নওগাঁয় ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বিজয় মিউজিক ফেস্টিভ্যাল ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত

- আপডেট সময় : ১৩১ বার পড়া হয়েছে
“সবার আগে বাংলাদেশ”—এই শিরোনামে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে গতকাল শনিবার বিকেল ৩.০০ থেকে রাত ১২.০০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হলো বিজয় মিউজিক ফেস্টিভ্যাল ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠান। জেলা মিউজিক ফোরাম ও উদ্যোগ মানবিক ফাউন্ডেশন নওগাঁ আয়োজিত এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে হাজারো দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে সংগীত, নৃত্য, আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে ভিন্নধর্মী এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ। বক্তব্যে তিনি বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সবাইকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে তারা আর পরাজিত হবে না। কিন্তু ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে জনগণের শক্তিই সর্বশক্তিমান। আমরা শুধু একটি সরকার নয়, বরং একটি ভালো বাংলাদেশ চাই। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়কে স্মরণ করতেই আজকের এ আয়োজন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসারে গণঅভ্যুত্থানে ১৪শ’ মানুষ শহীদ ও ২১ হাজার আহত হয়েছিল, আর এ সংগ্রামে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল শিক্ষার্থীদের। নওগাঁ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন বাংলা অঞ্চলে অল্প কিছু উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র ছিল, তখন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে গড়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য নওগাঁ আমার কাছে সবসময় বিশেষ আকর্ষণীয়।”
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উদ্যোগ মানবিক ফাউন্ডেশন নওগাঁ-এর চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ মাসুদ হাসান তুহিন। তার আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, “নওগাঁর মানুষ সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার চর্চায় বরাবরই অগ্রগামী। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর নতুন প্রজন্মের তারুণ্যের শক্তিকে একসূত্রে গেঁথে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। আজকের এই আয়োজন শুধু সংগীত উৎসব নয়, এটি আগামী দিনের মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতীক।” তিনি আরও যোগ করেন, “গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে আমরা সমাজে ইতিবাচক প্রেরণা ছড়িয়ে দিতে চাই। নতুন প্রজন্ম যেন তাদের পথ অনুসরণ করে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নওগাঁ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুশফিকুর রহমান, জেলা কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নূরে আলম সিদ্দিক।
বিকেল তিনটা ৪৫ মিনিটে জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ফেস্টিভ্যালের সূচনা হয়। এরপর দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় ব্যান্ড সংগীতের পরিবেশনা। নওগাঁর ১২টি ব্যান্ডদল—ফ্রেম অফ অনাস্থিন, হার্ট সন, গুরু, নওগাঁ বাউল, কে এম, সিগনেচার, বন্ধু মিউজিকাল রিঙ্কু, কিউ এস বি, যাযাবর, বাংলা বিট, উই ও পথিক নবী—পর্যায়ক্রমে সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।
বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান। মুক্তিযুদ্ধ, শিল্প-সাহিত্য, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া, নৃত্য, চারুকলা ও সংগীতাঙ্গণে অবদান রাখায় একাধিক গুণীজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সন্ধ্যা ছয়টায় আবারও শুরু হয় ব্যান্ড ও দেশখ্যাত শিল্পীদের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে প্যারাগন ইলেকট্রনিকস, পার্ক রোড, মুক্তির মোড়, নওগাঁ।
এই প্রথমবার নওগাঁয় অনুষ্ঠিত এ বিজয় মিউজিক ফেস্টিভ্যাল ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানকে ঘিরে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তরুণ-যুবকদের অংশগ্রহণ এবং গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে নওগাঁয় নতুন ইতিহাস রচিত হলো।