ঢাকা ১১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

নাচোলে ইলা মিত্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৭৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী, নারীমুক্তি ও কৃষক অধিকার আন্দোলনের পথিকৃৎ বিপ্লবী রাণী ইলা মিত্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নাচোলে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামে অবস্থিত ‘ইলা মিত্র মট ও সংগ্রহশালা’ প্রাঙ্গণে ‘রাণী ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদ’-এর আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিধান শিং, এবং সঞ্চালনা করেন সমাজসেবক ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন বলেন, “রাণী ইলা মিত্র ছিলেন কৃষক অধিকার ও নারীর মর্যাদার প্রতীক। তাঁর সংগ্রামী জীবন নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
বিশেষ অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া বলেন,
ইলা মিত্র কেবল তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী নন, তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক সাহসী নারী যিনি নিপীড়নের মুখেও সত্যের পক্ষে ছিলেন। তাঁর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। সভায় আরও বক্তব্য দেন নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির জেলা সভাপতি ইসরাইল সেন্টু, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, দৈনিক গৌড় বাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সাজীদ তৌহিদ, লেখক ও গবেষক আলাউদ্দিন বটু, সাংবাদিক জিলানী, ও উপজেলা বিআরডিবি অফিসার হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
“রাণী ইলা মিত্র ছিলেন শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর নাম ইতিহাসে চির অম্লান থাকবে।”
আলোচনা সভা শেষে আয়োজন করা হয় কাঙ্গালিভোজের, যেখানে এলাকার শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ইলা মিত্র। ১৯৪৫ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের জমিদার পরিবারের সন্তান রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত নাচোল অঞ্চলে চলা তেভাগা আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন, যেখানে কৃষকরা জমির ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ চাওয়ার ন্যায্য দাবি জানায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবুও তিনি মাথা নত করেননি। তাঁর দৃঢ়তা ও ত্যাগ তাঁকে করেছে বাংলার নারীর সংগ্রামের এক অমর প্রতীক।
২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই বিপ্লবী নারী মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর আদর্শ ও আন্দোলনের চেতনা আজও নাচোলসহ সমগ্র বাংলাদেশে মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। “যে নারী নিজের কষ্ট ভুলে অন্যের অধিকারের জন্য লড়েছিলেন, তাঁকে জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে।”
রাণী ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন ও মানবিক আদর্শ নাচোলবাসীর গর্ব, জাতির প্রেরণা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নাচোলে ইলা মিত্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আপডেট সময় :

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী, নারীমুক্তি ও কৃষক অধিকার আন্দোলনের পথিকৃৎ বিপ্লবী রাণী ইলা মিত্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নাচোলে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামে অবস্থিত ‘ইলা মিত্র মট ও সংগ্রহশালা’ প্রাঙ্গণে ‘রাণী ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদ’-এর আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিধান শিং, এবং সঞ্চালনা করেন সমাজসেবক ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন বলেন, “রাণী ইলা মিত্র ছিলেন কৃষক অধিকার ও নারীর মর্যাদার প্রতীক। তাঁর সংগ্রামী জীবন নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
বিশেষ অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া বলেন,
ইলা মিত্র কেবল তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী নন, তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক সাহসী নারী যিনি নিপীড়নের মুখেও সত্যের পক্ষে ছিলেন। তাঁর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। সভায় আরও বক্তব্য দেন নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির জেলা সভাপতি ইসরাইল সেন্টু, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, দৈনিক গৌড় বাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সাজীদ তৌহিদ, লেখক ও গবেষক আলাউদ্দিন বটু, সাংবাদিক জিলানী, ও উপজেলা বিআরডিবি অফিসার হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
“রাণী ইলা মিত্র ছিলেন শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর নাম ইতিহাসে চির অম্লান থাকবে।”
আলোচনা সভা শেষে আয়োজন করা হয় কাঙ্গালিভোজের, যেখানে এলাকার শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ইলা মিত্র। ১৯৪৫ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের জমিদার পরিবারের সন্তান রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত নাচোল অঞ্চলে চলা তেভাগা আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন, যেখানে কৃষকরা জমির ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ চাওয়ার ন্যায্য দাবি জানায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবুও তিনি মাথা নত করেননি। তাঁর দৃঢ়তা ও ত্যাগ তাঁকে করেছে বাংলার নারীর সংগ্রামের এক অমর প্রতীক।
২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই বিপ্লবী নারী মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর আদর্শ ও আন্দোলনের চেতনা আজও নাচোলসহ সমগ্র বাংলাদেশে মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। “যে নারী নিজের কষ্ট ভুলে অন্যের অধিকারের জন্য লড়েছিলেন, তাঁকে জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে।”
রাণী ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন ও মানবিক আদর্শ নাচোলবাসীর গর্ব, জাতির প্রেরণা।