ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা Logo ‘দুর্গা পূজায় সৌজন্যে ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমোদন’ Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে ভারতীয় নাগরিক রামদেবকে স্বাদেশে প্রত্যাবাসন Logo নিউট্রিশন ইন সিটি ইকোসিস্টেমস প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষর Logo বিহারীবস্তিতে দুস্কৃতিকারীর হামলায় শালিসি ব্যক্তিত্ব পূর্ব আহত Logo শিবগঞ্জের দ্বিতীয় দফায় ভাঙ্গনের কবলে পদ্মা পাড়ের মানুষ, ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ Logo কক্সবাজারে ইউনিয়ন হাসপাতালের সাথে ভোরের পাখি সংগঠনের স্বাস্থ্য সেবা চুক্তি Logo জকসু ও সম্পূরক বৃত্তিসহ জবি শাখা বাগছাসের ৫ দাবি Logo ইঞ্জিনিয়ার হারুন উর রশিদ গার্লস কলেজের শিক্ষার্থীদের নবীন বরন Logo জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল সিলেট জেলা শাখার প্রচার মিছিল সম্পন্ন

২৩ বছর কারাভোগ শেষে নতুন জীবনে দুলাল

কামরুল হাসান জীবন, নওগাঁ
  • আপডেট সময় : ১৫২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দুলাল হোসেন—বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ২০০২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিবাহিত জীবনের পাঁচ মাস না যেতেই পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। ওই ঘটনার পর শ্বশুরের দায়ের করা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। দীর্ঘ ২৩ বছর সাজাভোগ শেষে গত ২ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এখন তার সামনে নতুন জীবনের পথচলা।
গতকাল সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল দুলালকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে একটি মুদি দোকান উপহার দেন। সেই সঙ্গে মূলধন হিসেবে নগদ অর্থ ও বসবাসের জন্য একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। কারাগারে দায়িত্বশীল ভূমিকা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কারণে তার দুই বছরের সাজা মওকুফ হয়েছিল।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে দুলাল বলেন, “স্ত্রী আত্মহত্যা করলেও আমাকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে উকিল খরচ ও মামলার ব্যয় মেটাতে পরিবারের সব জমিজমা বিক্রি হয়ে যায়। একসময় স্বজনেরাও বিচারের আশা ছেড়ে দেয়। মা মাঝেমধ্যে কিছু টাকা আনলেও আমি তা খরচ করতাম না। একসময় আর কেউই আমাকে দেখতে আসত না।” এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
দুলাল জানান, ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের বিপরীতে সিআইডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বন্দীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতেন নিয়মিত। পরে তাকে নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। দায়িত্বশীল আচরণ ও সুনামের কারণেই কারা কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি। এভাবেই দীর্ঘ ২৩ বছর কারাজীবন অতিবাহিত করেন।
জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন দুলাল। তবে জীবনের নতুন সূচনার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করার ইচ্ছার কথা জেলা প্রশাসককে জানান। সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নেয় প্রশাসনের সহায়তায়।
স্থানীয়রা বলেন, “দুলাল জীবনের সোনালি সময় জেলখানায় কাটিয়েছে। তার কোনো জমি-ঘর নেই। বসবাসের জন্য একটি ঘর দিলে তার খুব উপকার হবে।”
দুলালের মা আয়েশা বলেন, “আমার ছেলে ফিরে এসেছে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। সরকার যদি তাকে একটি ঘর করে দেয়, তাহলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, “সমাজের প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। দুলালের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝরে গেছে। তাকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো অপরাধে সে জড়িয়ে না পড়ে।”
২৩ বছর কারাভোগ শেষে দুলালের হাতে নতুন জীবনের হাল ধরিয়ে দিল প্রশাসনের এ উদ্যোগ। এখন দেখার বিষয়—এই নতুন জীবনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি কতদূর এগিয়ে যেতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

২৩ বছর কারাভোগ শেষে নতুন জীবনে দুলাল

আপডেট সময় :

দুলাল হোসেন—বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ২০০২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিবাহিত জীবনের পাঁচ মাস না যেতেই পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। ওই ঘটনার পর শ্বশুরের দায়ের করা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। দীর্ঘ ২৩ বছর সাজাভোগ শেষে গত ২ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এখন তার সামনে নতুন জীবনের পথচলা।
গতকাল সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল দুলালকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে একটি মুদি দোকান উপহার দেন। সেই সঙ্গে মূলধন হিসেবে নগদ অর্থ ও বসবাসের জন্য একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। কারাগারে দায়িত্বশীল ভূমিকা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কারণে তার দুই বছরের সাজা মওকুফ হয়েছিল।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে দুলাল বলেন, “স্ত্রী আত্মহত্যা করলেও আমাকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে উকিল খরচ ও মামলার ব্যয় মেটাতে পরিবারের সব জমিজমা বিক্রি হয়ে যায়। একসময় স্বজনেরাও বিচারের আশা ছেড়ে দেয়। মা মাঝেমধ্যে কিছু টাকা আনলেও আমি তা খরচ করতাম না। একসময় আর কেউই আমাকে দেখতে আসত না।” এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
দুলাল জানান, ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের বিপরীতে সিআইডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বন্দীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতেন নিয়মিত। পরে তাকে নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। দায়িত্বশীল আচরণ ও সুনামের কারণেই কারা কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি। এভাবেই দীর্ঘ ২৩ বছর কারাজীবন অতিবাহিত করেন।
জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন দুলাল। তবে জীবনের নতুন সূচনার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করার ইচ্ছার কথা জেলা প্রশাসককে জানান। সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নেয় প্রশাসনের সহায়তায়।
স্থানীয়রা বলেন, “দুলাল জীবনের সোনালি সময় জেলখানায় কাটিয়েছে। তার কোনো জমি-ঘর নেই। বসবাসের জন্য একটি ঘর দিলে তার খুব উপকার হবে।”
দুলালের মা আয়েশা বলেন, “আমার ছেলে ফিরে এসেছে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। সরকার যদি তাকে একটি ঘর করে দেয়, তাহলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, “সমাজের প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। দুলালের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝরে গেছে। তাকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো অপরাধে সে জড়িয়ে না পড়ে।”
২৩ বছর কারাভোগ শেষে দুলালের হাতে নতুন জীবনের হাল ধরিয়ে দিল প্রশাসনের এ উদ্যোগ। এখন দেখার বিষয়—এই নতুন জীবনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি কতদূর এগিয়ে যেতে পারেন।