ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

রামগতিতে অবাধে চলছে জাটকা নিধন

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৪৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মেঘনায়,চলছে অভিযান। এ অভিযান ভেঙে উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশের সহায়তায় জাটকা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মা-ইলিশ ধরার অনুমতি দিচ্ছে নৌ-পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন কয়েকজন জেলে।মাছ শিকারে যাওয়া তিনজন জেলে জানান, নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে বড়খেরী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইলকে দিয়ে নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছে বড়খেরী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল। সে ওই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে এবং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমানের বিশ্বস্ত লোক। তাকে দিয়ে নৌ-পুলিশ বেপরোয়া বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। নৌ-পুলিশের এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ২১ দিনের জন্য প্রতি নৌকা ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে তারা মাছ শিকার করছে। যারা ১৫ হাজার টাকা দিতে না পারবে তারা দৈনিক ১ হাজার টাকা দিয়ে নদীতে নৌকা নামাচ্ছেন। বর্তমানে নৌ-পুলিশ ও ইসমাইলের তত্বাবধানে প্রায় ২৫ টি নৌকা প্রতিদিন ভোরে ও রাতে মেঘনা নদী থেকে জাটকা নিধন করছে। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও মজুদের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রামগতির মেঘনা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা জাটকা ইলিশ শিকার করছে। মাছ শিকারে সহায়তা করছেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। সরেজমিনে গত শনিবার থেকে উপজেলার রামগতি বাজার মাছঘাটের পুর্ব পাশে ও ব্রীজঘাট এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বেশ কয়েকজন জেলে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তাদের কাছে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গেলে তারা কোন ধরনের আপত্তি করেননি। নেই তাদের মধ্যে কোন ভয় ভীতিও। বরং দুইজন জেলে হেঁসে বলে উঠলেন, ভাই ছবি তুলে কি করবেন? আমরা সব লাইনঘাট ঠিক করে আসছি। নৌ-পুলিশকে ১৫ হাজার টাকা আগে জমা দিতে হয়েছে। জেলেরা আরও বলেন, থানার দালাল ইসমাইলের সাথে যোগাযোগ করেন, সেই সব নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রসঙ্গত, মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চলতি মাসের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ শিকারে গেলে জেল, জরিমানা ও উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।সালাহ উদ্দীন ও দিদার মাঝি নামে দুইজন জেলে বলেন,তারা নৌপুলিশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নদী যাচ্ছেন। । তবে টাকার অংকের কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।ভুক্তভোগী খুরশিদ মাঝি বলেন, অভিযান চলাকালীন সময়ের জন্য নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন নৌ-পুলিশের পক্ষে ইসমাইল। তিনি ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আবুল কালাম মাঝি বলেন,এই ঘাটে ইসমাইলের তত্বাবধানে মোট ২৫ টি নৌকা নিয়মিত চলে। সবগুলো নৌকা চুক্তিতে চলছে। যারা টাকা দেয়নি তাদের নৌকা নদীতে নামলেই আটক করবে পুলিশ।অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে গুজব আখ্যা দিয়ে এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার প্রস্তাব দেন। উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোঃ সফিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,ভাই আপনি আমার সাথে দেখা করেন বলে ফোন কেটে দেন।
থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। নৌ-পুলিশ এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকলে সেই জবাব তাকেই দিতে হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সৌরভ উজ জামান বলেন, নৌপুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ লোক মুখে আমরাও শুনে আসছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি নৌকা আমরা আটক করেছি। বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রামগতিতে অবাধে চলছে জাটকা নিধন

আপডেট সময় :

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মেঘনায়,চলছে অভিযান। এ অভিযান ভেঙে উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশের সহায়তায় জাটকা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মা-ইলিশ ধরার অনুমতি দিচ্ছে নৌ-পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন কয়েকজন জেলে।মাছ শিকারে যাওয়া তিনজন জেলে জানান, নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে বড়খেরী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইলকে দিয়ে নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছে বড়খেরী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল। সে ওই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে এবং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমানের বিশ্বস্ত লোক। তাকে দিয়ে নৌ-পুলিশ বেপরোয়া বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। নৌ-পুলিশের এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ২১ দিনের জন্য প্রতি নৌকা ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে তারা মাছ শিকার করছে। যারা ১৫ হাজার টাকা দিতে না পারবে তারা দৈনিক ১ হাজার টাকা দিয়ে নদীতে নৌকা নামাচ্ছেন। বর্তমানে নৌ-পুলিশ ও ইসমাইলের তত্বাবধানে প্রায় ২৫ টি নৌকা প্রতিদিন ভোরে ও রাতে মেঘনা নদী থেকে জাটকা নিধন করছে। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও মজুদের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রামগতির মেঘনা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা জাটকা ইলিশ শিকার করছে। মাছ শিকারে সহায়তা করছেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। সরেজমিনে গত শনিবার থেকে উপজেলার রামগতি বাজার মাছঘাটের পুর্ব পাশে ও ব্রীজঘাট এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বেশ কয়েকজন জেলে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তাদের কাছে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গেলে তারা কোন ধরনের আপত্তি করেননি। নেই তাদের মধ্যে কোন ভয় ভীতিও। বরং দুইজন জেলে হেঁসে বলে উঠলেন, ভাই ছবি তুলে কি করবেন? আমরা সব লাইনঘাট ঠিক করে আসছি। নৌ-পুলিশকে ১৫ হাজার টাকা আগে জমা দিতে হয়েছে। জেলেরা আরও বলেন, থানার দালাল ইসমাইলের সাথে যোগাযোগ করেন, সেই সব নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রসঙ্গত, মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চলতি মাসের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ শিকারে গেলে জেল, জরিমানা ও উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।সালাহ উদ্দীন ও দিদার মাঝি নামে দুইজন জেলে বলেন,তারা নৌপুলিশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নদী যাচ্ছেন। । তবে টাকার অংকের কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।ভুক্তভোগী খুরশিদ মাঝি বলেন, অভিযান চলাকালীন সময়ের জন্য নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন নৌ-পুলিশের পক্ষে ইসমাইল। তিনি ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আবুল কালাম মাঝি বলেন,এই ঘাটে ইসমাইলের তত্বাবধানে মোট ২৫ টি নৌকা নিয়মিত চলে। সবগুলো নৌকা চুক্তিতে চলছে। যারা টাকা দেয়নি তাদের নৌকা নদীতে নামলেই আটক করবে পুলিশ।অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে গুজব আখ্যা দিয়ে এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার প্রস্তাব দেন। উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোঃ সফিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,ভাই আপনি আমার সাথে দেখা করেন বলে ফোন কেটে দেন।
থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। নৌ-পুলিশ এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকলে সেই জবাব তাকেই দিতে হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সৌরভ উজ জামান বলেন, নৌপুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ লোক মুখে আমরাও শুনে আসছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি নৌকা আমরা আটক করেছি। বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।