ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ, বিপাকে সাধারণ যাত্রী Logo ডামুড্যায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত Logo গোবিন্দগঞ্জে অপহরনকৃত মেয়েকে উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo কেশবপুরে কুটির শিল্পের নতুন দিগন্ত খায়রুল আনাম Logo সোনাগাজীতে একের পর এক চুরি-ডাকাতি, অভিযোগে করেও মামলা হয় না Logo বিশ্বনাথে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান Logo নোয়াখালী জজ কোর্টের দোতলা থেকে লাফ দিয়ে আসামির পালানোর চেষ্টা Logo ‘বিশেষ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণার্থীদের হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সাথে মতবিনিময়’ Logo লাশ পোড়ানো অগ্নিসংযোগ ও জখম মামলায় আব্দুল লতিফ মোল্লাসহ ১৮জন গ্রেপ্তার Logo ঝিনাইগাতীর ৯ গ্রামের ভাগ্যচিত্র বদলে দিতে পারে এক ব্রীজে

বেওড়া বা ভেলা ভাসান উৎসব: লোক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা ও মিলনমেলা

শাহাবুল আলম, ফরিদপুর
  • আপডেট সময় : ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলার অন্যতম প্রাচীন লোক-ধর্মীয় উৎসব বেওড়া ভাসান বা ভেলা ভাসান উৎসব। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ বছর পূর্বে পানি বা জল পীর হযরত খোয়াজ খিজির (রঃ)-এর স্মরণে এ উৎসবের সূচনা হয়। ঢাকা জেলার দোহার থানার বাস্তা গ্রামে শাহ্ পরান ফকিরের বাড়িতে শুরু হওয়া এই আয়োজন আজও জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
ঐতিহাসিক সূত্র : শাহ্ পরান ফকির আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানবমুক্তির পথ খুঁজে পান। তাঁর উত্তরসূরিরা—শাহ্ মাদার ফকির, শাহ্ সুলতান ফকির এবং পর্যায়ক্রমে শাহ্ মতি ফকির, শাহ্ মনী ফকির, শাহ্ ননী ফকির ও শাহ্ ফনি ফকির—দরবার শরীফকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে বংশধরদের মধ্যে শাহ্ ননী ফকিরের ছেলে শাহ্ আলম ফকির (শাহ্ ছানা ফকির) দরবার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান : ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয় ভেলা ভাসান। বেজোড় সংখ্যার বিছে কলাগাছ, বাদ্যযন্ত্র এবং ভক্তদের সমন্বয়ে দরবার প্রধান নির্দিষ্ট সময়ে ভেলা নদীতে ভাসিয়ে দেন। বিশ্বাস করা হয়, এতে অশুভ শক্তি দূর হয় এবং কল্যাণ নেমে আসে।
লোকজ সম্প্রীতি ও ঐতিহ্য : এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দোহার, বাস্তা, কুসুমহাটি ও আশপাশের অঞ্চলে জমে ওঠে মেলা। ঐতিহ্যবাহী মাছ, বড় আকারের মিষ্টি এবং গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া বহু সংস্কৃতির উপাদান এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে এ উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি বিশাল সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
ফকির মতবাদ ও ভেলা ভাসান : ফকির মতবাদ যেমন আত্মশুদ্ধি, মানব প্রেম ও সমতার শিক্ষা দেয়, তেমনি ভেলা ভাসান উৎসব নদীমাতৃক জীবনের প্রতীকী প্রকাশ। ফকিররা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে অন্তরের পবিত্রতাকে গুরুত্ব দেন। আর এই উৎসব সেই আধ্যাত্মিক দর্শনকে বাস্তবে রূপ দেয়, যেখানে মানুষ বিভেদ ভুলে মিলিত হয়।
উপসংহার : বেওড়া ভাসান বা ভেলা ভাসান উৎসব আজো বাঙালির আধ্যাত্মিকতা, লোক ঐতিহ্য ও সামাজিক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই আয়োজন আমাদের ঐতিহ্যকে বহমান রাখছে এবং নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করবে বলে মনে করছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বেওড়া বা ভেলা ভাসান উৎসব: লোক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা ও মিলনমেলা

আপডেট সময় :

বাংলার অন্যতম প্রাচীন লোক-ধর্মীয় উৎসব বেওড়া ভাসান বা ভেলা ভাসান উৎসব। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ বছর পূর্বে পানি বা জল পীর হযরত খোয়াজ খিজির (রঃ)-এর স্মরণে এ উৎসবের সূচনা হয়। ঢাকা জেলার দোহার থানার বাস্তা গ্রামে শাহ্ পরান ফকিরের বাড়িতে শুরু হওয়া এই আয়োজন আজও জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
ঐতিহাসিক সূত্র : শাহ্ পরান ফকির আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানবমুক্তির পথ খুঁজে পান। তাঁর উত্তরসূরিরা—শাহ্ মাদার ফকির, শাহ্ সুলতান ফকির এবং পর্যায়ক্রমে শাহ্ মতি ফকির, শাহ্ মনী ফকির, শাহ্ ননী ফকির ও শাহ্ ফনি ফকির—দরবার শরীফকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে বংশধরদের মধ্যে শাহ্ ননী ফকিরের ছেলে শাহ্ আলম ফকির (শাহ্ ছানা ফকির) দরবার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান : ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয় ভেলা ভাসান। বেজোড় সংখ্যার বিছে কলাগাছ, বাদ্যযন্ত্র এবং ভক্তদের সমন্বয়ে দরবার প্রধান নির্দিষ্ট সময়ে ভেলা নদীতে ভাসিয়ে দেন। বিশ্বাস করা হয়, এতে অশুভ শক্তি দূর হয় এবং কল্যাণ নেমে আসে।
লোকজ সম্প্রীতি ও ঐতিহ্য : এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দোহার, বাস্তা, কুসুমহাটি ও আশপাশের অঞ্চলে জমে ওঠে মেলা। ঐতিহ্যবাহী মাছ, বড় আকারের মিষ্টি এবং গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া বহু সংস্কৃতির উপাদান এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে এ উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি বিশাল সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
ফকির মতবাদ ও ভেলা ভাসান : ফকির মতবাদ যেমন আত্মশুদ্ধি, মানব প্রেম ও সমতার শিক্ষা দেয়, তেমনি ভেলা ভাসান উৎসব নদীমাতৃক জীবনের প্রতীকী প্রকাশ। ফকিররা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে অন্তরের পবিত্রতাকে গুরুত্ব দেন। আর এই উৎসব সেই আধ্যাত্মিক দর্শনকে বাস্তবে রূপ দেয়, যেখানে মানুষ বিভেদ ভুলে মিলিত হয়।
উপসংহার : বেওড়া ভাসান বা ভেলা ভাসান উৎসব আজো বাঙালির আধ্যাত্মিকতা, লোক ঐতিহ্য ও সামাজিক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই আয়োজন আমাদের ঐতিহ্যকে বহমান রাখছে এবং নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করবে বলে মনে করছি।