লোহাগাড়ায় আ’লীগ সেক্রেটারীর বাবা পাচ্ছেন তিন কোটি টাকার খাসজমি

- আপডেট সময় : ১৩ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন হিরুর বাবা গোলাম হোসনকে তিন কোটি টাকার খাসজমি বন্দোবস্তী দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা।
খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর লোহাগাড়া মৌজার বটতলী স্টেশনে বিএস ৭১৩ দাগের পাঁচ শতক খাসজমি দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্তীর জন্য আবেদন করেন গোলাম হোসেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) চট্টগ্রাম এর স্মারক নং- ০৫.৪২১৫০০.৩০২.১২.৪৪০.২৫-১৯৫৭ এর অনূকূলে তদন্ত দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) লোহাগাড়াকে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) গেল ৭ সেপ্টেম্বর ওই খাসজমি বন্দোবস্তী দেওয়ার উপযোগী কিনা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন আধুনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহজাহান আক্তারকে। তাড়াহুড়া করে মাত্র তিন দিনে অফিসে বসেই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহজাহান আক্তার গোলাম হোসনকে ওই খাসজমি দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্তী দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। অথচ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মাসকে মাস পড়ে থাকে ফাইল। তিনদিনেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় সচেতন মহলকে হতবাক করেছে।
এ বিষয়ে আধুনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহজাহান আক্তার বলেন, সব কথা বলা যায় না। উপর মহলের নির্দেশ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনস্থ খাজা মার্কেট, ইব্রাহিম মার্কেট, জসিম গং মালিকানাধীন মার্কেট, এমদাদিয়া মার্কেট, সিকদার সেন্টার, ভাইভাই মার্কেটসহ বেশ কয়টি মার্কেটের পেছনেই ওই খাসজমি। এই খাসজমি দিয়েই এসব মার্কেটসহ পাঁচ শতাধিক দোকানের পানি নিষ্কাসন হয়। বর্ষা মৌসুমেও পানি চলাচল করে এ খাসজমির উপর দিয়ে। অথচ, তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবিত ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হলে পাবলিক ইজমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
দেখা যায়, গোলাম হোসেন মালিকানাধীন জায়গায় ‘এমদাদিয়া লোহাগাড়া ট্রেড সেন্টার’ নামে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের কাজ চলছে। ওই খাসজমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের জন্যই বন্দোবস্তী নেওয়ার পায়তারা করছেন বলে জানা যায়। সম্প্রতি সময়ে এ এলাকায় এক শতক জমি বিক্রি হয়েছে ৬০ লাখ টাকায়। সে হিসেবে ৫ শতক জমির মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি টাকা।
তাছাড়াও, তদন্ত প্রতিবেদনে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। ১০/১৫ টি মার্কেটের পানি নিষ্কাশন হয় ওই খাসজমিতে। এক সময় ওই খাস জমি জনসাধারণের চলাচলের পথও ছিল। যা আরএস ও বিএস খতিয়ানে উল্লেখ রয়েছে। লোহাগাড়া আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন হিরুর বাবা গোলাম হোসেনকে খাসজমি বন্দোবস্তী দিতে তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে লোহাগাড়া উপজেলার ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, উপজেলা সদরে কোথাও গণশৌচাগার নেই। ক্রেতা -বিক্রেতারা সব সময় পড়েন বিপাকে। অথচ, খাসজমিগুলো বন্দোবস্তো দিয়ে দেওয়া হয়।
দোকান মালিক আব্দুস সালাম নামের একজন বলেন, মার্কেটের পানি নিষ্কাসনের জায়গা বন্দোবস্তো দেওয়া হলে বর্ষা মৌসুমে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হবে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের।
জানা যায়, এ বছর ১৬ মার্চ ওই খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ সংবাদ সম্মেলনের পর কিছু দিন বন্দোবস্তোর কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও গোপনে আবারও ওই আওয়ামী লীগ নেতার পিতাকে বন্দোবস্তো দেওয়ার পায়তারা করছে প্রশাসন।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, জনস্বার্থ উপেক্ষিত হলে খাসজমি বন্দোবস্তী দেওয়া হয় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।