ঢাকা ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কাশিয়ানীতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার Logo মহেশখালীতে হত্যা চেষ্টা ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ৭ আসামি গ্রেপ্তার Logo ইসলামপুরে মিথ্যাচার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo সালথা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নাহিদ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল Logo কালীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo রুপগঞ্জে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড Logo বাগেরহাটে বিআরটিসি গাড়ির অবৈধ কাউন্টার ও মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন, করিমন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo জামালপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বড়াইগ্রাম শাখা অফিস শুভ উদ্বোধন Logo পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ‘সংবিধানবিরোধী’, পুনর্বহালের দাবি নেপালের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ‘সংবিধানবিরোধী’, পুনর্বহালের দাবি নেপালের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের

আরিফুর রহমান
  • আপডেট সময় : ৯৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে দুর্নীতি বিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আটটি দল অভিযোগ করে যে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। পাউডেল সদ্য নিয়োগ পাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।

সপ্তাহজুড়ে বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি নিহত হয়। এই আন্দোলনের সূচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘটনায়। পরে বিক্ষোভ এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে উত্তেজিত জনতা পার্লামেন্ট ভবন ও সরকারি দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলেও ততক্ষণে বিক্ষোভ এক ভয়াবহ গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

শনিবার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে আট দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেন। তাঁরা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং নেপালের বিচার বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও পার্লামেন্ট ভাঙা ছিল ‘জেন–জি’ প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মেটানো উচিত। আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পাউডেল সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘সংবিধান বেঁচে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা বেঁচে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ রয়েছে।’

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি গত শুক্রবার সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির জন্য কার্কি পরিচিত। ‘জেন জেড’ প্রজন্মের ছাত্রনেতারাও তাঁর নেতৃত্বকে সমর্থন জানাচ্ছে।

তবে তাঁর সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পুড়ে যাওয়া সংসদ ভবন ও সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠন, পরিবর্তন চাইতে থাকা তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না—এমন আস্থা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বিক্ষোভের মধ্যে রাজধানীর রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কার্কি শপথ নেওয়ার পর সেনারা ব্যারাকে ফিরে গেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই অস্থিরতার পর দেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।

প্রথমে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তেই আন্দোলনের সূত্রপাত। হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর আগেই সামাজিক মাধ্যমে ‘নেপো কিডস’ নামের একটি প্রচারণা শুরু হয়। এতে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ‘সংবিধানবিরোধী’, পুনর্বহালের দাবি নেপালের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের

আপডেট সময় :

নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে দুর্নীতি বিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আটটি দল অভিযোগ করে যে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। পাউডেল সদ্য নিয়োগ পাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।

সপ্তাহজুড়ে বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি নিহত হয়। এই আন্দোলনের সূচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘটনায়। পরে বিক্ষোভ এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে উত্তেজিত জনতা পার্লামেন্ট ভবন ও সরকারি দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলেও ততক্ষণে বিক্ষোভ এক ভয়াবহ গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

শনিবার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে আট দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেন। তাঁরা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং নেপালের বিচার বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও পার্লামেন্ট ভাঙা ছিল ‘জেন–জি’ প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মেটানো উচিত। আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পাউডেল সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘সংবিধান বেঁচে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা বেঁচে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ রয়েছে।’

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি গত শুক্রবার সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির জন্য কার্কি পরিচিত। ‘জেন জেড’ প্রজন্মের ছাত্রনেতারাও তাঁর নেতৃত্বকে সমর্থন জানাচ্ছে।

তবে তাঁর সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পুড়ে যাওয়া সংসদ ভবন ও সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠন, পরিবর্তন চাইতে থাকা তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না—এমন আস্থা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বিক্ষোভের মধ্যে রাজধানীর রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কার্কি শপথ নেওয়ার পর সেনারা ব্যারাকে ফিরে গেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই অস্থিরতার পর দেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।

প্রথমে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তেই আন্দোলনের সূত্রপাত। হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর আগেই সামাজিক মাধ্যমে ‘নেপো কিডস’ নামের একটি প্রচারণা শুরু হয়। এতে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছিল।