গোপালগঞ্জের নারী বন্দীরা
নকশী কাঁথা ও শাড়ির ওপর সুই সুতার কাজ শিখে স্বাবলম্বীর চেষ্টা করছেন

- আপডেট সময় : ০১:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
গোপালগঞ্জ জেলা কারা কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় নারী বন্দীরা নকশী কাঁথা ও শাড়ির ওপর সুই সুতার কারুকার্য করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
প্রতিটি সেলাইয়ের ফোঁড় যেনো স্বাধীনতার কথা বলে, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়, গোপালগঞ্জের কারাগারে নারী বন্দীরা কারা কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় প্রশিক্ষিত হয়ে ব্লক প্রিন্ট শাড়ির ওপর সুনিপুণ হাতের কারুকাজ করে শৈল্পিক ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের নকশী কাঁথা সেলাই করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উৎপাদিত এই নকশী কাঁথা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন হয় তা থেকে খরচ বাদ দিয়ে লভ্যাংশের অর্ধেক টাকা সেই সকল নারী বন্দীদেরকে প্রদান করেন গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামান দৈনিক গণমুক্তিকে জানান, বর্তমান কারা মহা-পরিদর্শক জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন স্যারের দিক নির্দেশনায় দেশের সমস্ত কারাগারেই বন্দীদের আত্মকর্মসংস্থান ও বন্দি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া সহ, নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুরুষ বন্দিদের বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারও নারী বন্দীদের আত্মকর্মসংস্থানে ব্লক প্রিন্টের কাপড়ের ওপর সুই সুতার কাজ, নকশী কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারী বন্দীরা।
এ কারাগারে বর্তমানে হাজতী ও কয়েদি মিলে ২০ জন নারীবন্দী রয়েছেন, এরা প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নকশী কাঁথা সেলাই করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ সকল নারী বন্দীরা সাধারণত মাদক মামলা ও এনজিও সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় মামলায় আজ তারা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এরা এখান থেকে নকশী কাঁথা ও সেলাইয়ের কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে যতদিন রয়েছেন স্বাবলম্বী হতে পারবেন। ভবিষ্যতে বাড়িতে গিয়েও এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। এছাড়াও গোপালগঞ্জ কারাগারে পুরুষ বন্দীদের স্বাবলম্বী হতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। কারাগার শুধু বন্দীশালাই নয়। এটি একটি সংশোধনাগার। কারাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে গত তিন মাসে ৪২ জন বন্দীকে প্রাইমারী থেকে শুরু করে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ শেখানো হয়েছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্বাক্ষর জ্ঞানহীন বন্দীদের স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা। বর্তমানে এটা যেনো কারাগার নয়, সত্যিই দিনে দিনে সংশোধনাগারে রুপ নিচ্ছে। ” রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” কারাগারের মূল মন্ত্র এটা, এখন শুধু পুস্তকের ভাষা নয়, এটা এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। এখানে প্রতিদিন বন্দীরা মাদক ও অন্যায় থেকে সরে আসার শিক্ষা পাচ্ছেন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কয়েকজন কারাবন্দীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কারাগার এখন আগের মতো নেই, আমরাও চেষ্টা করছি অন্যায় পথ থেকে সরে এসে সৎ পথে জীবন-যাপন করার।
এভাবে যদি প্রতিটি কারাগার বন্দীদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারে তবে আমাদের সমাজ হবে অপরাধ মুক্ত। এই সকল জনবলই একদিন জনশক্তিতে রুপান্তরিত হবে।