আজ সম্মাননা পাচ্ছে জুলাই শহীদ শিশু পরিবারগুলো

- আপডেট সময় : ৩১৩ বার পড়া হয়েছে
বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ সোমবার জুলাই আন্দোলনে নিহত শিশুদের পরিবারকে সম্মাননা দিচ্ছে সরকার। আজ দেশব্যাপী বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে পালন করবে এ বিশেষ সপ্তাহ। এবারের বিশ্ব শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিশুর কথা বলবো আজ, শিশুর জন্য করবো কাজ।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির আয়োজনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। এতে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি ও শিশু প্রতিনিধিরা। এছাড়া অনুভূতি প্রকাশ করবেন আন্দোলনে নিহত শিশুদের অভিভাবকরা। অনুষ্ঠানে শিশুদের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কমপক্ষে ১৩৩ শিশু শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শিশুরাও রয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল ১১৭ জন। শহীদ হওয়া সবচেয়ে ছোট শিশুর বয়স ৪ বছর, নাম আবদুল আহাদ। আজ ৬ অক্টোবর বিশ্বশিশু দিবসে জুলাই শিশু শহীদ পরিবারদেও রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে নিজ বাসার বারান্দায় গত বছরের ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সে। পরদিন ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আহাদের মতোই বাসায় থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে আরও তিন শিশু। তারা হলো রাজধানীর মিরপুরে সাফকাত সামির (১০), উত্তরায় নাঈমা সুলতানা (১৫) ও নারায়ণগঞ্জে রিয়া গোপ (৬)। আর গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম কোনো শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৭ জুলাই। মো. সিয়াম (১৫) নামের ওই শিশু ভোলা থেকে ঢাকায় খালাতো ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
সবশেষ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী, ২ আগস্ট পর্যন্ত শহীদদের তালিকায় ৮৪৪ জনের নাম ছিল। তবে গতকাল রোববার (৩ আগস্ট) রাতে ৮ জনের নাম বাদ দিয়ে আরেকটি গেজেট করেছে মন্ত্রণালয়। এই গেজেট অনুযায়ী, শহীদের সংখ্যা এখন ৮৩৬ জন।
শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ৯১ জন। আর অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত ৪১ জন। এর বাইরে চার বছর বয়সী আহাদও রয়েছে। রায়েরবাগে ১১ তলা একটি ভবনের ৮ তলায় আহাদ ঘরে খেলছিল। হঠাৎ নিচ থেকে বিকট শব্দ শুনে তিনি, তাঁর স্ত্রী ও আহাদ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। আহাদ ছিল মাঝে। ওই সময় আহাদের ডান চোখে গুলি লাগে, সেই গুলি চোখ ভেদ করে মাথায় বিদ্ধ হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে নীরব হয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর মারা যায় আহাদ।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়েছেন। সে সময়ও অনেকে শহীদ হয়েছেন। যেমন উত্তরার জাবির ইব্রাহিম (৬)। মা-বাবার সঙ্গে বিজয় মিছিলে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
জানা গেছে, শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে মেয়েশিশু চারজন। তারা হলো রিয়া গোপ (৬), নাঈমা সুলতানা (১৫), রিতা আক্তার (১৭) ও নাফিসা হোসেন মারওয়া (১৭)। তাদের মধ্যে রিয়া বাসার ছাদে ও নাঈমা বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। রিতা ও নাফিসা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে উত্তরার বাসার বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় নাঈমা। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ত।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শহীদ শিশুদের মধ্যে ৯১ জন শিক্ষার্থী, যা মোট মৃত্যুর ৬৮ শতাংশ। অন্য শিশুদের কেউ দোকানকর্মী, কেউ পোশাক কারখানার কর্মী, কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ হকার আবার কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িত ছিল।
শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে মেয়েশিশু চারজন। তারা হলো রিয়া গোপ (৬), নাঈমা সুলতানা (১৫), রিতা আক্তার (১৭) ও নাফিসা হোসেন মারওয়া (১৭)। তাদের মধ্যে রিয়া বাসার ছাদে ও নাঈমা বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। রিতা ও নাফিসা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গুলিবিদ্ধ আস সাবুরের (১৪) অর্ধপোড়া লাশ পেয়েছিল পরিবার। সে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তাদের একজন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শাহারিয়ার খান আনাস (১৬)। ৫ আগস্ট বাড়িতে চিঠি লিখে সে যোগ দিয়েছিল বিক্ষোভে। চিঠিতে সে লিখেছিল, মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। মৃত্যুর ভয়ে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। ওই দিন রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলিতে মৃত্যু হয় আনাসের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (১৭) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফারহান ফাইয়াজ’ নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এ নামেই পরিচিত ছিল সে। ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এর এক দিন আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইংরেজিতে সে যা লিখেছিল, তার বাংলা অনুবাদ এ রকম, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে। এরকম কমপক্ষে ১৩৩ শিশু শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শিশুরাও রয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল ১১৭ জন।