সুন্দরগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নিম্নমানের চাল বিতরণের অভিযোগ!

- আপডেট সময় : ২২ বার পড়া হয়েছে
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে পচা নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব পচা চাল দেখে ক্ষেপে যান দরিদ্র মানুষ। ওজনে অনেক কম ও পচা চাল নিয়ে বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুরু হয় হইচই। খাবার অযোগ্য বলে এসব চাল অনেকেই রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আবার চাল না নিয়েই ফিরে গেছেন কেউ কেউ।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা, সোনারায়, তারাপুর, বেলকা, দহবন্দ, সর্বানন্দ, রামজীবন, ধোপাডাংগা, ছাপরহাটি, শান্তিরাম, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শ্রীপুর, চন্ডিপুর ও কাপাসিয়াসহ ১৫টি ইউনিয়নের ২৫ হাজার ৯৩২ জন ভূমিহীন, দরিদ্র, দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও মহিলাপ্রধান পরিবারকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়।
সরকারি নিয়মানুযায়ী, তাদের স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তার জন্য ১৫ টাকা কেজিতে বছরে ৬ মাস ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪২ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত রোববার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাংগা ইউনিয়নের ২ জন, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪ জন, সোনারায় ২ জন, রামজীবন ৩ জন, ছাপরহাটি ৩ জন, শান্তিরাম ৩ জন ও চন্ডিপুর ই্উনিয়নের ৩ জন ডিলারসহ ১৭ জন ডিলার বামনডাঙ্গা খাদ্য গোডাউন থেকে চাল তোলেন।
এসব চাল ডিলারদের গোডাউনে নিয়ে যান। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা প্রতিকেজিতে বিক্রি করা হয়। এসব চাল নিয়ে বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। অনেকেই চাল কিনতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সুন্দরগঞ্জের বামনডাংগা খাদ্য গোডাউন থেকে পচা ও গন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চাল বিতরণ করা হয় ডিলারদের কাছে।
তবে এসব চালের বস্তা খুলতে গিয়ে বিষয়টি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ক্রেতা ও স্থানীয় লোকজনের কাছে ধরা পড়ে। টাকা দিয়ে পচা চাল কিনতে আগ্রহী না হয়ে অনেকেই চাল না নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। যারা চাল কিনে নিয়ে যান তারা পড়েন বেকায়দায়। বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান পচা চাল ও ওজনে অনেক কম। তারা আবার ফেরত আসেন বিক্রয় কেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলোতে এ নিয়ে শুরু হয় হইচই। পচা চাল দেখে ক্ষেপে যান দরিদ্র মানুষ। এই নিয়ে বিক্রয় কেন্দ্রে চাল নিতে আসা নারী-পুরুষ প্রতিবাদ জানান।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ডিলার রাশেদুল ইসলাম, সুজন সরকার, সাইমা আক্তার জানান, আমরা টাকা জমা দিয়ে বামনডাঙ্গা খাদ্য গোডাউন থেকে চাল নিয়ে আমাদের গোডাউনে এনেছি।
বিতরণের সময় দেখলাম গোডাউন থেকে নিয়ে আসা চালের অধিকাংশই পচা ও খাবার অযোগ্য। এসব তো মানুষ টাকা দিয়ে নিতে চায় না।
চাল কিনতে আসা মিনতি রানী, চম্পা খাতুন, শহিদুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা দীর্ঘদিন যাবত এক শ্রেণীর মিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে একই চাল বারবার ক্রয় দেখিয়ে গোডাউনজাত করেছেন। দীর্ঘদিন গোডাউনে থাকায় চালগুলো পচে গেছে। সেই চাল দেওয়া হয় গরিব মানুষের খাবারের জন্য। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, পয়সা দিয়ে পচা চাল কিনব কেন? গোডাউন থেকে পচা চাল সরবরাহ করায় খাদ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা।
এ বিষয়ে বামনডাঙ্গা খাদ্য গোডাউনের খাদ্য পরিদর্শক শাহানাজ পারভীন পচা চালের কথা অস্বীকার করে বলেন, চালগুলো একটু লাল হয়েছে। বৃষ্টির সময় ধান কিনেছিলাম, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে মিলাররা এ ধরনের ভেজা চাল গোডাউনে দিবেন। আর বিতরণ তো হয়েই গেছে এখন আর কি করবো বলেন। তবে তিনি এ বিষয় নিয়ে খবর না ছাপানোর অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার জানান, বামনডাঙ্গা গোডাউন থেকে পচা চাল সরবরাহ করা হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।