প্রশংসায় পঞ্চমুখ চট্টগ্রামের ডিসি ফরিদা খানম

- আপডেট সময় : ৩৩ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসকের পদে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী- ফরিদা খানম।শুধু নারী বলেই নয়, দক্ষতা, মানবিকতা ও প্রশাসনিক দূরদর্শিতায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জেলার মানুষ ও সরকারের আস্থার কেন্দ্রে। ১৭৭২ সালে যখন চট্টগ্রাম জেলা কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠা হয়, তখন থেকে এ পর্যন্ত ১৯০ জন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করলেও তাদের মধ্যে কোনো নারী ছিলেন না। দীর্ঘ এই পুরুষ প্রধান ধারার অবসান ঘটিয়ে ফরিদা খানম এই পদে অধিষ্ঠিত হন ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর।
শুরু থেকেই সক্রিয়: ফরিদা খানম দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই চট্টগ্রামের মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে গতি আনতে শুরু করেন। বাজার মনিটরিং, ভূমি প্রশাসন, শিক্ষা উন্নয়ন, পর্যটন খাত, পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম- সবখানেই তাঁর সরব উপস্থিতি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টার ও ‘কৃষকের হাট’ চালুর সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। এই উদ্যোগের ফলে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়েই লাভবান হন, পাশাপাশি বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পড়ে।
শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার: মাত্র তিন মাসেই ফরিদা খানমের নেতৃত্বে উদ্ধার হয়েছে শত কোটি টাকারও বেশি সরকারি সম্পত্তি। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বহু মূল্যবান জমি, ভবন ও জলাধার। এসব অভিযান পরিচালিত হয় স্বচ্ছতা ও আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উদ্ধার অভিযানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কালিরছড়া খাল পুনরুদ্ধার।
মানবিক নেতৃত্বের অনন্য নিদর্শন: প্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়াও একজন মানবিক ও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবেও ফরিদা খানম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় দিনেই তিনি ছুটে যান শহীদ প্রকৌশলী ওমর বিন আবছারের বাড়িতে, যিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র ছিলেন। শহীদের কবর জিয়ারত করেন, পরিবারের পাশে দাঁড়ান এবং তাৎক্ষণিকভাবে কবরস্থানের রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, শহীদের নামে সড়কের নামকরণের ব্যবস্থাও করেন, যা একটি মানবিক ও নৈতিক প্রশাসনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নজির ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ২৫ জন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং ৭৮ জন উপসহকারী কর্মকর্তার পদায়ন করা হয় উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে। বাংলাদেশে সরকারি পদায়নে এভাবে সরাসরি জনগণের সামনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের ঘটনা খুব কমই দেখা যায়।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম বাজারে প্রশাসনিক দৃঢ়তা রমজান উপলক্ষে চলমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ফরিদা খানমের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ২০ দিনের বিশেষ বাজার অভিযান। ১৬৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪৬০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ফলে বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে পড়ে এবং দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি ফিরে আসে। পর্যটনে নতুন ছোঁয়া- ফুল উৎসব ও মহাপরিকল্পনা ফরিদা খানম চট্টগ্রামের পর্যটন উন্নয়নকেও দিয়েছেন বিশেষ গুরুত্ব। জেলার ফৌজদারহাট উপকূলে বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ফুল উৎসব। ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলে সেজে ওঠে পুরো এলাকা। পর্যটকদের ভিড় বাড়ে, তৈরি হয় নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
চট্টগ্রাম পেয়েছে এক ভিন্নধর্মী প্রশাসন ফরিদা খানমের প্রশাসনের মূল মন্ত্র হলো: “দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, গতিশীল ও জনবান্ধব শাসনব্যবস্থা।” তার কথায়, “আমার বাবা একজন কলেজশিক্ষক-সবসময় বলতেন: ‘সততার সঙ্গে যোগ্য হতে হবে।’