ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কোলাহলমুখর ক্যাম্পাস ক্লান্তিহীন প্রার্থীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। বহু বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যেই কোলাহলমুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এবারের ডাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থী এবং ভোটারদের উপস্থিতি এবং কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মতো। যেন নারী প্রার্থীদের মিলন মেলা। ভোটারদের সন্তুষ্টিতে দিনরাত ক্যাম্পাসে থেকে ছুটছেন নারী প্রার্থীরা।
প্রতিটি আবাসিক হল, টিএসসি চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া ও একাডেমিক ভবনে নির্বাচনী আলোচনায় এখন মুখর। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত এ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও প্রকাশ করেছে। তালিকা হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজের নাম খুঁজে নিচ্ছেন, যাচাই করছেন পরিচয়পত্র, আর প্রার্থীরা শুরু করেছেন সমর্থন সংগ্রহের দৌড়ঝাঁপ।
আসন্ন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তেমনই উৎসবের আমেজে ভাসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ অংশ নিতে না পারলেও বাকি সব ছাত্র সংগঠনের মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমাদান, সংবাদ সম্মেলন, মার্জিত ভাষায় প্রতিপক্ষের সমালোচনা-সবমিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজারের বেশি। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ধার্যকরা হয়েছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনেও ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই সিনেট ভবনের সামনে আসতে শুরু করেন প্রার্থীরা। দুপুরের পর থেকে চাপ আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ভবনের ভেতরে দাঁড়ানোর জায়গার সংকট তৈরি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এবার ডাকসুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্রঅধিকার পরিষদ ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অনেক শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন হল ও অনুষদ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও নিজেদের প্যানেল চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ পোস্টার ছাপাচ্ছে, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে এবারের ডাকসু নির্বাচনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—নারী প্রার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি। দলীয় এবং স্বতন্ত্র উভয়ভাবেই নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেন্দ্রীয় সংসদে, কেউ বা হল সংসদে প্রার্থী হচ্ছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, নারীদের এই অংশগ্রহণ ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন উমামা ফাতেমা, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন মিতু, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন শামসুন্নাহার হলে ভিপি পদে লড়বেন বলে জানান তিনি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা কেন্দ্রীয় সংসদে লড়বেন, আর একই বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের ভিপি পদে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মাহফুজা নাওয়ার নওরিনও কেন্দ্রীয় সংসদে প্রার্থী হয়েছেন। শামসুন্নাহার হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সামিয়া মাসুদ মমো, সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ইসরাত জাহান সুমনা। একই হল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইসরাত জাহান ইমু। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাহানুমা আহমেদ নিরেটও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদে নির্বাচন করবেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না।এছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মল্লিকা উমাও শামসুন্নাহার হল সংসদে নির্বাচন করবেন।
কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার প্রার্থী হয়েছেন, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক জাহানও নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচনের কথা জানান। একই সংগঠনের সুফিয়া কামাল হলের সদস্য সচিব তাসনিয়া চৌধুরী জান্নাত হল সংসদ ও ছাত্রদলের কর্মী নিশি আক্তার কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সংসদের প্রাথী ইয়াসমিন মিতু বলেন,জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাল হয়ে সামনে ছিলো নারীরা। নারীদের এই অংশগ্রহণ প্রবল হওয়ার প্রমান আমরা ১৬ জুলাই রোকেয়া হলে প্রথম ছাত্রলীগমুক্ত করার মাধ্যমে দেখতে পাই। সেই অংশগ্রহণ শুধু রাজনৈতিক জায়গায় না থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ডাকসুর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। আমি একজন নারী হিসেবে অবশ্যই চাই নারী নেতৃত্ব উঠে আসবে এবং অন্য বারের চেয়ে এইবার কেন্দ্রীয় কিংবা হল গুলোতে প্রার্থীতা বেশি হবে এবং যোগ্য নেতৃত্বরা উঠে আসবে।
মাহফুজা নওয়ার নওরিন বলেন জাতীয় নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করছি না, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন ও সংস্কার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যিনি ডাকসু এর জন্য প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন, সাধুবাদ জানাই।
ইসরাত জাহান ইমু বলেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় বাঁধা আবাসন সংকট। আবাসন সংকটকেই পুঁজি করে গণরুম ও গেস্টরুম তৈরি হয়েছিলো। এখনো “বড়রুম” নামে গণরুম এবং দুহাতের বিছানায় ডাবলিং সিস্টেম চলমান। তাই আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই শতভাগ আবাসিকীকরণে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে সুলভ মূল্যে পুষ্টিকর ও সুষম খাবারে অভাব। বেঁচে থাকতে বাসস্থান ও খাদ্যের মতো
মৌলিক চাহিদা পরিপূর্ণ করা ছাড়া শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব না৷ নির্বাচনী প্রচারণা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা বন্ধু ও সিনিয়রদের সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক করছেন, আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও পোস্টের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পৌঁছে দিচ্ছেন। হলের করিডোরে, টিএসসি চত্বরে এবং চায়ের দোকানে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ডাকসু ভোট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নারীদের এভাবে সাহসী ও দৃঢ় পদক্ষেপে নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের নারী নেতৃত্ব আরও শক্ত ভিত্তি পাবে, যা জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।
আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রচারণা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর। যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান সুযোগে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ পাবেন।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মনোনয়ন বিক্রির সময় একদিন বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরো ৯৩ জন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদের ফরম সংগ্রহ করেছেন। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৬৫৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এবং ১৮ হল সংসদে মনোনয়ন কিনেছেন ১৪২৭ জন। আগে এর সংখ্যা ছিল ৫৬৫ এবং ১২২৬।
এর মধ্যে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১০৬টি। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ অগাস্ট। পরদিন প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হলের বাইরে আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কোলাহলমুখর ক্যাম্পাস ক্লান্তিহীন প্রার্থীরা

আপডেট সময় :

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। বহু বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যেই কোলাহলমুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এবারের ডাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থী এবং ভোটারদের উপস্থিতি এবং কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মতো। যেন নারী প্রার্থীদের মিলন মেলা। ভোটারদের সন্তুষ্টিতে দিনরাত ক্যাম্পাসে থেকে ছুটছেন নারী প্রার্থীরা।
প্রতিটি আবাসিক হল, টিএসসি চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া ও একাডেমিক ভবনে নির্বাচনী আলোচনায় এখন মুখর। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত এ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও প্রকাশ করেছে। তালিকা হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজের নাম খুঁজে নিচ্ছেন, যাচাই করছেন পরিচয়পত্র, আর প্রার্থীরা শুরু করেছেন সমর্থন সংগ্রহের দৌড়ঝাঁপ।
আসন্ন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তেমনই উৎসবের আমেজে ভাসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ অংশ নিতে না পারলেও বাকি সব ছাত্র সংগঠনের মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমাদান, সংবাদ সম্মেলন, মার্জিত ভাষায় প্রতিপক্ষের সমালোচনা-সবমিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজারের বেশি। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ধার্যকরা হয়েছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনেও ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই সিনেট ভবনের সামনে আসতে শুরু করেন প্রার্থীরা। দুপুরের পর থেকে চাপ আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ভবনের ভেতরে দাঁড়ানোর জায়গার সংকট তৈরি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এবার ডাকসুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্রঅধিকার পরিষদ ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অনেক শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন হল ও অনুষদ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও নিজেদের প্যানেল চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ পোস্টার ছাপাচ্ছে, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে এবারের ডাকসু নির্বাচনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—নারী প্রার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি। দলীয় এবং স্বতন্ত্র উভয়ভাবেই নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেন্দ্রীয় সংসদে, কেউ বা হল সংসদে প্রার্থী হচ্ছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, নারীদের এই অংশগ্রহণ ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন উমামা ফাতেমা, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন মিতু, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন শামসুন্নাহার হলে ভিপি পদে লড়বেন বলে জানান তিনি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা কেন্দ্রীয় সংসদে লড়বেন, আর একই বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের ভিপি পদে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মাহফুজা নাওয়ার নওরিনও কেন্দ্রীয় সংসদে প্রার্থী হয়েছেন। শামসুন্নাহার হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সামিয়া মাসুদ মমো, সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ইসরাত জাহান সুমনা। একই হল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইসরাত জাহান ইমু। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাহানুমা আহমেদ নিরেটও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদে নির্বাচন করবেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না।এছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মল্লিকা উমাও শামসুন্নাহার হল সংসদে নির্বাচন করবেন।
কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার প্রার্থী হয়েছেন, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক জাহানও নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচনের কথা জানান। একই সংগঠনের সুফিয়া কামাল হলের সদস্য সচিব তাসনিয়া চৌধুরী জান্নাত হল সংসদ ও ছাত্রদলের কর্মী নিশি আক্তার কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সংসদের প্রাথী ইয়াসমিন মিতু বলেন,জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাল হয়ে সামনে ছিলো নারীরা। নারীদের এই অংশগ্রহণ প্রবল হওয়ার প্রমান আমরা ১৬ জুলাই রোকেয়া হলে প্রথম ছাত্রলীগমুক্ত করার মাধ্যমে দেখতে পাই। সেই অংশগ্রহণ শুধু রাজনৈতিক জায়গায় না থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ডাকসুর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। আমি একজন নারী হিসেবে অবশ্যই চাই নারী নেতৃত্ব উঠে আসবে এবং অন্য বারের চেয়ে এইবার কেন্দ্রীয় কিংবা হল গুলোতে প্রার্থীতা বেশি হবে এবং যোগ্য নেতৃত্বরা উঠে আসবে।
মাহফুজা নওয়ার নওরিন বলেন জাতীয় নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করছি না, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন ও সংস্কার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যিনি ডাকসু এর জন্য প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন, সাধুবাদ জানাই।
ইসরাত জাহান ইমু বলেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় বাঁধা আবাসন সংকট। আবাসন সংকটকেই পুঁজি করে গণরুম ও গেস্টরুম তৈরি হয়েছিলো। এখনো “বড়রুম” নামে গণরুম এবং দুহাতের বিছানায় ডাবলিং সিস্টেম চলমান। তাই আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই শতভাগ আবাসিকীকরণে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে সুলভ মূল্যে পুষ্টিকর ও সুষম খাবারে অভাব। বেঁচে থাকতে বাসস্থান ও খাদ্যের মতো
মৌলিক চাহিদা পরিপূর্ণ করা ছাড়া শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব না৷ নির্বাচনী প্রচারণা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা বন্ধু ও সিনিয়রদের সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক করছেন, আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও পোস্টের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পৌঁছে দিচ্ছেন। হলের করিডোরে, টিএসসি চত্বরে এবং চায়ের দোকানে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ডাকসু ভোট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নারীদের এভাবে সাহসী ও দৃঢ় পদক্ষেপে নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের নারী নেতৃত্ব আরও শক্ত ভিত্তি পাবে, যা জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।
আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রচারণা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর। যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান সুযোগে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ পাবেন।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মনোনয়ন বিক্রির সময় একদিন বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরো ৯৩ জন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদের ফরম সংগ্রহ করেছেন। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৬৫৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এবং ১৮ হল সংসদে মনোনয়ন কিনেছেন ১৪২৭ জন। আগে এর সংখ্যা ছিল ৫৬৫ এবং ১২২৬।
এর মধ্যে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১০৬টি। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ অগাস্ট। পরদিন প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হলের বাইরে আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।