স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে স্বামীর বাড়ীতে তিনদিন যাবত নারীর অনশন
‘স্বীকৃতি না দিলে কবিরের ঘরেই আত্মহত্যা করবো’

- আপডেট সময় : ০৪:২৪:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
নয় বছর আগে পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী প্রথম বিয়ে করেন মিজানুর রহমানের ছেলে কবির খান । কিন্তু ওই সংসারে কোন সন্তান জন্ম না নেয়ায় প্রায় চার বছর আগে প্রতিবেশী ভাতিজি তানিয়া আক্তার সুইটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। দীর্ঘ সময়ের শারিরিক সম্পর্কে তিন বার বিভিন্ন উপায়ে গর্ভ নষ্ট করেন প্রেমিক কবীর। অবশেষে গত মাস দুয়েক আগে কবির কাবিন ছাড়াই সুইটিকে গোপনে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে প্রেমিকা সুইটি পারিবারিক স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রেমিক কবীর শুরু করেন টালবাহানা। উপায়ন্তর না দেখে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে স্ত্রী হিসেবে পারিবারিক স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে কবীরের বাড়ীতে উঠে সুইটি। এসময় তাকে কবীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন সুইটিকে মারধর করে একটি ঘরে তালাবন্ধি করে রাখে। ঘটনার তিনদিনেও কোন সুরাহা না হওয়ায় স্ত্রীর স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বন্দি ঘর থেকে বের না হয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছে সুইটি। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের কুশা নগর গ্রামে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত মাস দুয়েক আগে গোপনে বিয়ে হওয়ার পর থেকে ত্রিশালের পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলা সদরে বাসা ভাড়া রেখে সংসার শুরু করেন কবীর ও সুইটি। তবে সম্প্রতি সুইটির খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেয় কবীর। এরপর সুইটি কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে করে। এঘটনার পর স্ত্রীর দাবি নিয়ে সুইটি গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে কবিরের বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু কবিরের পরিবার এ বিয়ে মেনে না নেওয়ায় অনশন শুরু করেন সুইটি। এসময় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কবির। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার এনিয়ে সালিশ-দরবারেও কোন প্রকার সূরাহা না হওয়ায় অনশনে বসেছেন বলে জানায় ওই নারী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন জানান এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে সুইটির মা শাহনাজ পারভীন বলেন, এই কবির আমার মেয়ের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করেছে। আমি এ-র বিচার চাই। আমরা গরীব মানুষ বলে আমগর কি ইজ্জত নাই। আমার মেয়েকে নিয়ে কবির পালাই গিয়া ছিলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কিছুদিন আগে আমাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে মেয়ে জানায় কবির তাকে ভালুকায় নিয়ে বিয়ে করেছে সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে তার সংসার পেতেছে। এখন কবির আমার মেয়েকে অস্বীকার করছে। এই মেয়ে নিয়ে আমি কোথায় যামু। আমার মেয়েটি কে কবির এর স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
মেয়ের বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রেমের সম্পর্ক জানার পর কবিরকে বিয়ে করতে বলেছিলাম, সে রাজি হয়নি। তখন আমি ত্রিশাল থানায় এ বিষয়ে একটি অভিযোগ করেছিলাম।
ভূক্তভোগী তানিয়া আক্তার সুইটি বলেন, প্রথম বিয়ে করার পর দীর্ঘ সময় কোন সন্তান না হওয়ায় কবির আমাকে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সন্তান না হওয়ার কষ্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে বলেন। একটা পর্যায়ে বিয়ে করার শর্তে আমি রাজি হই। চার বছরে সে আমার তিনটি সন্তান নষ্ট করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে ঔষধ খায়িয়ে গর্ভ নষ্ট করে দেয়। এখনও আমি গর্ভবতী, আমার গর্ভে কবীরের সন্তান। বিয়ের জন্য অনেক চাপ দেওয়ার পর কিছুদিন আগে সে আমাকে কাবিন ছাড়া বিয়ে করে। কবির আমাকে যতোদিন স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিবে ততদিন পর্যন্ত আমি এ অনশন চালিয়ে যাবো। আমি ও আমার বাচ্চার স্বীকৃতি চাই। প্রয়োজন হলে আমি কবিরের ঘর আত্মহত্যা করবো।
অভিযুক্ত কবীর খান বলেন, সুইটির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এটা একটা ষড়যন্ত্র বলে ফোন কেটে দেন।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনসুর আহমেদ বলেন, এখনকার বিষয় নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।