ঢাকা ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসুতে ভোটারদের উচ্ছ্বাস, মুখরিত ক্যাম্পাস

জাতীয় নির্বাচনের এসিড টেস্ট?

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর আয়োজিত এ ভোট শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। অনেকে বলছেন, এই নির্বাচন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক ধরনের এসিড টেস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রদের অংশগ্রহণ, ভোটের পরিবেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর কৌশল সবকিছুই নজর কাড়ছে সাধারণ মানুষের। নির্বাচন ঘিরে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে এক অনন্য উচ্ছ্বাস। দীর্ঘদিন পর ভোটের সুযোগ পেয়ে তারা যেমন উত্তেজিত, তেমনি নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগে আনন্দিতও।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী এবার কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৪৬২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন সর্বাধিক ৪৮ জন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশিষ্টজনদের একটি অংশ মনে করছেন, ডাকসুর ফলাফল একধরনের টেস্ট ইলেকশন যা জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ও তরুণ প্রজন্মের অবস্থান বোঝার সুযোগ করে দেবে। আরেক অংশ মনে করেন, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও অসাম্য অংশগ্রহণ থাকলে ডাকসু ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র নাও প্রতিফলিত করতে পারে। এটা সবাই বিশ্বাস করে, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি সরকার পরিবর্তন করবে না, এর ফলাফল দলগুলোর কৌশল, প্রচার এবং তরুণ ভোটারদের মানসিকতা নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। টুকিটাকি থেকে শুরু করে হলে হলে, ক্যাফেটেরিয়া থেকে আড্ডাস্থল সবখানেই ছাত্র রাজনীতি ও ভোট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আর পরিকল্পনা। তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, এ নির্বাচন শুধু ছাত্র রাজনীতির নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠারও একটি মাইলফলক। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাওয়া তাদের কাছে এক ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা।
একজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জানান, আমরা আগে শুধু গল্পে শুনেছি ডাকসু নির্বাচনের কথা। এবার নিজে ভোট দিতে পারব, এটা ভেবেই ভালো লাগছে। অন্যদিকে চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা আমাদের জন্য শেষ সুযোগ। তাই দায়িত্বশীলভাবে ভোট দিতে চাই।
প্রার্থীরাও তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শিক্ষা, আবাসন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা—এসব বিষয় উঠে আসছে তাদের প্রচারে। সব মিলিয়ে, ঢাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে তরুণদের আশা-আকাঙ্খার এক মিলনমেলায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট-এর প্রার্থী ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান ও পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলকে বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে এবং তারা একটি বিশেষ আদর্শ লালন করছে। আমরা বারবার বলছি, সব অংশীজন ও ছাত্র সংগঠনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে যে কেউ তার নিজস্ব আদর্শ রাখতে পারে, শিক্ষকদের আমরা শিক্ষক হিসেবেই দেখতে চাই। যদি শিক্ষকরা তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন এবং তাদের দলের ছাত্রদের ফেভার (বাড়তি সুবিধা) দেন, তবে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, যা আমরা চাই না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চিরতরে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে মূলোৎপাটন করা হবে। ক্যানটিনে ফাউ খাওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতিগুলো ছিল, সেসব অপসংস্কৃতি চিরতরে মূলোৎপাটন করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও নজর থাকবে।
ভিপি পদে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি সংকেটে আমি মাঠে ছিলাম। বিশেষ করে কোঠা আন্দোলন, চাকরির বয়সসীমা। আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য মানববন্ধন, অনশন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আগের শিক্ষার্থী তারা ভালো বলতে পারবেন। স্বৈরাচার হাসিনার সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর কিভাবে হামলা করেছে। আমরা থেমে যাইনি। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে আবার আন্দোলন করেছি। আমাদের বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এই চিত্র। তিনি বলেন, একটা সময় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভয়ের কারনে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেনি। যারা মাঠে সক্রিয় ছিল তাদের বিভিন্নভাবে মামলা, হামলা করে হয়রানি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। ডাকসু শুধু একটা নির্বাচন নয়, এটা একটা অধিকার আদায়ে সংগ্রাম। দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অতীতের মত এখনও নির্বাচন ভাংচাল করার জন্য একটা গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা বিশেষ দলের প্রার্থীদের আলাদা সুবিধা দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭/৮ বছরে আমরা পদে পদে মার খেয়েছি। ১১ মাসে তার বিচার হয়নি। ১১ বছরেও তাদের বিচার হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা বলয়ের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। এই থেকে বের করার জন্যই আমাদের ডাকসু নির্বাচন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তারা তা নিচ্ছে না। প্রশাসনের এ ধরনের উদাসীনতার ফলে নির্বাচনের দিন বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নিলে নিজেদের প্যানেলের পক্ষ থেকে ‘পদক্ষেপ’নেওয়া হবে মন্তব্য করে উমামা। দূরত্ব কমাতে ও যানজট এড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি হলের ভোটকেন্দ্রে পরিবর্তন আনার দাবিও করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ডাকসুতে ভোটারদের উচ্ছ্বাস, মুখরিত ক্যাম্পাস

জাতীয় নির্বাচনের এসিড টেস্ট?

আপডেট সময় :

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর আয়োজিত এ ভোট শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। অনেকে বলছেন, এই নির্বাচন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক ধরনের এসিড টেস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রদের অংশগ্রহণ, ভোটের পরিবেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর কৌশল সবকিছুই নজর কাড়ছে সাধারণ মানুষের। নির্বাচন ঘিরে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে এক অনন্য উচ্ছ্বাস। দীর্ঘদিন পর ভোটের সুযোগ পেয়ে তারা যেমন উত্তেজিত, তেমনি নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগে আনন্দিতও।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী এবার কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৪৬২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন সর্বাধিক ৪৮ জন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশিষ্টজনদের একটি অংশ মনে করছেন, ডাকসুর ফলাফল একধরনের টেস্ট ইলেকশন যা জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ও তরুণ প্রজন্মের অবস্থান বোঝার সুযোগ করে দেবে। আরেক অংশ মনে করেন, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও অসাম্য অংশগ্রহণ থাকলে ডাকসু ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র নাও প্রতিফলিত করতে পারে। এটা সবাই বিশ্বাস করে, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি সরকার পরিবর্তন করবে না, এর ফলাফল দলগুলোর কৌশল, প্রচার এবং তরুণ ভোটারদের মানসিকতা নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। টুকিটাকি থেকে শুরু করে হলে হলে, ক্যাফেটেরিয়া থেকে আড্ডাস্থল সবখানেই ছাত্র রাজনীতি ও ভোট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আর পরিকল্পনা। তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, এ নির্বাচন শুধু ছাত্র রাজনীতির নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠারও একটি মাইলফলক। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাওয়া তাদের কাছে এক ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা।
একজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জানান, আমরা আগে শুধু গল্পে শুনেছি ডাকসু নির্বাচনের কথা। এবার নিজে ভোট দিতে পারব, এটা ভেবেই ভালো লাগছে। অন্যদিকে চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা আমাদের জন্য শেষ সুযোগ। তাই দায়িত্বশীলভাবে ভোট দিতে চাই।
প্রার্থীরাও তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শিক্ষা, আবাসন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা—এসব বিষয় উঠে আসছে তাদের প্রচারে। সব মিলিয়ে, ঢাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে তরুণদের আশা-আকাঙ্খার এক মিলনমেলায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট-এর প্রার্থী ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান ও পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলকে বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে এবং তারা একটি বিশেষ আদর্শ লালন করছে। আমরা বারবার বলছি, সব অংশীজন ও ছাত্র সংগঠনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে যে কেউ তার নিজস্ব আদর্শ রাখতে পারে, শিক্ষকদের আমরা শিক্ষক হিসেবেই দেখতে চাই। যদি শিক্ষকরা তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন এবং তাদের দলের ছাত্রদের ফেভার (বাড়তি সুবিধা) দেন, তবে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, যা আমরা চাই না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চিরতরে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে মূলোৎপাটন করা হবে। ক্যানটিনে ফাউ খাওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতিগুলো ছিল, সেসব অপসংস্কৃতি চিরতরে মূলোৎপাটন করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও নজর থাকবে।
ভিপি পদে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি সংকেটে আমি মাঠে ছিলাম। বিশেষ করে কোঠা আন্দোলন, চাকরির বয়সসীমা। আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য মানববন্ধন, অনশন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আগের শিক্ষার্থী তারা ভালো বলতে পারবেন। স্বৈরাচার হাসিনার সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর কিভাবে হামলা করেছে। আমরা থেমে যাইনি। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে আবার আন্দোলন করেছি। আমাদের বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এই চিত্র। তিনি বলেন, একটা সময় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভয়ের কারনে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেনি। যারা মাঠে সক্রিয় ছিল তাদের বিভিন্নভাবে মামলা, হামলা করে হয়রানি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। ডাকসু শুধু একটা নির্বাচন নয়, এটা একটা অধিকার আদায়ে সংগ্রাম। দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অতীতের মত এখনও নির্বাচন ভাংচাল করার জন্য একটা গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা বিশেষ দলের প্রার্থীদের আলাদা সুবিধা দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭/৮ বছরে আমরা পদে পদে মার খেয়েছি। ১১ মাসে তার বিচার হয়নি। ১১ বছরেও তাদের বিচার হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা বলয়ের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। এই থেকে বের করার জন্যই আমাদের ডাকসু নির্বাচন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তারা তা নিচ্ছে না। প্রশাসনের এ ধরনের উদাসীনতার ফলে নির্বাচনের দিন বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নিলে নিজেদের প্যানেলের পক্ষ থেকে ‘পদক্ষেপ’নেওয়া হবে মন্তব্য করে উমামা। দূরত্ব কমাতে ও যানজট এড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি হলের ভোটকেন্দ্রে পরিবর্তন আনার দাবিও করেন তিনি।