আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার হলেও বাকিরা ডিমলায় প্রকাশ্যে ঘুরছেন

- আপডেট সময় : ১৭ বার পড়া হয়েছে
নীলফামারীর ডিমলার সদরের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ময়েন উদ্দিনের ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ নামের ইতালি প্রবাসী এক প্রতারক যুবক । আলাদিনের চেরাগের যাদুর কেরমতির মত রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক মনে যাওয়া আন্তর্জাতিক মানব পাচার কারী ও পাসপোর্ট জালিয়ত চক্রের মূল হোতা । গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে ঐ মূল হোতা সহ ৫ জনকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এন এস আই) এর তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা র্যাব- ২ গ্রেপ্তার করলেও প্রতারক চক্রের সদস্য ময়েন উদ্দিন সহ বাকি সদস্যরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিমলায়।
জানা গেছে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডিমলা সদরের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের মৃত নজর মামুদ এর ছেলে ময়েন উদ্দিন (৫৫) ও তার ২ ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৫) ও নুরল ইসলাম (৩১) কয়েক বছরের মধ্যে রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান । ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিলাসবহুল বহুতল ৫টি ভবন, নবীনগরের নির্মাণাধীন ১ টি বহুতল ভবন ও ডিমলা সদরের সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন নির্মাণাধীন একটি ভবন সহ রাতারাতি ৭টি ভবনে মালিক হয়েছেন।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, ময়েন উদ্দিনে ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ বিগত প্রায় ৬/৭ বছর আগে ইউরোপিয়ান কান্ট্রি ইতালিতে যান। সেখানে অবস্থানকালে মানব পাচার ও জাল পাসপোর্ট, ভিসা জালিয়তি চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন ।
আসাদুজ্জামান আসাদ ইতালিতে থেকে তার পিতা ময়েন উদ্দিন ও ছোট ভাই নুরুল হককে বাংলাদেশে রেখে বিশাল মানব পাচার চক্র নেটওয়ার্ক তৈরি করে অবৈধ মানব পাচার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি এই অবৈধ ব্যবসার টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ১ শত একর আবাদী জমি বন্দক, ৫০ একর জমি ক্রয় সহ ডিমলা উপজেলা সদরে শত কোটি টাকা মূল্যের ভবন তৈরির জমি ক্রয় করেন। ইতিমধ্যে ডিমলা সদরে ২টি বহু তল ভবনের নির্মাণের কাজ শুরু করছেন । এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার ৫টি স্থানে বহুতল বিলাস বহুল ভবন ক্রয় করেন । তাছাড়াও নবীনগরে একটি বহুতল ভবনের কাজ চলমান। রাতারাতি এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ায় ডিমলা উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়,গত ২০২৪ সালে ওই চক্রের সদস্য ময়েন উদ্দিন জাল ও ভুয়া পাসপোর্ট ও ভিসার মাধ্যমে বিদেশে অবৈধ পথে মানব পাচারের দায়ে ঢাকার একটি আদালতে মামলা হয় ।
ওই মামলায় ডিমলার ময়েন উদ্দিন,উত্তর সুন্দর খাতা গ্রামের তালে মামুদের ছেলে রবিউল ইসলাম ও একই গ্রামের রহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনজুয়ারা বেগম সহ ৩ জনকে আসামি করে মামলা করে। ওই মামলায় তারা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দেখিয়ে ডিমলা থানায় গ্রেফতারের জন্য গ্রেফতারী পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে পাঠানো হলেও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি । এরা ওয়ান্টেড সাজাপ্রাপ্ত ফেরারী আসামি হওয়া সত্বেও নির্দ্বিধায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করে করছেন । এ ওয়ান্টেড তালিকাটি ডিমলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের দেয়ালে লিপিবদ্ধ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা মুছে ফেলা হয়।
ঢাকা র্যাব -২ এর সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রোববার রাত ৮ টার দিকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাজারীবাগ থানা পুলিশের সহযোগিতায় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নং সেক্টরে অভিযান চালিয়ে ময়েন উদ্দিনের ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ ও নুরুল হক (৩১) কে গ্রেফতার করে । আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের মূল হোতা আসাদুজ্জামান আসাদ সহ আরো ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা র্যাব-২। গ্রেফতারকৃত অন্য ব্যক্তিরা হলেন: আব্দুল হাকিম (৫৬), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও শাহরিয়ার শেখ মুরাদ (৪৩)।
সম্প্রতি আসাদুজ্জামান আসাদ ইতালি থেকে দেশে ফিরে তার অবৈধ পথে অর্জিত হাজার কোটি টাকার সম্পদ গোছানোর চেষ্টা করছিলেন।
ঢাকা র্যাব -১২ এর মুখপাত্র জানায়, আসাদুজ্জামান আসাদ-আব্দুল্লাহ -আমিনুল চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে প্রথমে মিশর, তারপর লিবিয়া হয়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত তারা। অবৈধ পথে ইউরোপ কান্ট্রিতে পাঠানোর সময় শত শত যুবক সে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে সেখানকার জেল হাজতে রয়েছে। ভিসা- পাসপোর্ট জাল জালিয়াতি ও অবৈধ পথে বিদেশে মানব পাচারকারী আন্তর্জাতিক চক্রের বাকি সক্রিয় সদস্যরা ডিমলা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।