হাসিনার বাড়াবাড়িকে দুষছে তৃণমূল

- আপডেট সময় : ০২:১৬:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, শোকরানা মোনাজাতসহ নানাভাবে বিজয় উল্লাস করেছে ছাত্রসমাজসহ জুলাই অভাগ্যনের পক্ষের সব রাজনৈতিক শক্তি। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলটিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হলে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা রাজধানীতে আনন্দ মিছিল করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, শেখ হাসিনার অতিরিক্ত ভাড়াভাড়ির কারনে দলের আজকে এই অবস্থা। এর আগে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। এবার নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম। এতে করে যারা দলের মাঠের নেতাকর্মী, তাদের বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে বলে জানান তারা।
আওয়ামীলীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তর পর দলটির নিবন্ধনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হতে পারে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই দলটির নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এখনো গেজেট পাইনি। গেজেট নোটিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করছি। গেজেট পেলে সিদ্ধান্ত নেব। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামীলীগের ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনের পতন হয়। এর পর থেকেই বিভিন্ন সময় দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলেছে বিভিন্ন পক্ষ। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি আত্মপ্রকাশের পর থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া বিএনপি প্রধান উপদেষ্ট্রাকে দেওয়া ৩১ দাবির মধ্যে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করা এটি ছিল অন্যতম। জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও তার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে তারা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। তারা বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রবিরোধী ও লুটপাটের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছি। অবশেষে ছাত্র-জনতার প্রচেষ্টায় সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ হাজারো মানুষকে হত্যা, গুম ও নিখোঁজ করেছে। লাখ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেই টাকা ফিরিয়ে এনে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এবার ইতিহাস প্রমাণ করল—বাংলার মানুষ জেগে উঠলে কোনো ফ্যাসিস্ট পালাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বিএনপি সঠিক বলে মনে করে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও গতরাতে (শনিবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অপশাসন চালনাকারী, ফ্যাসিবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক বলে মনে করি। তবে আমাদের দাবি মেনে আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চাপের মুখে ব্যবস্থা নেয়ার মত বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় সরকারকে পড়তে হতো না। ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে মনে রাখবেন বলে আমরা আশা করি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ফলে বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বিষয়টি সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ শেষ কবে ভোট দিয়েছিল ভুলে গেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার দায়ে। তারা দেশের মানুষের সব অধিকার খর্ব করেছিল। অভ্যুত্থানের পক্ষের সবার সঙ্গেই পরামর্শ করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ১৪শ’ মানুষকে হত্যার তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের হিসেবে এই সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই। তারা যে কাউকে জঙ্গি বানিয়েছে। এখন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।