ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

সংবাদ প্রকাশের পর সেই ইউএনওর বদলি, ভাড়াটে লোক দিয়ে মানববন্ধন

এ এইচ ইমরান
  • আপডেট সময় : ৫৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দৈনিক গনমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দুর্নীতি অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর গোদাগাড়ী উপজেলার সেই ইউএনও বদলির আদেশ হয়েছে জয়পুর হাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়। এবার বদলি ঠেকাতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন। প্রশাসনের আওতায় দর্জি প্রশিক্ষণার্থীদের,স্কুলের কোমলমতি শিশুদের দিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্ব সকাল ১০ টায় মানববন্ধন করিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা দুলালের সহায়তায় স্কুলের ছোট শিশুদের মাঠে নামিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ছোট্ট শিশুদের ইউএনওর মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কতটুকু আইনসিদ্ধ প্রশ্ন রেখেছেন এলাকাবাসী। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতা শান্ত কুমার মজুমদার ও দুলালের নেতৃত্বে নিজের বদলি ঠেকাতে মানববন্ধন করিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।মানববন্ধনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। এতে এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিন্দা জানিয়েছেন।
শিক্ষক আমিনুল ইসলাম মিলন মাস্টার বলেন, ছোট বাচ্চাদের কেন মাঠে নামানো হলো? আর কোন মানুষ ছিল না? ইউএনও কে যদি উপজেলার সবাই ভালবাসে তাহলে হাজারও জনগণের অভিযোগ কেন তার বিরুদ্ধে? কোমলমতি শিশুদের মাঠে নামানোর অকৌশল থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
সমন্বয়ক মিডিয়া সেল জেলা কৃষকদলের এস এম আরিফুজ্জামান দিনার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বদলি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে মানববন্ধন কতটা যৌক্তিক আমরা জানতে চাই।
এ্যাডভকেট আশরাফ মল্লিক বলেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনও সাহেব কোন আইনে শিশুদের মাঠে নামিয়েছে এটার জবাব দেওয়া উচিত। কোমলমতি শিশুরা কি শিখবে এখান থেকে? ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কিসের বার্তা দেয় এটা জনগণের সম্মুখে স্পষ্ট করা উচিত। ইউএনও সাহেব অর্থের বিনিময়ে আবার কাউকে কাউকে চাপ প্রয়োগ করে মানববন্ধন করিয়েছেন। এটা লজ্জাজনক।আমরা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার ও সরকারের প্রতিনিধির কাছে এটা আশা করি না।
উল্লেখ্য, জমি কেনাবেচার কর থেকে ১% রাখা হয় এলাকার উন্নয়নের জন্য। এই টাকা জমা হয় উপজেলার ১%-এর ব্যাংক হিসাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টাকা বণ্টন করেন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) মাঝে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ১% এর টাকা বণ্টন করার সময় তিনি ২৫% ঘুষ নেন। এ নিয়ে গত ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
উপজেলার ফরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বাবলু এই অভিযোগ করেছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য। অভিযোগের সঙ্গে ১০ পাতায় প্রায় এক হাজার মানুষের স্বাক্ষরও সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইউএনও ফয়সাল আহমেদকে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুবায়ের হোসেন ওই বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে দেয়া লিখিত অভিযোগে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ১% এর টাকা বিভিন্ন ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে বণ্টন করা হয়। সেখান থেকে ইউএনও ঘুষ নেন ২৫%। এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ ইউএনওকে কিছু বলতে গেলে তিনি সাধারণ মানুষকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান। স্থানীয় হাজার হাজার জনগণ পরোক্ষ স্বাক্ষী আছেন।
এই সমস্ত বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ করলে তারা বলেন, আমি কি করছি না করছি সেটা অফিস দেখবে। তোমাদের মাথা ঘামানোর কোন দরকার নাই। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ঈদে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ভি.জি.ডি এবং ডি.জি.এফ চাল সাধারণ গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ না করে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার কারণে গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসলাম আলীকে হাতেনাতে ধরেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। কিন্তু কোনো আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে ছেড়ে দেন। আর সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ভ্যানচালককে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চর আষাড়িয়াদহ ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ভি.জি.ডি এবং ভি.জি.এফ খাতের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জ্ঞাত হওয়ার পরও ইউএনও কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পার্সেন্টেজ গ্রহণ করে তিনি পুরো নীরবতা পালন করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন খাতের জন্য কোনো কার্যাদেশ না দিয়েই জনগণের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্ব খাতের ট্যাক্সের টাকা সরকারি খাতে জমা করেন না ইউএনও। কোন প্রকার কাজ না করে খরচ দেখিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধেও ইউএনও ফয়সাল আহম্মেদ কোনো পদক্ষেপ নেন না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ীর কাপাশিয়াপাড়া এলাকার হামিদুজ্জামান মোহনপুর ইউনিয়নের নলীগ্রাম মৌজায় আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে খনন করছেন। বেআইনি এই পুকুর খনন বন্ধের জন্য ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি পুকুর খননকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগকারী আবদুল হামিদ বাবলু জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে ডেকেছিলেন। তিনি এবং আরেকজন ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়ে এসেছেন। তাকে আরেকদফা ডাকা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ইউএনওকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এই বদলি ঠেকাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন ইউএনও।তিনি আওয়ামী লীগের লোক ভাড়া করে মানববন্ধনের নেতৃত্বে বসিয়েছেন।এখনো এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
এদিকে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ফয়সাল আহমেদ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বদলি করা হয়েছিল। রাজশাহীতে এসেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, এরা কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে বলতে পারব না। পাচার করা চাল উদ্ধার করলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ যদি তদন্তে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা পায়, তাহলে পুলিই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ১% এর টাকা থেকে ঘুষ নেয়াসহ অন্য সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সরকারি চাকরি করি, যেখানে সরকার প্রয়োজন মনে করে সেখানেই বদলি করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সংবাদ প্রকাশের পর সেই ইউএনওর বদলি, ভাড়াটে লোক দিয়ে মানববন্ধন

আপডেট সময় :

দৈনিক গনমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দুর্নীতি অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর গোদাগাড়ী উপজেলার সেই ইউএনও বদলির আদেশ হয়েছে জয়পুর হাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়। এবার বদলি ঠেকাতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন। প্রশাসনের আওতায় দর্জি প্রশিক্ষণার্থীদের,স্কুলের কোমলমতি শিশুদের দিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্ব সকাল ১০ টায় মানববন্ধন করিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা দুলালের সহায়তায় স্কুলের ছোট শিশুদের মাঠে নামিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ছোট্ট শিশুদের ইউএনওর মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কতটুকু আইনসিদ্ধ প্রশ্ন রেখেছেন এলাকাবাসী। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতা শান্ত কুমার মজুমদার ও দুলালের নেতৃত্বে নিজের বদলি ঠেকাতে মানববন্ধন করিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।মানববন্ধনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। এতে এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিন্দা জানিয়েছেন।
শিক্ষক আমিনুল ইসলাম মিলন মাস্টার বলেন, ছোট বাচ্চাদের কেন মাঠে নামানো হলো? আর কোন মানুষ ছিল না? ইউএনও কে যদি উপজেলার সবাই ভালবাসে তাহলে হাজারও জনগণের অভিযোগ কেন তার বিরুদ্ধে? কোমলমতি শিশুদের মাঠে নামানোর অকৌশল থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
সমন্বয়ক মিডিয়া সেল জেলা কৃষকদলের এস এম আরিফুজ্জামান দিনার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বদলি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে মানববন্ধন কতটা যৌক্তিক আমরা জানতে চাই।
এ্যাডভকেট আশরাফ মল্লিক বলেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনও সাহেব কোন আইনে শিশুদের মাঠে নামিয়েছে এটার জবাব দেওয়া উচিত। কোমলমতি শিশুরা কি শিখবে এখান থেকে? ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কিসের বার্তা দেয় এটা জনগণের সম্মুখে স্পষ্ট করা উচিত। ইউএনও সাহেব অর্থের বিনিময়ে আবার কাউকে কাউকে চাপ প্রয়োগ করে মানববন্ধন করিয়েছেন। এটা লজ্জাজনক।আমরা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার ও সরকারের প্রতিনিধির কাছে এটা আশা করি না।
উল্লেখ্য, জমি কেনাবেচার কর থেকে ১% রাখা হয় এলাকার উন্নয়নের জন্য। এই টাকা জমা হয় উপজেলার ১%-এর ব্যাংক হিসাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টাকা বণ্টন করেন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) মাঝে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ১% এর টাকা বণ্টন করার সময় তিনি ২৫% ঘুষ নেন। এ নিয়ে গত ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
উপজেলার ফরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বাবলু এই অভিযোগ করেছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য। অভিযোগের সঙ্গে ১০ পাতায় প্রায় এক হাজার মানুষের স্বাক্ষরও সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইউএনও ফয়সাল আহমেদকে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুবায়ের হোসেন ওই বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে দেয়া লিখিত অভিযোগে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ১% এর টাকা বিভিন্ন ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে বণ্টন করা হয়। সেখান থেকে ইউএনও ঘুষ নেন ২৫%। এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ ইউএনওকে কিছু বলতে গেলে তিনি সাধারণ মানুষকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান। স্থানীয় হাজার হাজার জনগণ পরোক্ষ স্বাক্ষী আছেন।
এই সমস্ত বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ করলে তারা বলেন, আমি কি করছি না করছি সেটা অফিস দেখবে। তোমাদের মাথা ঘামানোর কোন দরকার নাই। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ঈদে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ভি.জি.ডি এবং ডি.জি.এফ চাল সাধারণ গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ না করে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার কারণে গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসলাম আলীকে হাতেনাতে ধরেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। কিন্তু কোনো আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে ছেড়ে দেন। আর সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ভ্যানচালককে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চর আষাড়িয়াদহ ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ভি.জি.ডি এবং ভি.জি.এফ খাতের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জ্ঞাত হওয়ার পরও ইউএনও কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পার্সেন্টেজ গ্রহণ করে তিনি পুরো নীরবতা পালন করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন খাতের জন্য কোনো কার্যাদেশ না দিয়েই জনগণের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্ব খাতের ট্যাক্সের টাকা সরকারি খাতে জমা করেন না ইউএনও। কোন প্রকার কাজ না করে খরচ দেখিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধেও ইউএনও ফয়সাল আহম্মেদ কোনো পদক্ষেপ নেন না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ীর কাপাশিয়াপাড়া এলাকার হামিদুজ্জামান মোহনপুর ইউনিয়নের নলীগ্রাম মৌজায় আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে খনন করছেন। বেআইনি এই পুকুর খনন বন্ধের জন্য ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি পুকুর খননকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগকারী আবদুল হামিদ বাবলু জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে ডেকেছিলেন। তিনি এবং আরেকজন ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়ে এসেছেন। তাকে আরেকদফা ডাকা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ইউএনওকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এই বদলি ঠেকাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন ইউএনও।তিনি আওয়ামী লীগের লোক ভাড়া করে মানববন্ধনের নেতৃত্বে বসিয়েছেন।এখনো এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
এদিকে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ফয়সাল আহমেদ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বদলি করা হয়েছিল। রাজশাহীতে এসেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, এরা কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে বলতে পারব না। পাচার করা চাল উদ্ধার করলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ যদি তদন্তে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা পায়, তাহলে পুলিই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ১% এর টাকা থেকে ঘুষ নেয়াসহ অন্য সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সরকারি চাকরি করি, যেখানে সরকার প্রয়োজন মনে করে সেখানেই বদলি করতে পারে।