মাগুরা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়
হেভিওয়েটদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে উত্তাপ

- আপডেট সময় : ৩৫ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব আলোচনার ঝড় বইছে, তখন মাগুরা-১ আসনও পিছিয়ে নেই। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট নেতা। এর ফলে তৃণমূলের নেতা–কর্মী থেকে সাধারণ ভোটার পর্যন্ত সবার আগ্রহ এখন একটি প্রশ্নে কেন্দ্রীভূত কে হবেন বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব কিশোর, কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতা আলমগীর হোসেন সোহান, প্রাক্তন মন্ত্রী মাজেদুল হকের কন্যা ডা. সিমিন মজিদ, সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল আলম হিরোসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। তবে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন দুইজন তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা জেলা বিএনপির আহবায়ক আলী আহমেদ এবং জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান।
আলী আহমেদ: দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের মাঠের নেতা
মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া আলী আহমেদকে স্থানীয়রা চেনেন তৃণমূলের নির্ভরযোগ্য ‘মাঠের মানুষ’ হিসেবে। তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি শুধু ইউনিয়নের মানুষের আস্থা অর্জন করেননি, বরং সরকারের স্বীকৃতিও পেয়েছেন বারবার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় স্বর্ণপদক অর্জন তাঁর জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে।
বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ১৯৯০-এর দশকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। এরপর সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিব ও আহ্বায়কসহ জেলা বিএনপির প্রায় সব শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, এমনকি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ হামলার মুখেও তিনি কখনো রাজপথ ছাড়েননি।
১৯৯৪ সালের মাগুরা-২ উপ-নির্বাচনে তাঁর ভূমিকাই প্রমাণ করে দলের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রচারণা সফরের সময় তিনি শুধু দলের প্রার্থীকে এগিয়ে নেননি, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত ‘সার্কিট হাউজ বিতর্ক’-এ দৃঢ় অবস্থান নিয়ে আলোচনায় আসেন। সে সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ হয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।
কেবল রাজনীতি নয়, সামাজিক দায়িত্ববোধেও তাঁর সক্রিয়তা রয়েছে। করোনা মহামারির সময় ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা কিংবা বন্যা-দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো—এসব কর্মকাণ্ড তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, “মাগুরাকে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলাই আমার অঙ্গীকার। বেকারত্ব নিরসন, মাদকমুক্ত সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নকে তিনি মূল প্রতিশ্রুতি হিসেবে সামনে এনেছেন। স্থানীয় জরিপেও দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে জনপ্রিয়তায় তিনি শীর্ষে রয়েছেন।
মনোয়ার হোসেন খান: কেন্দ্রের আস্থাভাজন সংগঠক
অন্যদিকে আলোচনায় রয়েছেন মাগুরা জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান। আবালপুর গ্রামের এই শিক্ষিত তরুণ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন এবং শহীদুল্লাহ হল শাখায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে প্রথমবার সরাসরি রাজনীতিতে আসেন তিনি। যদিও সেবার জয়ী হতে পারেননি, তবে রাজনৈতিক ময়দানে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। পরবর্তীতে কর্মজীবনে ইনসেপটা ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করেছেন।
২০১৫ সালের পেট্রোল বোমা হামলার মামলায় আসামি হয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। সেখানে ব্যবসায় মনোনিবেশ করলেও ২০১৮ সালে তারেক রহমানের নির্দেশে দেশে ফিরে আসেন। সে বছর মাগুরা-১ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী ছিলেন তিনি। তবে বহুল আলোচিত রাতের ভোট এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুজ্জামান শিখরের কাছে পরাজিত হন।
বর্তমানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে মনোয়ার হোসেন খান সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও বিশেষত তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
কে হবেন বিএনপির ভরসা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাগুরা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নির্ধারণ সহজ হবে না। আলী আহমেদ যেখানে জনসমর্থন ও তৃণমূলের ভরসার প্রতীক, সেখানে মনোয়ার হোসেন খানকে কেন্দ্র দেখছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাবনা হিসেবে।
স্থানীয় কর্মীরা মনে করছেন, আলী আহমেদের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তাঁকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। অপরদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনোয়ারও যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিশ্চিত।
সব মিলিয়ে মাগুরা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্ব-সমীকরণে তৈরি হয়েছে এক উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহ। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিএনপি কাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মাঠে নামায় তৃণমূলের আস্থাভাজন আলী আহমেদকে, নাকি কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ মনোয়ার হোসেন খানকে।