেনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে তা আমার বোধগম্য নয়। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অন্যায় কাজের অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। প্রধান শিক্ষকদের সাথে আমাদের সভা করবো। আমরা গাইড বই কিংবা সহায়ক বইয়ের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করবো। এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) যে বই দিয়েছে, এর বাইরে কোনো সহায়ক বই বা গাইড শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ নেই। তাছাড়া সব ধরনের গাইড সরকার নিষিদ্ধ করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দাগনভূঞায় বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে

আপডেট সময় :
নিষিদ্ধ হলেও দেশে নোট—গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছেই। সৃজনশীল মেধা বিকাশ নিশ্চিতে বিগত ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। আর আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। তারপরেও সারা দেশের ন্যায় দাগনভূঞা  উপজেলার  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট উচ্চমূল্যের এসব সহায়ক ও গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবখানেই প্রায় সব শ্রেণিতে মূল বইয়ের সাথে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাইড বই প্রকাশ্যে লাইব্রেরীতে উচ্চ দামে বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেট লাখ-লাখ টাকার বাণিজ্য করছে। বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কালে শিক্ষকরা এসব নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং কোম্পানীর নাম সম্বলিত গাইড বইয়ের তালিকা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এনিয়ে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের বাকবিতন্ডার ঘটনা অহরহ ঘটেছে। জানা যায়, সহায়ক বা অনুশীলন ও অনুসন্ধানী নামে নিষিদ্ধ গাইড ও নোটবই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে এসব বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছেন। শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে জেলার বিভিন্ন এলাকার বইয়ের দোকানগুলোতে খোলামেলাভাবে
চলছে এসব বইয়ের রমরমা ব্যবসা। সন্তানের আবদার রক্ষায় গাইড ও নোটবই না কিনে দিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। কোন কোন অভিভাবক ধার-দেনা করেও বই কিনে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকার শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক বিকাশে নানা পদক্ষেপ নিলেও নিষিদ্ধ গাইড নির্ভর পাঠদানের কারণে এর সুফল পাচ্ছে না।
আইন অনুযায়ী, পাঠ্যপুস্তকের নোটবই প্রকাশনা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ। এ আইন উপেক্ষা করেই দাগনভূঞা বাজার সহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অহরহ নোটবই বিক্রি হচ্ছে। অনেকে কৌশলে গাইড-সহায়ক বই আকারে এই বই চালাচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এনসিটিবির অননুমোদিত বই পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা যাবে না। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলে পাঠ্যতালিকা (বুকলিস্ট) তৈরিতে নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১৯৮০ সালে আইন করে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোটবই মুদ্রণ, বিতরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করে। এছাড়া উচ্চ আদালতের এক রায়ে গাইড ও নোটবই মুদ্রণ ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করে এসব বই বিক্রি করলে সাজাসহ জরিমানারও বিধান রয়েছে।
জানা গেছে, বিগত বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঞ্জেরী-লেকচার কোম্পানীর একসেট গাইড বই এক হাজার ৩শ থেকে এক হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বেড়ে তিন  হাজার ২শ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এডভান্সড কোম্পানীর বই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার একশ টাকা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নতুন কারিকুলাম অনুসারে প্রকাশিত সরকারি বইয়ের কোন নোট গাইড ও সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন অনেকে। এদের কেউ কেউ নতুন কারিকুলাম বোঝার সুবিধার্থে সহায়ক গাইড কেনার পক্ষে মত দেন। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকাশনী কোম্পানি থেকে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ডোনার হিসেবে নিয়ে থাকে এটা সম্পূর্ণ সিক্রেট থাকে। আর এই টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেওয়া কারনে তাদেরকে  নিদিষ্ট কোম্পানির বই কিনতে বাধ্য করে। আর এই বাধ্য বাধকতার জন্য অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের গাইড বই কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা সুত্র মতে জানা যায়।
তবে বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওপেন সিক্রেট হলেও কোন শিক্ষক এ নিয়ে কথা  বলতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে নতুন কারিকুলামের বই পাঠদানের জন্য সরকার শিক্ষকদের প্রতি টিচার্স গাইড হস্তান্তর করেছেন। তাছাড়া ক্লাসের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে পিয়ার, পেয়ার ও এল্প ওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেটি অনুসরণ করলে ছাত্রদের বাড়তি অন্য কোন বই কিংবা গাইড কেনার প্রয়োজন নেই।
একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র বিভিন্ন  দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলার  প্রায় সবকটি স্কুলে ঢাকার কয়েকটি প্রকাশনীর গাইড ও সহায়ক বই তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি নাম উঠে এসেছে পাঞ্জেরী ও লেকচার প্রকাশনীর। কিছু কিছু স্কুলে লেকচার, অনুপম প্রকাশনী ও অ্যাডভান্সড পাবলিকেশনের বইও পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।
 দাগনভূঞা বেলাল শিক্ষা বিতান এর  স্বত্তাধিকারী, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির দাগনভূঞা শাখার সভাপতি  মোঃ বেলাল হোসেন  বলেন, নতুন কারীকুলাম অনুযায়ী এসব বইগুলোকে গাইড বলা যাবে না। সহায়ক বই বা অনুশীলন ও অনুসন্ধানী বলা যাবে। বিক্রির ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি বছর কম বিক্রি হলেও দাগনভূঞার  বিভিন্ন লাইব্রেরীতে আনুমানিক ৫০ হাজার গাইড বিক্রি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
দাগনভূঞা উপজেলা  শিক্ষক সমিতির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া আজাদ  বলেন, বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার সহায়ক বই বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীরা কিনেছে বলে অবগত হয়েছি। তবে ওইসব বই কেনার ক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে প্রকাশনী সংস্থার সাথে সমিতির অবৈধ কোন সম্পর্ক নেই এবং আর্থিক লেনদেনও নেই। শিক্ষক সমিতি এসব অনৈতিক কাজও করে না। কোনো শিক্ষক তার বিদ্যালয়ে এমন কাজ করে থাকলে, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
দাগনভূঞা উপজেলা  মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব)  গোলাম মোস্তফা  বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে এখন আর আগের মতো গাইড বই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন নেই। নতুন কারিকুলামে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেখানো হচ্ছে। তারপরও অনেক স্কুলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপর গাইড বই চাপিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকেরা কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাইড বই কেনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে তা আমার বোধগম্য নয়। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অন্যায় কাজের অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। প্রধান শিক্ষকদের সাথে আমাদের সভা করবো। আমরা গাইড বই কিংবা সহায়ক বইয়ের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করবো। এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) যে বই দিয়েছে, এর বাইরে কোনো সহায়ক বই বা গাইড শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ নেই। তাছাড়া সব ধরনের গাইড সরকার নিষিদ্ধ করেছে।