ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo `জুলাই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের অঙ্গীকার’ Logo ডামুড্যায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ Logo বিশ্বনাথে আলোকিত সুর সাংস্কৃতিক ফোরাম অভিষেক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা Logo বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এমডিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে মামলা Logo সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন Logo ঝিনাইদহে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল ভূমিকা রাখছে Logo বন্ধু একাদশ হাকিমপুরকে হারিয়ে মুন্সিপাড়া ওয়ারিয়ার্স দিনাজপুর চ্যাম্পিয়ান Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা

তৌকিরের শেষ কথা

আমি আসছি, দেখা হবে ইনশাল্লাহ

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৬৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হাতে মেহেদীর রং না মুছতেই না ফেরার দেশে চলে গেলো স্কোয়াড্রন লিডার বৈমানিক তৌকির আহমেদ। এক বছর আগে বিয়ে করলেও মাত্র দুমাস আগে রাজশাহীর চাপাই নবাবগঞ্জের কানসার্টে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন পাইলট তৌকির। মা বাবা মামাসহ সকলের সম্মতি ক্রমে তৌকির বিয়ে করেন। আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে ঢাকার গাজীপুরে। স্ত্রী নিঝুম ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের একবছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তবে গেল দুমাস আগে গাজীপুর শহরের নানকিং কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে তোলা হয়। এরপর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন।
তার সহকর্মীরা বলেছেন, বিদায়ের আগে সহকর্মীদের তৌকির বলেছিলেন আমি আসছি, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। এসময় সেখানে তার প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদও ছিলেন। এটাই ছিল তৌকিরের শেষ কথা।
জানা গেছে, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম, তিনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ঢাকায় বিমানবাহিনীর কোয়াটারে থাকতেন এই নবদম্পতি। সর্বশেষ গেল কোরবানি ঈদে (জুন মাসে) রাজশাহীর বাসায় এসেছিলেন তৌকির। এরপরে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে আর রাজশাহীতে আসেননি পাইলট তৌকির। স্ত্রী নিঝুম স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে হত বিহব্বল হয়ে পড়েন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার দু মাসের মধ্যে স্বামী মারা গেলো। এ বয়সে তিনি বিধাব হয়ে গেলেন। এ সকল কথা বলতে গিয়ে নিঝুম বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
স্ত্রী নিঝুম আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, বিয়ের এক বছরের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় চলে গেলেন সে (পাইলট তৌকির)। এক বছর আগে বিয়ে হলেও পাইলট তৌকির ইসলাম বৌ ঘরে তোলেন গত দুমাস আগে। অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেন এই পাইলট। তৌকিরের এমন মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহত তৌকিরের মামা বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে এসেছিলেন। এখানে কোরবানিও দেন তারা। এরপরে ছুটি শেষে স্যারকে গাড়িতে করে ঢাকায় রেখে আসি। তিনি (তৌকির) অনেক নম্র ও ভদ্র মানুষ। বিমানবাহিনীর কোয়াটারে তাদের নামিয়ে দেওয়ার পরে (তিনি) পুরো এলাকা ঘুরিয়ে দেখান। অনেক ভালো মনের মানুষ তিনি। কোনো অহঙ্কার নেই তার মনে।
সাগরের মামা শওকত আলী জানান, ছোট থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন। পরিবারের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে অফিসার হবেন তিনি। তবে নিজের স্বপ্নেই অটল ছিল সাগর। পড়ালেখায় ছিলেন মেধাবী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে, সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
তৌকিরের আরেক মামা সেলিম জানান, প্রায় বছর খানেক তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু দুইমাস আগে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তার স্ত্রী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তার মৃত্যুতে রাজশাহীর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল সোমবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। আগামীকাল রাজশাহীতে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
স্বজনরা জানান, বিমান বিধ্বস্তে নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় আনা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ওই বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বিকেলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাপ্ট বিমানে তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নেওয়া হয়। এর আগে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের পরিবারের কাছে খবর আসে দুর্ঘটনার। এরপরে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। তারা রাজশাহী বিমানবন্দরে আসলে বিশেষ বিমানে তৌকিরের বাবা-মা, তার স্ত্রী আকশা আহম্মেদ নিঝুম এবং বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম ঢাকায় রওনা হন।
গাড়িচালক আলী হাসান বলেন, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন স্যারসহ কয়েকজন। তারা হাসপাতালে পৌঁছে গেছেন। সেখানে স্বজনরা রয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিকেলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাপ্ট বিমানে পাইলট তৌকিরের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যায়। বিমানে পরিবারের চার থেকে পাঁচজন সদস্য রাজশাহী থেকে বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রসঙ্গত, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৬৮ জনকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট ও রাজশাহীর বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। এ দুর্ঘটনার খবর শুনে সোমবার বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে তৌকিরের রাজশাহীর বাড়িতে ছুটে আসেন তার প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। এসময় তৌকিরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথার এক পর্যায়ে তিনি তৌকিরের শিক্ষা ও কর্ম জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তৌকিরের সঙ্গে এক মাস আগেও কথা হয়েছিল তার। ওই সময় জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে শিগগিরই দেখা হবে।
প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, তৌকির খুব মেধাবী ছিল। ভীষণ মিশুক ও শান্ত ছেলে ছিল। তার কথা এখন খুব মনে পড়ছে। সে ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করতে জানত।
বিমানবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি রাজশাহীর মানুষ সেও রাজশাহী ছাত্র। সেই হিসেবে আমি তাকে চিনি। মিডিয়ায় সংবাদ দেখার পরে আমি এসেছি। সে শিক্ষার্থী ভালো, মানুষ হিসেবে ভালো, পাইলট হিসেবেও ভালো ছিল। তার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা শুরু থেকেই। তার সব বিষয়ে অ্যাক্টিভিডি ভালো ছিল। তার ছবি দেখলে বুঝবেন তার স্মার্টনেস কেমন ছিল।
তিনি আরও বলেন, তৌকির নম্র, ভদ্র ও স্মার্ট। একজন দক্ষ মানুষ। তাকে ছোট থেকে দেখছি। তার এমন খবরে আমি নিজেও মর্মাহত। গত একমাস আগেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলেছিল- স্টাফ আমি আসতেছি, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। এটাই ছিলো তার সঙ্গে শেষ কথা। তার শিক্ষা জীবন ভালো ছিল। পাবনা ক্যাডেট কলেজের আগে রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ফ্লাইট লেফটেনেন্ট তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট ও রাজশাহীর বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তৌকিরের শেষ কথা

আমি আসছি, দেখা হবে ইনশাল্লাহ

আপডেট সময় :

হাতে মেহেদীর রং না মুছতেই না ফেরার দেশে চলে গেলো স্কোয়াড্রন লিডার বৈমানিক তৌকির আহমেদ। এক বছর আগে বিয়ে করলেও মাত্র দুমাস আগে রাজশাহীর চাপাই নবাবগঞ্জের কানসার্টে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন পাইলট তৌকির। মা বাবা মামাসহ সকলের সম্মতি ক্রমে তৌকির বিয়ে করেন। আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে ঢাকার গাজীপুরে। স্ত্রী নিঝুম ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের একবছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তবে গেল দুমাস আগে গাজীপুর শহরের নানকিং কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে তোলা হয়। এরপর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন।
তার সহকর্মীরা বলেছেন, বিদায়ের আগে সহকর্মীদের তৌকির বলেছিলেন আমি আসছি, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। এসময় সেখানে তার প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদও ছিলেন। এটাই ছিল তৌকিরের শেষ কথা।
জানা গেছে, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম, তিনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ঢাকায় বিমানবাহিনীর কোয়াটারে থাকতেন এই নবদম্পতি। সর্বশেষ গেল কোরবানি ঈদে (জুন মাসে) রাজশাহীর বাসায় এসেছিলেন তৌকির। এরপরে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে আর রাজশাহীতে আসেননি পাইলট তৌকির। স্ত্রী নিঝুম স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে হত বিহব্বল হয়ে পড়েন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার দু মাসের মধ্যে স্বামী মারা গেলো। এ বয়সে তিনি বিধাব হয়ে গেলেন। এ সকল কথা বলতে গিয়ে নিঝুম বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
স্ত্রী নিঝুম আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, বিয়ের এক বছরের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় চলে গেলেন সে (পাইলট তৌকির)। এক বছর আগে বিয়ে হলেও পাইলট তৌকির ইসলাম বৌ ঘরে তোলেন গত দুমাস আগে। অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেন এই পাইলট। তৌকিরের এমন মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহত তৌকিরের মামা বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে এসেছিলেন। এখানে কোরবানিও দেন তারা। এরপরে ছুটি শেষে স্যারকে গাড়িতে করে ঢাকায় রেখে আসি। তিনি (তৌকির) অনেক নম্র ও ভদ্র মানুষ। বিমানবাহিনীর কোয়াটারে তাদের নামিয়ে দেওয়ার পরে (তিনি) পুরো এলাকা ঘুরিয়ে দেখান। অনেক ভালো মনের মানুষ তিনি। কোনো অহঙ্কার নেই তার মনে।
সাগরের মামা শওকত আলী জানান, ছোট থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন। পরিবারের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে অফিসার হবেন তিনি। তবে নিজের স্বপ্নেই অটল ছিল সাগর। পড়ালেখায় ছিলেন মেধাবী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে, সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
তৌকিরের আরেক মামা সেলিম জানান, প্রায় বছর খানেক তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু দুইমাস আগে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তার স্ত্রী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তার মৃত্যুতে রাজশাহীর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল সোমবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। আগামীকাল রাজশাহীতে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
স্বজনরা জানান, বিমান বিধ্বস্তে নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় আনা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ওই বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বিকেলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাপ্ট বিমানে তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নেওয়া হয়। এর আগে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের পরিবারের কাছে খবর আসে দুর্ঘটনার। এরপরে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। তারা রাজশাহী বিমানবন্দরে আসলে বিশেষ বিমানে তৌকিরের বাবা-মা, তার স্ত্রী আকশা আহম্মেদ নিঝুম এবং বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম ঢাকায় রওনা হন।
গাড়িচালক আলী হাসান বলেন, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন স্যারসহ কয়েকজন। তারা হাসপাতালে পৌঁছে গেছেন। সেখানে স্বজনরা রয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিকেলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাপ্ট বিমানে পাইলট তৌকিরের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যায়। বিমানে পরিবারের চার থেকে পাঁচজন সদস্য রাজশাহী থেকে বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রসঙ্গত, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৬৮ জনকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট ও রাজশাহীর বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। এ দুর্ঘটনার খবর শুনে সোমবার বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে তৌকিরের রাজশাহীর বাড়িতে ছুটে আসেন তার প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। এসময় তৌকিরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথার এক পর্যায়ে তিনি তৌকিরের শিক্ষা ও কর্ম জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তৌকিরের সঙ্গে এক মাস আগেও কথা হয়েছিল তার। ওই সময় জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে শিগগিরই দেখা হবে।
প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, তৌকির খুব মেধাবী ছিল। ভীষণ মিশুক ও শান্ত ছেলে ছিল। তার কথা এখন খুব মনে পড়ছে। সে ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করতে জানত।
বিমানবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি রাজশাহীর মানুষ সেও রাজশাহী ছাত্র। সেই হিসেবে আমি তাকে চিনি। মিডিয়ায় সংবাদ দেখার পরে আমি এসেছি। সে শিক্ষার্থী ভালো, মানুষ হিসেবে ভালো, পাইলট হিসেবেও ভালো ছিল। তার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা শুরু থেকেই। তার সব বিষয়ে অ্যাক্টিভিডি ভালো ছিল। তার ছবি দেখলে বুঝবেন তার স্মার্টনেস কেমন ছিল।
তিনি আরও বলেন, তৌকির নম্র, ভদ্র ও স্মার্ট। একজন দক্ষ মানুষ। তাকে ছোট থেকে দেখছি। তার এমন খবরে আমি নিজেও মর্মাহত। গত একমাস আগেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলেছিল- স্টাফ আমি আসতেছি, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। এটাই ছিলো তার সঙ্গে শেষ কথা। তার শিক্ষা জীবন ভালো ছিল। পাবনা ক্যাডেট কলেজের আগে রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ফ্লাইট লেফটেনেন্ট তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট ও রাজশাহীর বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।