ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

শাম্মি হত্যায় নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি, ক্ষুব্ধ পরিবার ও এলাকাবাসী

আহসান হাবীব লায়েক, জকিগঞ্জ (সিলেট) সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ১২৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিলেটের জকিগঞ্জে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাম্মি আক্তার (৭) হত্যার দুই বছর সাড়ে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। হত্যাকারীরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, মামলার অগ্রগতিও নেই। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিচার না পাওয়ায় শোকাহত ও ক্ষুব্ধ পরিবার।
জানা যায়, ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জকিগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ পীরেরচক এলাকার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু শাম্মি। পরদিন জকিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার। পরে ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পৌর এলাকার কেছরী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
শাম্মির বাবা মো. আজমল হোসেন জকিগঞ্জ থানায় দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, “আমি নিজেই পুলিশের একজন কর্মচারীর মতো কাজ করেও মেয়ের হত্যার বিচার পাইনি। থানায় জিডি করেছি, মামলা করেছি, বারবার পিবিআই তদন্তের আবেদন করেছি—কিন্তু আজও কেউ ধরা পড়েনি। বরং তৎকালীন ওসি মোশাররফ হোসেন প্রকৃত আসামিদের খুঁজে না বের করে আমার ছোট বোনের জামাইকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে বেদম মারপিট করে পঙ্গু করে দিয়েছেন।” তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, “কলিজার টুকরা মেয়ে হারানোর শোক যেমন বুকে চাপা, তেমনি এখন বোনের স্বামীর পঙ্গুত্বও আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।”
শিশুটির মা রুশনা বেগম বলেন, “আমার ফুলের মতো মেয়েটা কে মেরে ফেলল, কেন মেরে ফেলল—তা আজও জানি না। বিচার না পেয়ে আমরা দিশেহারা।”
শাম্মির বড় বোন সামিয়া আক্তার (ছাত্রী, জকিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল) বলেন, “আগামী ৪ সেপ্টেম্বর আমার বোনের মৃত্যুবার্ষিকী। এর আগেও যদি তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, আমরা সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামবো। প্রয়োজনে থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।” শাম্মির আরেক বোন সামিরা আক্তার বলেন,”আমার বোনের রক্তের বিচার চাই।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করে কেউ পার পেয়ে যাবে—এ বার্তা সমাজে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী আনোয়ার হোসেন খান বলেন, “একজন শিশুর হত্যা এভাবে বছরের পর বছর অমীমাংসিত থাকা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা।”
মামলার তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত কেবা কারা মেরেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন মিয়া বলেন, “অফিসার ইনচার্জ মহোদয় বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। বিষয়টি অনেক পুরোনো হওয়ায় বিস্তারিত আমার জানা নেই।”
শিশু শাম্মির পরিবার জকিগঞ্জ উপজেলার ভাখরশাল গ্রামের হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার দক্ষিণ পীরেরচকে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শাম্মি হত্যায় নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি, ক্ষুব্ধ পরিবার ও এলাকাবাসী

আপডেট সময় :

সিলেটের জকিগঞ্জে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাম্মি আক্তার (৭) হত্যার দুই বছর সাড়ে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। হত্যাকারীরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, মামলার অগ্রগতিও নেই। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিচার না পাওয়ায় শোকাহত ও ক্ষুব্ধ পরিবার।
জানা যায়, ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জকিগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ পীরেরচক এলাকার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু শাম্মি। পরদিন জকিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার। পরে ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পৌর এলাকার কেছরী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
শাম্মির বাবা মো. আজমল হোসেন জকিগঞ্জ থানায় দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, “আমি নিজেই পুলিশের একজন কর্মচারীর মতো কাজ করেও মেয়ের হত্যার বিচার পাইনি। থানায় জিডি করেছি, মামলা করেছি, বারবার পিবিআই তদন্তের আবেদন করেছি—কিন্তু আজও কেউ ধরা পড়েনি। বরং তৎকালীন ওসি মোশাররফ হোসেন প্রকৃত আসামিদের খুঁজে না বের করে আমার ছোট বোনের জামাইকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে বেদম মারপিট করে পঙ্গু করে দিয়েছেন।” তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, “কলিজার টুকরা মেয়ে হারানোর শোক যেমন বুকে চাপা, তেমনি এখন বোনের স্বামীর পঙ্গুত্বও আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।”
শিশুটির মা রুশনা বেগম বলেন, “আমার ফুলের মতো মেয়েটা কে মেরে ফেলল, কেন মেরে ফেলল—তা আজও জানি না। বিচার না পেয়ে আমরা দিশেহারা।”
শাম্মির বড় বোন সামিয়া আক্তার (ছাত্রী, জকিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল) বলেন, “আগামী ৪ সেপ্টেম্বর আমার বোনের মৃত্যুবার্ষিকী। এর আগেও যদি তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, আমরা সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামবো। প্রয়োজনে থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।” শাম্মির আরেক বোন সামিরা আক্তার বলেন,”আমার বোনের রক্তের বিচার চাই।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করে কেউ পার পেয়ে যাবে—এ বার্তা সমাজে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী আনোয়ার হোসেন খান বলেন, “একজন শিশুর হত্যা এভাবে বছরের পর বছর অমীমাংসিত থাকা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা।”
মামলার তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত কেবা কারা মেরেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন মিয়া বলেন, “অফিসার ইনচার্জ মহোদয় বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। বিষয়টি অনেক পুরোনো হওয়ায় বিস্তারিত আমার জানা নেই।”
শিশু শাম্মির পরিবার জকিগঞ্জ উপজেলার ভাখরশাল গ্রামের হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার দক্ষিণ পীরেরচকে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।