ঢাকা ০১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

গৃহবধুকে আ.লীগ নেতার ধর্ষনের চেষ্টা, নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার

কাঞ্চন সিকদার, কিশোরগঞ্জ
  • আপডেট সময় : ৩৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এক গৃহবধুকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাঈম ভূঞা রেনু’র (৫৫) বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের পর থানায় মামলা হলেও অধরা রেনু। মামলা করায় ভুক্তভোগীকে হত্যা ও বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে রেনু ও তার লোকজন। নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার। রেনুকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ, এমনটাই বলছেন হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন।
জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল গ্রামের মৃত হাজী নোয়াব আলী ভূঞা’র ছেলে আবু নাঈম ভূঞা রেনু (৫৫)। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এলাকায়ও প্রভাবশালীদের একজন তিনি। ভয়ে গ্রামের মানুষ কখনও তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। গ্রামের মাতব্বর হওয়ায় বিভিন্ন শালিশ দরবার করে বেড়ান। এলাকায় তার একটি বাহিনী রয়েছে যারা রেনু’র হয়ে বিভিন্ন বেআইনি কাজ করে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট একই এলাকার জমসেদ উদ্দিন মিলনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫)। অভিযোগ উঠেছে আলমগীরকে সাথে নিয়ে এলাকার এক গৃহবধুকে জোরপূর্বক ধর্ষন করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধু। স্থানীয়রা বলছেন, এর আগেও রেনুর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ আছে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় অভিযুক্ত আবু নাঈম ভূঞা রেনু ও তার সহযোগী আলমগীর হোসেন ভুক্তভোগী ওই নারী’র ঘরের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেই। সে সময় ওই নারীর স্বামী বাড়িতে না থাকায় কৌশলে বসত ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। প্রথমে ভালোভাবে কথাবার্তা বললেও হঠাৎ করে কুরুচিপূর্ণ কথা শুরু করেন। সে সময় রেনুকে ঘর থেকে বাহির হয়ে যাওয়ার কথা বলা হলে ওই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলে ভুক্তভোগী নারী চিৎকার করতে থাকে। এসময় ভুক্তভোগীকে মারধর করে শ্লীলতাহানী করে গায়ের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে রেনু। সেখান থেকে ছুটে গিয়ে ডাক চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশী লোকজন ছুটে আসে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের কাছে বিচার প্রার্থী হলেও রেনু’র বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনি। অভিযোগে আরও বলা হয়, এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাদকসেবনসহ চুরি, ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত তার বাহিনী। এলাকায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদেরকেও রাস্তায় উত্যক্ত করে তার লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগের আমলে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আবু নাঈম ভূঞা রেনু। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন গ্রাম্য শালিশ করে থাকে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কেউ কোন অভিযোগ করতে সাহস পায়না। তার কিছু লোকজন দিয়ে এলাকায় বেআইনি কাজ করে। এখনও আগের মতো প্রভাব বিস্তার করে আছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে আবু নাঈম ভূঞা রেনু আমার ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসে। আমি তখন ঘরের বাহিরে কাজ করছিলাম। আমার স্বামী বাড়িতে ছিল না। এসময় কথা আছে বলে আমাকে ঘরের ভেতর আসতে বলে। যাওয়ার পর আমাকে বিভিন্ন ভাবে কুপ্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় গালিগালাজ করে মারধর করে। পরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে আমি সেখান থেকে ছুটে গিয়ে ডাক চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। আমার জামা কাপড় ছিড়ে ফেলেছে। মামলা করার পর থেকে প্রতিনিয়ত আমার ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার স্বামীকে হত্যা করে ফেলবে এবং বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে বলেও জানান রেনু। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
অভিযুক্ত আবু নাঈম ভূঞা রেনু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি না বিএনপি করি।
হোসেনপুর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন বলেন, আবু নাঈম ভূঞা এখনও আওয়ামী লীগের নেতা। কখনও বিএনপি করেনি। সে আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে। এখন বাঁচার জন্য বিএনপি’র পরিচয় দেয়।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন আছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গৃহবধুকে আ.লীগ নেতার ধর্ষনের চেষ্টা, নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার

আপডেট সময় :

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এক গৃহবধুকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাঈম ভূঞা রেনু’র (৫৫) বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের পর থানায় মামলা হলেও অধরা রেনু। মামলা করায় ভুক্তভোগীকে হত্যা ও বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে রেনু ও তার লোকজন। নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার। রেনুকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ, এমনটাই বলছেন হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন।
জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল গ্রামের মৃত হাজী নোয়াব আলী ভূঞা’র ছেলে আবু নাঈম ভূঞা রেনু (৫৫)। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এলাকায়ও প্রভাবশালীদের একজন তিনি। ভয়ে গ্রামের মানুষ কখনও তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। গ্রামের মাতব্বর হওয়ায় বিভিন্ন শালিশ দরবার করে বেড়ান। এলাকায় তার একটি বাহিনী রয়েছে যারা রেনু’র হয়ে বিভিন্ন বেআইনি কাজ করে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট একই এলাকার জমসেদ উদ্দিন মিলনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫)। অভিযোগ উঠেছে আলমগীরকে সাথে নিয়ে এলাকার এক গৃহবধুকে জোরপূর্বক ধর্ষন করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধু। স্থানীয়রা বলছেন, এর আগেও রেনুর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ আছে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় অভিযুক্ত আবু নাঈম ভূঞা রেনু ও তার সহযোগী আলমগীর হোসেন ভুক্তভোগী ওই নারী’র ঘরের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেই। সে সময় ওই নারীর স্বামী বাড়িতে না থাকায় কৌশলে বসত ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। প্রথমে ভালোভাবে কথাবার্তা বললেও হঠাৎ করে কুরুচিপূর্ণ কথা শুরু করেন। সে সময় রেনুকে ঘর থেকে বাহির হয়ে যাওয়ার কথা বলা হলে ওই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলে ভুক্তভোগী নারী চিৎকার করতে থাকে। এসময় ভুক্তভোগীকে মারধর করে শ্লীলতাহানী করে গায়ের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে রেনু। সেখান থেকে ছুটে গিয়ে ডাক চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশী লোকজন ছুটে আসে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের কাছে বিচার প্রার্থী হলেও রেনু’র বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনি। অভিযোগে আরও বলা হয়, এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাদকসেবনসহ চুরি, ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত তার বাহিনী। এলাকায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদেরকেও রাস্তায় উত্যক্ত করে তার লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগের আমলে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আবু নাঈম ভূঞা রেনু। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন গ্রাম্য শালিশ করে থাকে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কেউ কোন অভিযোগ করতে সাহস পায়না। তার কিছু লোকজন দিয়ে এলাকায় বেআইনি কাজ করে। এখনও আগের মতো প্রভাব বিস্তার করে আছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে আবু নাঈম ভূঞা রেনু আমার ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসে। আমি তখন ঘরের বাহিরে কাজ করছিলাম। আমার স্বামী বাড়িতে ছিল না। এসময় কথা আছে বলে আমাকে ঘরের ভেতর আসতে বলে। যাওয়ার পর আমাকে বিভিন্ন ভাবে কুপ্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় গালিগালাজ করে মারধর করে। পরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে আমি সেখান থেকে ছুটে গিয়ে ডাক চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। আমার জামা কাপড় ছিড়ে ফেলেছে। মামলা করার পর থেকে প্রতিনিয়ত আমার ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার স্বামীকে হত্যা করে ফেলবে এবং বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে বলেও জানান রেনু। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
অভিযুক্ত আবু নাঈম ভূঞা রেনু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি না বিএনপি করি।
হোসেনপুর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন বলেন, আবু নাঈম ভূঞা এখনও আওয়ামী লীগের নেতা। কখনও বিএনপি করেনি। সে আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে। এখন বাঁচার জন্য বিএনপি’র পরিচয় দেয়।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন আছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে।