ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের অর্থ বাণিজ্য
রামগতিতে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গনপিটুনি দিয়ে হত্যা, পুলিশের মামলা

- আপডেট সময় : ০২:৩২:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মানসিক ভারসাম্যহীন ৫০ বছর বয়সী এক বয়স্ক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহ করে গনপিটুনি দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে। এঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার অর্থ বাণিজ্যে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাস্থলের আসেপাশে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,উপজেলা চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরকলাকোপা গ্রামের দুলাল সরদারের দোকানের সামনে গত ৯ জুন রাত আনুমানিক দুইটার দিকে ৫০ বছর বয়সী বয়স্ক মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহ করে গনপিটুনি দেয় স্থানীয় ১০-১২ জন যুবক।তারা বেধড়ক মারধর করে গুরুতর অবস্থায় রাস্তার পাশে পেলে রেখে চলে যায় । সকাল ৮ টার দিকে স্থানীয় লোকজন ওই ব্যক্তিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে শুর চিৎকার শুরু করেন। এসময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক এসে একটি সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তিকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ওইদিন (৯ জুন) দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তপক্ষ। হাসপাতালে নেওয়া যুকরা হলেন-ওই এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে মাকসুদ আলম,রাব্বি, শাহাদাতের ছেলে আশিক,আব্দুস শহিদের ছেলে মো. আরিফ, মালেক মাঝির ছেলে মোঃ সবুজ। ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করেই এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন,ওই এলাকার খলিল মাঝির ছেলে কিরণ,মকবুল আহমদের ছেলে ফখরুদ্দিন সহ প্রায় আর ৭ জন। এরা সবাই উঠতি বয়সের যুবক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন দোকানদার ও তিনজন মসজিদ কমিটির সদস্য জানান, ঘটনার আগের দিন দিবাগত রাতে উপরে উল্লেখিত যুবক গুলো দুলাল সরদারের দোকানের পাশে পুর্ব চরকলাকোপা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আড্ডায় ছিলেন। ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে এরা চোর সন্দেহ করে গভীর রাতে বেধড়ক মারধর করে রাস্তায় পেলে চলে যায়। সকালে এসে লোকজন গুরুতর অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তারাই আবার ছুটে এসে হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করে এখন সবাই পলাতক। নোয়াখালী সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশটি রামগতি থানায় হস্তান্তর করলে পুলিশ তদন্তে নামেন। পুলিশের তদন্তেও চোর সন্দেহ করে গনপিটুনি দিয়ে হত্যা করার প্রমাণ পেয়ে রামগতি থানার এসআই মো. মজিবুর রহমান বাদি হয়ে ১০ জুন হত্যা মামলা দায়ের করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। আবার হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় মানসিক ভারসাম্যহীন এই ব্যক্তিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে মর্মে দেখানো হয়।এঘটনা ও মামলাকে পুঁজি করে স্থানীয় চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ইব্রাহিম অর্থ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। তারা পলাতক যুবকদের পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও পুর্বের শত্রুতা থাকা লোকজনকে মামলায় আসামী করার জন্য কলাকৌশল হাঁকছে। স্থানীয় মেম্বার ইব্রাহিম ঘটনার পর থেকে এলাকায় ঘুরাঘুরি করে হত্যা মামলায় আসামী করার জন্য তালিকা তৈরী করে তা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরণ করে। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কাকে কি ভাবে আসামি করবে সেই কলাকৌশল হাঁকছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ব্যক্তি জানান, পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা করছেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ নেই। সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে মেম্বার- চেয়ারম্যান। তাদের নির্বাচনে কে কার ভোট করেনি এসব হিসেব করেই এখন আসামির তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। পলাতক থাকা দুই ভাই মাকছুদ আলম ও রাব্বির বাবা সিরাজ মিয়া থাকেন দুবাইতে। তার স্ত্রী পান্না বেগম দুই ছেলেকে হত্যা মামলা থেকে বাঁচাতে ইব্রাহিম মেম্বারকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তবে পান্না বেগম টাকা দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। আশিককে বাঁচাতে তার বাবা শাহাদাত চেয়ারম্যান নুরল আমিন ও মেম্বার ইব্রাহিমের দরবারে হাজিরা দিচ্ছেন। টাকার অংক নিয়ে দরদাম হচ্ছে বলে জানান ওই বাড়ীর দুইজন ব্যক্তি।স্থানীয় নোমান,আবু বকর ও জসিম সহ অন্তত ১০ জন ব্যক্তি জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির বয়স প্রায় ৫০ এর বেশী হবে। ১৫-২০ দিন ধরে স্থানীয় আজাদনগর বাজার এলাকায় রাতদিন ঘুরাঘুরি করতে দেখছেন তারা।
মামলার বাদি রামগতি থানার এসআই মো. মজিবুর রহমান বলেন, জুন মাসের ৮ তারিখে স্থানীয় কয়েকজন যুবক চোর সন্দেহ করে গনপিটুনি দিয়ে রাস্তার পাশে পেলে দেয়। পরে পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পায় যে,মুলত এটি সম্পুর্ন হত্যা। ১০-১২ জনের গণপিটুনিতে মানসিক বয়স্ক ব্যক্তিটি মারা যায়। তাই আমি বাদি হয়ে হত্যা মামলা দাখিল করি।
চরপোড়াগাছা ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। যে সব ছেলেরা পলাতক রয়েছে। এরা কেউ আমার ভোট করেনি। আমার কাছে তাদের পরিবারের কেউ আসছে। আমি তাদেরকে পরে জানাবো বলছি।
চরপোড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমার কাছে একটা তালিকা আছে। আমি আপনাকে পরে দিবো। লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।
থানা অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, মামলায় সুনির্দিষ্ট কোন আসামির নাম নেই, পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করবে।