ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

অসংখ্য নারীর জীবন নষ্টে হিটলার মাহমুদ

রাজশাহী ব্যুরো
  • আপডেট সময় : ৬৭২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কখনও প্রেমের অভিনয়, কখনও বিয়ের প্রলোভন, আবার কখনও বিলাসী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক (অবৈধ) করে একের পর এক নারীর জীবন নষ্ট করছে হিটলার নামের এক প্রতারক। কে এই হিটলার ওরফে হিটলার মাহমুদ?
হিটলার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের হাসনিপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন মেম্বারের ছেলে। একের পর এক নারীর জীবন সর্বনাশ করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দলীয় ক্ষমতার দাপট, রাজনৈতিক আশ্রয় আর প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড চলছিল তার। রাজশাহী ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদের সহধর্মিণীর পিএস পরিচয়কে হাতিয়ার করে সে নারীদের বিয়ে ও ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, শারীরিক নির্যাতন, অর্থ হাতানো এবং ব্ল্যাকমেইলের মতো জঘন্য অপকর্ম চালানো যেন তার নেশায় পরিনত হয়েছে। হিটলার নিজ এলাকায় প্রথম বিয়ে করলেও সেই সংসার বেশিদিন টিকেনি। সেই রেস কাটতে না কাটতেই আবার একটি গরীব অসহায় মেয়েকে প্রেমের জালে জড়িয়ে মেয়েটির সর্বনাশ করে এবং সেটাও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মেয়েটি বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন এবং চাকরি নিয়ে ব্যস্ত জীবন পার করছেন। এরপর এ্যানি, যুথি, মিতুসহ অসংখ্য নারীর সাথে প্রতারনা করেছে।
এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় হিটলারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও চলমান আছে। মামলাটি বাগমারা উপজেলার জামালপুর এলাকার এক ভুক্তভোগী বাগমারা আমলি আদালতে মামলা (নাম্বার-১১৫১) দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছে হিটলার তার সঙ্গে টানা পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্ক রাখে, রাজশাহী শহরের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় এক সঙ্গে থেকেছে এবং বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
এভাবে আরেক নারীর সর্বনাশ করেছে সে। প্রায় দুই বছর আগে খালগ্রাম এলাকার এক তরুণীর সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। মেয়েটি রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও একইভাবে ফাঁদে ফেলে। মৌখিকভাবে নাটকীয় বিয়ে করে সম্পর্ক গড়লেও বিয়ে রেজিস্ট্রির প্রসঙ্গে মুখ খোলা মাত্রই মেয়েটিকে গালাগাল, হুমকি এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শুধু তাই নয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সে মেয়েটির গোপন ভিডিও ও ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত বলে অভিযোগে পাওয়া যায়। এঘটনায় গত ২৫ সেপ্টম্বর রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রীমা থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। ভুক্তভোগী তার অভিযোগে বলেন, ভুক্তভোগীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি নির্মমভাবে মারধর করে অচেতন করে রুমে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় প্রতারক হিটলার। অবশেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেয়েটির উপর আবারও চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। প্রাণ বাঁচাতে অসহায় অবস্থায় সে আত্মীয়দের খবর দেয়। পরে পুলিশ ও স্বজনরা উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এসিসি ইউনিটে ভর্তি করান। চিকিৎসা শেষে এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯ (১)(ক) ধারাসহ একাধিক ধারায় অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এব্যাপারে আরএমপি চন্দ্রীমা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী মাসুদ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই ধরনের একটি ঘটনার অভিযোগ হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি ঘটনার সত্যতা কতটুকু। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযোগটি এজাহারভিক্ত করে আসামী গ্রেফতার করা হবে।
একের পর এক নারীর জীবন নষ্ট করায় স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এতদিন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘুরে বেড়ালেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একের পর এক কুকীর্তির মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে এই হিটলার মাহমুদের। সাধারণ মানুষ এখন কঠোর আইনগত শাস্তির দাবি তুলেছেন। সকলের প্রশ্ন একটায়, হিটলার কি বিশ্ব প্রেমিক না কি ধর্ষক? যদি সে অপরাধী হয় তাহলে কেন এখনও গ্রেফতার হচ্ছে না?

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অসংখ্য নারীর জীবন নষ্টে হিটলার মাহমুদ

আপডেট সময় :

কখনও প্রেমের অভিনয়, কখনও বিয়ের প্রলোভন, আবার কখনও বিলাসী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক (অবৈধ) করে একের পর এক নারীর জীবন নষ্ট করছে হিটলার নামের এক প্রতারক। কে এই হিটলার ওরফে হিটলার মাহমুদ?
হিটলার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের হাসনিপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন মেম্বারের ছেলে। একের পর এক নারীর জীবন সর্বনাশ করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দলীয় ক্ষমতার দাপট, রাজনৈতিক আশ্রয় আর প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড চলছিল তার। রাজশাহী ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদের সহধর্মিণীর পিএস পরিচয়কে হাতিয়ার করে সে নারীদের বিয়ে ও ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, শারীরিক নির্যাতন, অর্থ হাতানো এবং ব্ল্যাকমেইলের মতো জঘন্য অপকর্ম চালানো যেন তার নেশায় পরিনত হয়েছে। হিটলার নিজ এলাকায় প্রথম বিয়ে করলেও সেই সংসার বেশিদিন টিকেনি। সেই রেস কাটতে না কাটতেই আবার একটি গরীব অসহায় মেয়েকে প্রেমের জালে জড়িয়ে মেয়েটির সর্বনাশ করে এবং সেটাও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মেয়েটি বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন এবং চাকরি নিয়ে ব্যস্ত জীবন পার করছেন। এরপর এ্যানি, যুথি, মিতুসহ অসংখ্য নারীর সাথে প্রতারনা করেছে।
এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় হিটলারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও চলমান আছে। মামলাটি বাগমারা উপজেলার জামালপুর এলাকার এক ভুক্তভোগী বাগমারা আমলি আদালতে মামলা (নাম্বার-১১৫১) দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছে হিটলার তার সঙ্গে টানা পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্ক রাখে, রাজশাহী শহরের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় এক সঙ্গে থেকেছে এবং বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
এভাবে আরেক নারীর সর্বনাশ করেছে সে। প্রায় দুই বছর আগে খালগ্রাম এলাকার এক তরুণীর সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। মেয়েটি রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও একইভাবে ফাঁদে ফেলে। মৌখিকভাবে নাটকীয় বিয়ে করে সম্পর্ক গড়লেও বিয়ে রেজিস্ট্রির প্রসঙ্গে মুখ খোলা মাত্রই মেয়েটিকে গালাগাল, হুমকি এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শুধু তাই নয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সে মেয়েটির গোপন ভিডিও ও ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত বলে অভিযোগে পাওয়া যায়। এঘটনায় গত ২৫ সেপ্টম্বর রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রীমা থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। ভুক্তভোগী তার অভিযোগে বলেন, ভুক্তভোগীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি নির্মমভাবে মারধর করে অচেতন করে রুমে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় প্রতারক হিটলার। অবশেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেয়েটির উপর আবারও চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। প্রাণ বাঁচাতে অসহায় অবস্থায় সে আত্মীয়দের খবর দেয়। পরে পুলিশ ও স্বজনরা উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এসিসি ইউনিটে ভর্তি করান। চিকিৎসা শেষে এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯ (১)(ক) ধারাসহ একাধিক ধারায় অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এব্যাপারে আরএমপি চন্দ্রীমা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী মাসুদ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই ধরনের একটি ঘটনার অভিযোগ হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি ঘটনার সত্যতা কতটুকু। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযোগটি এজাহারভিক্ত করে আসামী গ্রেফতার করা হবে।
একের পর এক নারীর জীবন নষ্ট করায় স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এতদিন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘুরে বেড়ালেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একের পর এক কুকীর্তির মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে এই হিটলার মাহমুদের। সাধারণ মানুষ এখন কঠোর আইনগত শাস্তির দাবি তুলেছেন। সকলের প্রশ্ন একটায়, হিটলার কি বিশ্ব প্রেমিক না কি ধর্ষক? যদি সে অপরাধী হয় তাহলে কেন এখনও গ্রেফতার হচ্ছে না?