কোন পথে দেশ!

- আপডেট সময় : ১২:০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
-
নির্বাচন ভবন ঘেরাও করে এনসিপির আন্দোলন
-
ইশরাকের অনুসারীর দখলে নগর ভবন মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়
-
রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা ইশরাক হোসেনের
-
নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি
-
ইশরাকের শপথ ইস্যুতে করা রিটের আদেশ আজ
২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা পালানোর পর থেকে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে আন্দোলনের নগরীতে। প্রতিদিনই হচ্ছে কোন না কোন আন্দোলন। আন্দোলন কর্মসূচির প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সুযোগ সন্ধানীরাও তৎপর। একটি আন্দোলনের সুরাহা না হতেই রাজপথে নতুন নতুন আন্দোলন কর্মসূচির পেছনে নানা ষড়যন্ত্র ও নাশকতার আশঙ্কা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনের পাশাপাশি মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইলে সড়ক অবরোধ করেছেন তার সমর্থকরা। বুধবার বেলা ১১টার পর মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। ইশরাককে শপথ গ্রহণে এবং দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে তার সমর্থকরাও কয়েকদিন ধরেই এই আন্দোলন করছেন নগর ভবনের রাস্তা দখল করেই। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
ঢাকা শহর জুড়ে এমন অনেক আন্দোলন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কখনো আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিচ্ছে শাহবাগে তো আবার কখনো গুলিস্তানের মত ব্যস্ত জায়গায়। এসবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরী হচ্ছে, রাস্তা বন্ধ থাকায় জ্যামের ফাঁদে পড়ছেন অফিসগামীরা।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আন্দোলনের প্রথম দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি মহানগর উত্তর।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতারা জানান, যদি ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া হয়, প্রয়োজনে আমরা আদালত ঘেরাও করতে বাধ্য হবো। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনের কাছে কাকরাইল আছি। দাবি আদায়ে আমরা তার বাস ভবনের সামনেও অবস্থান নিতে পারি। উপদেষ্টা আসিফ আর পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছে। তার উচিত পদত্যাগ করা। সে সরকারে থেকে রাজনীতি করে, এটা হবে না।
সমর্থকদের উদ্দেশ্যে রাজপথ ছেড়ে না আসার নির্দেশনা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। বুধবার বেলা দুইটার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ নির্দেশনা দেন তিনি। এক লাইনের ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, নির্দেশ একটাই যতক্ষণ দরকার রাজপথ ছেড়ে উঠে আসা যাবে না।
আবার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি দিতে চায় দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি কী হবে সেটা এখনো নির্ধারণ হয়নি। বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার দাবি জানিয়েছেন দলটি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পার হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা করেনি। আর এতেই নড়েচড়ে বসেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি।
সাধারণ মানুষ বলছেন, যে কোনো সংগঠন কিংবা ব্যক্তি তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দাবি জানাতেই পারে। তবে তাদের প্রক্রিয়ায় দাবি এভাবে জানানো হচ্ছে, সেটা যথাযথ নয়। কিছু হলেই আন্দোলন শুরু হচ্ছে, দখল করা হচ্ছে রাজপথ। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। সাধারণ মানুষের কখনই মুক্তি হবে মনে হয় না।
আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা পেলেও সাধারণ মানুষ এসব আন্দোলনের কারণে পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা বন্ধ করে এসব আন্দোলন হওয়ার কারণে জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। আন্দোলনকারীদেরও তাই ভাবতে হবে বিষয়টি নিয়ে। রাস্তা বন্ধ না করে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়না এমন কোন জায়গা নির্ধারণ করা উচিৎ আন্দোলনের জন্য, এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামত পাওয়ার পর এবং পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশের পর ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের নতুন মেয়র ঘোষণা করে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের সব মেয়রকে অপসারণ করা হয়। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে।
এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস। সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। ছাত্র আন্দোলনের পর গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া। এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, সরকার গায়ের জোরে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হতে দিচ্ছে না বলে গতকাল ২০ মে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।