ত্রিভুজ প্রেমের বলি জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ

- আপডেট সময় : ১১৯ বার পড়া হয়েছে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইন হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আর এরপরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা জুবায়েদের টিউশনি করানো সেই ছাত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে জুবায়েদ হত্যাকা-ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে আনা হতে পারে। তবে পুলিশ ধারনা করছে, ত্রিভুজ প্রেমের বলি হতে পারে জবি শিক্ষার্থী এবং জবি ছাত্রদলের নেতা নিহত জুবায়েদ।
পুলিশ বলেছে, জুবায়েদ খুনের ঘটনার বাড়িতে রয়েছে তার টিউশন করার ছাত্রীর বাসা। সে বাসার দোতালার সিঁড়িতে পড়েছিল নিহত জুবায়েদের নিথর দেহ। পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার এবং ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। এরআগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টিউশনির বাসার সিঁড়িতে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় জুবায়েদকে। এর দেড় ঘন্টা পর ক্যাম্পাসে ঘটনা জানাজানি হলে ওই বাসা ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘন্টা ধরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও পিবিআই তদন্ত করে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করে।
পুলিশ ওই বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেশন করে প্রাথসিক পর্যায়ে বলেছে, ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার সময় ২ যুবককে দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে। তাদের একজনের গায়ে ছিল কালো ও অন্যজনের গায়ে ছিল গোলাপী রঙের টি-শার্ট। তবে সিসিটিভি ফুটেজটি অস্পষ্ট হওয়ায় ভিডিওতে ওই ২ যুবকের মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলেছে, দৌড়ে পালানো ওই ২ যুবকের মধ্যে একজন জুবায়েদের টিউশনি করানো ছাত্রীর বয়ফ্রেন্ড। তবে বিষয়টি নিশ্চিতে সেই সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার পাশাপাশি আশপাশের ফুটেজগুলোও পর্যালোচনা করছে পুলিশ।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জুবায়েদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। গতকাল রোববার রাতে আরমানিটোলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, যারা পালিয়ে গেছে তারাই হত্যাকারী। জুবায়েদ যেখানে টিউশনি পড়াতে যেত সেই পরিবারও জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার আলটিমেটামও দেন তিনি।
অন্যদিকে সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতায় দেশজুড়ে হত্যাকা- বেড়েছে এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস দ্রুত খুনিদের বিচার দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির একটি বাসার সিঁড়ি থেকে জবি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাসাটিতে টিউশনি করাতেন জুবায়েদ। সন্ধ্যার দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির ওই ছাত্রীর বাসার সিঁড়ি থেকে জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত জুবায়েদ ওই বাসাটিতে টিউশনি করাতে গিয়েছিলেন।
সূত্র আরো জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়েদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ছাত্রদল নেতা জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই বাসাটিই ছিল জুবায়েদের টিউশনের বাসা। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে ওই বাসা থেকে জুবায়েদের টিউশনি করানো ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতা জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই বাসাটি ছিল জুবায়েদের টিউশনের বাসা। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করছি।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলাতে পানির পাম্প গলিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জুবায়েদ আহামেদের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানা ঘেরাও করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। এর আগে, তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে।
জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার বিচার চেয়ে জবি শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বংশাল থানা ঘেরাও করা হয়। এর আগে, রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। এসময় শিক্ষার্থীরা, আমার ভাই মরলো কেনো প্রশাসন জবাব চাই, আমার ভাই কবরে খুনী কেনো বাহিরে, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে রাত ১১ টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। এদিন রাত ১১ টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এ বিষয়ে লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, প্রাথমিকভাবে ছাত্রীকে আটক করা হয়েছে এবং বাড়ির অন্য সদস্যদেরও হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে আমরা দুইজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের আটকের জন্য আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকেও আটক করতে সক্ষম হবো। এখন এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
অপরদিকে জুবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মধ্যরাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইনকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদল তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
নিহত জুবায়েদ রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি জবিস্থ কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করতেন। এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে টিএসসি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টিএসসির ডাস চত্বরের পাশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। আমার ভাই খুন কেনো, ইন্টেরিম জবাব দে, আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না, এবং উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিসসহ নানা স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রদলকে হত্যা করার একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা হত্যার শিকার হয়েছেন এবং এই ইন্টেরিম গভমেন্ট দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার কারণেই আজকে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অতিদ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করা না হলে এ আন্দোলন আরও বেগবান হবে। এসময় ডাকসুতে ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, ঢাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন শাওনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ রহমান হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল। রাত ১০ টায় নগরীর আলোকার মোড় থেকে এই মিছিলটি শুরু হয়ে। বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর জিরোপয়েন্ট এসে শেষ হয়। এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৫ আগস্টের পরে আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা দেখছি একের পর এক ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার না করলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রনেতারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিন রায়হান রবিন, নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজের আহবায়ক অন্তর, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মান্নাত, রাজশাহী সিটি কলেজের যুগ্ন আহবায়ন মাহি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের ছাত্রনেতা জুবায়ের সাহিল, পলিটেকনিক ছাত্রনেতা সবুজ, রিফাত, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর সম্পাদক সাকিন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ, বোয়ালিয়া ও ২৭নং ওয়ার্ড উত্তর এবং দক্ষিণ এর সভাপতি হিমেল ও তন্ময় প্রমুখ।